শাওয়ালের ছয় রোজার ফজিলতসৌদিসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে উদযাপিত হচ্ছে ঈদুল ফিতরবৃহস্পতিবার পবিত্র ঈদুল ফিতরপবিত্র কাবা শরীফ থেকে তিন কিলোমিটার দূর গেলো তারাবির নামাজের কাতারসংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে মসজিদের ইমাম ও মুয়াজ্জিনদের বেতন বৃদ্ধি পাবে : ক্রাউন প্রিন্স শেখ হামদান বিন মোহাম্মদ
No icon

সন্তান জন্মের পর আজান-ইকামত দেওয়ার বিধান কী?

সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর নবজাতকের কানে আজান ও ইকামত দেওয়া হয়। কিন্তু সন্তান যদি ছেলে কিংবা মেয়ে হয় তবে উভয়ের ডান ও বাম কানে কি আজান দেওয়া আবশ্যক? নারীরা কি নবজাতকের কানে আজান-ইকামত দিতে পারবে? এ সম্পর্কে ইসলামের নির্দেশনাই বা কী?

ইসলামি শরিয়তের বিধান অনুযায়ী নবজাতকের ডান কানে আজান এবং বাম কানে ইকামত দেওয়া সুন্নাত। চাই নবজাকত ছেলে হোক কিংবা মেয়ে। উভয়ের ক্ষেত্রে আজান ও ইকামতের বিধান সমান। এটি একাধিক হাদিস দ্বারা প্রমাণিত।

১. হজরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহ আনহু বর্ণনা করেনহজরত হাসান ইবন আলি রাদিয়াল্লাহু আনহুর জন্মগ্রহণের দিন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার ডান কানে আজান ও বাম কানে ইকামত দিয়েছিলেন। (বায়হাকি)

২. হজরত উবাইদুল্লাহ ইবনু আবু রাফে রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন হজরত ফাতেমা রাদিয়াল্লাহু আনহা হাসান ইবনু আলিকে প্রস্রাব করালে আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে হাসানের কানে নামাজের আজানের মতো আজান দিতে দেখেছি (তিরমিজি, আবু দাউদ, মুসনাদে আহামদ, বায়হাকি)

৩. হজরত হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যার সন্তান (ভূমিষ্ঠ) হয়, সে যেন তার ডান কানে আজান এবং বাম কানে ইকামত দেয়। (বায়হাকি, মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক)

নবজাতকের কানে আজান দেওয়ার কারণ

জন্মের পর নবজাতককে গোসল দেওয়া, ডান কানে আজান এবং বাম কানে ইকামত দেওয়া সুন্নাত। এতে রয়েছে নবজাতকের অনেক কল্যাণ ও উপকারিতা। হাদিস থেকেও এর প্রমাণ পাওয়া যায়-

হজরত হাসান বিন আলি রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন,যার সন্তান হয়,তারপর লোকটি সন্তানের ডান কানে আজান ও বাম কানে ইকামত দেয়; তাহলে তাকে উম্মুস সিবয়ান ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারবে না। (বায়হাকি, আল-আজকার লিননববি)

জন্মের সঙ্গে সঙ্গে সন্তান-সন্তুতির কানে আজান ও ইকামত দেওয়ার অন্যতম কারণ হলো, আজান-ইকামতের মাধ্যমে নবজাতকের কানে মহান আল্লাহর পবিত্র নাম, তাওহিদ ও রেসালাতের ঘোষণা পৌঁছে দেওয়া হয়। ফলে নবজাতকের হৃদয় ও মস্তিষ্কে ঈমানের আওয়াজ পৌঁছে। আর শয়তানের আক্রমণ থেকেও নিরাপদ থাকে নবজাতক।

ইসলামিক স্কলারদের মতে

অধিকাংশ সময় নবজাতক থেকে শুরু করে সন্তান-সন্তুতি বড় হয়ে গেলেও তারা খারাপ জ্বিন কিংবা শয়তানের বদ-নজর থেকে মুক্ত হতে পারে না। এ কারণে জন্মের সময় কারো কানে আজান-ইকামত দেওয়া না হলে পরে হলেও আজান ও ইকামত দেওয়া জরুরি। আর তাতে শয়তান ও মন্দ জ্বিনের প্রভাব থেকে মুক্ত হওয়া যায়।

নারীরা কি নবজাতকের কানে আজান দিতে পারবে?

ছেলে মেয়ে উভয়ের জন্যই আজান দেওয়ার বিধান সমান। নবজাতক বাচ্চার ডান কানে আজান ও বাম কানে ইকামত দেওয়া সুন্নত। যদি পুরুষ না থাকে-

তাহলে মা (কিংবা অন্য নারী) যদি নেফাসগ্রস্থ না হয়তাহলে তিনিও আজান দিতে পারবেন।

এমনকি যদি কারো আজান ও ইকামতের শব্দগুলো মুখস্ত না থাকে তবে সন্তানের ডান কানে আজান ও বাম কানে ইকামতের শব্দগুলোদেখে দেখে হলেও বলা যাবে। আর তাতেও আজান-ইকামত দেওয়ার বিষয়টি আদায় হয়ে যাবে।

মনে রাখতে হবে

সন্তান ছেলে হোক আর মেয়ে হোক; তাদের উভয়ের ডান কানে আজান এবং বাম কানে ইকামত দেওয়াই ইসলামের বিধান এবং সুন্নাত। যদি কোনো পুরুষ না থাকে তবে নেফাস থেকে মুক্ত নারীরাও সন্তানের কানে আজান-ইকামত দিতে পারবেন। যদি আজান-ইকামতের শব্দগুলো মুখস্ত না থাকে তবে দেখে দেখে হলেও আজান-ইকামত দিলে এ হুকুম ও সুন্নাত আদায় হয়ে যাবে।

ফলে মহান আল্লাহ তাআলা ওই নবজাতককে অনেক রোগ-ব্যধি, জাদু-টোনা, বদ-জ্বিন ও শয়তানের আক্রমণ থেকে হেফাজত করবেন।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে হাদিসের অনুসরণ ও অনুকরণে নবজাতক সন্তানের ডান কানে আজান ও বাম কানে ইকামত দেয়ার মাধ্যমে সুন্নাতের যথাযথ আমল করার তাওফিক দান করুন। যাবতীয় অকল্যাণ থেকে হেফাজত রাখুন। আমিন।