কোরআনের চর্চা অব্যাহত রাখা আবশ্যকশাওয়ালের ছয় রোজার ফজিলতসৌদিসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে উদযাপিত হচ্ছে ঈদুল ফিতরবৃহস্পতিবার পবিত্র ঈদুল ফিতরপবিত্র কাবা শরীফ থেকে তিন কিলোমিটার দূর গেলো তারাবির নামাজের কাতার
No icon

হজে সাফা-মারওয়া ‘সায়ী’র নিয়ম

সাফা এবং মারওয়া বায়তুল্লাহর কাছাকাছি দুটি পাহাড়ের নাম। হজ কিংবা ওমরার সময় কাবা শরিফ তাওয়াফের পর এ দুটি পাহাড়ের মধ্যে দৌড়াতে হয়। ইসলামি শরিয়তের পরিভাষায় একে সায়ীবলা হয়। এ সায়ী করার রয়েছে নির্ধারিত নিয়ম। কী সেই নিয়ম?

সাফা-মারওয়ায় সায়ী হজ ও ওমরার অন্যতম রোকন। এটি মহান আল্লাহ তাআলার অনন্য নিদর্শনসমূহের অন্যতম। আল্লাহ তাআলার ঘোষণাও এমন। তিনি বলেন-
اِنَّ الصَّفَا وَ الۡمَرۡوَۃَ مِنۡ شَعَآئِرِ اللّٰهِ ۚ فَمَنۡ حَجَّ الۡبَیۡتَ اَوِ اعۡتَمَرَ فَلَا جُنَاحَ عَلَیۡهِ اَنۡ یَّطَّوَّفَ بِهِمَا ؕ وَ مَنۡ تَطَوَّعَ خَیۡرًا ۙ فَاِنَّ اللّٰهَ شَاکِرٌ عَلِیۡمٌ নিশ্চয়ই সাফা ও মারওয়া আল্লাহর নিদর্শনসমূহের অন্তর্ভুক্ত। সুতরাং যে বাইতুল্লায় হজ করবে কিংবা ওমরা করবে তার কোনো অপরাধ হবে না যে, সে এগুলোর তাওয়াফ করবে। আর যে স্বতঃস্ফূর্তভাবে কল্যাণ করবে, তবে নিশ্চয়ই আল্লাহ শোকরকারী, সর্বজ্ঞ।(সুরা বাকারা : আয়াত ১৫৮)

সারা বিশ্ব থেকে আগত মুমিন মুসলমান কাবা শরিফ তাওয়াফের পরপরই এ দুই পাহাড় (সাফা-মাওয়ায়) ৭ চক্কর দৌড়ানোর মাধ্যমে সায়ী সম্পন্ন করেন। হজ ও ওমরা পালনকারীদের জন্য তা সম্পন্ন করা আবশ্যক। সাফা মারওয়া পাহাড়দ্বয়ের সায়ী করার সুনির্দিষ্ট নিয়ম ও দোয়া রয়েছে।

নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রদর্শিত পদ্ধতিতেই সাফা ও মারওয়া সায়ী সম্পন্ন করতে হবে। নতুবা সায়ী আদায় হবে না। আর সঠিক নিয়মে সায়ী আদায় না হলে হজ ও ওমরার ওয়াজিব আদায় হবে না। ওয়াজিব ভঙ্গ হলে কাফফারা স্বরূপ আবশ্যকভাবে দম বা কোরবানি দিতে হবে।

সায়ীর নিয়ম ও দোয়া হজ ও ওমরা পালনকারীরা কাবা শরিফ তাওয়াফের পর (মাকামে ইবরাহিমে) নামাজ আদায় করে বাবুস সাফা দিয়ে সাফা পাহাড়ে আরোহন করবে।
১. সাফা পাহাড়ে ওঠে কাবার দিকে মুখ করে উভয় হাত কাঁধ পর্যন্ত তুলে এ দোয়া করা-
أَبْدَأُ بِمَا بَدَأ اللهُ بِهِ اِنَّ الصَّفَا وَ الْمَرْوَةَ مِنْ شَعَائِرِ اللهِ উচ্চারণ : আবদাউ বিমা বাদাআল্লাহু বিহি ইন্নাস সাফা ওয়াল মারওয়াতা মিন শাআইরিল্লাহি

২. এরপর ৩ বার হামদ ও ছানা পাঠ করবে। উচ্চস্বরে এই তাকবির ও তাহলিল পড়া-
اَللهُ اَكْبَر ; لَا اِلَهَ اِلَّا اللهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيْكَ لَهُ لَهُ الْمُلْكُ وَ لَهُ الْحَمْدُ وَ هُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْر - لَا اِلَهَ اِلَّا اللهُ وَحْدَهُ اَنْجَزَ وَعْدَهُ وَ نَصَرَ عَبْدَهُ وَ هَزَمَ الْاَحْزَابَ وَحْدَهُ> উচ্চারণ : আল্লাহু আকবার। লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকা লাহু, লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু ওয়া হুয়া আলা কুল্লি শাইয়িং কাদির। লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু আনজাযা ওয়াদাহু, ওয়া নাসারা আবদাহু, ওয়া হাযামাল আহযাবা ওয়াহদাহু।

২. এরপর দরূদ পাঠ এবং নিজের জন্য প্রয়োজনীয় দোয়া করে সাফা পাহাড় থেকে মারওয়া পাহাড়ের দিকে চলতে শুরু করা।

মনে রাখতে হবে সাফা-মারওয়া পাহাড়ের মধ্যবর্তী সবুজ চিহ্নিত স্থান পুরুষরা (স্বাভাবিক হাটার চেয়ে দ্রুত গতিতে) দৌড়ে অতিক্রম করবে আর নারীরা দৌড়াবে না।

 

লক্ষ্য রাখতে হবে সাফা-মারওয়ায় এত দ্রুত অতিক্রম করা যাবে না যে, সঙ্গে যদি কোনো নারী সঙ্গী থাকে; তারা যেন হারিয়ে যায়।

৩. মারওয়া পাহাড়ে করণীয় মারওয়া পাহাড়ে গিয়েও সাফা পাহাড়ের মতো হামদ ছানা, দরূদ ও দোয়া করে পুনরায় সাফা পাহাড়ের দিকে রওয়ানা করা। এভাবে সাফা ও মারওয়া পাহাড়ের মধ্যে ৭ চক্কর দৌড়ানোর মাধ্যমে সায়ী সম্পন্ন করা।

৪. সবুজ বাতি চিহ্নিত স্থানে এ দোয়া আর সবুজ বাতি চিহ্নিত নির্ধারিত স্থানটি দ্রুততার সঙ্গে অতিক্রম করার সময় এ দোয়াটি পড়া-
رَبِّى اغْفِرْ وَارْحَمْ اَنتَ الْاَعَزُّ وَ الْاَكْرَام উচ্চারণ : রাব্বিগফির ওয়ারহাম আনতাল আআযযু ওয়াল আকরাম।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে হজ ও ওমরা পালনে সাফা-মারওয়ার প্রতিটি চক্কর যথাযথভাবে আদায় করার তাওফিক দান করুন। হজরত হাজেরার ৭ বার দৌড়াদৌড়ির সে স্মৃতি ও অনুভূতি হৃদয় দিয়ে অনুধাবন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।