Islamic News BD - The Lesson of Peace
অর্থনৈতিক জীবনে হালাল-হারাম
বুধবার, ০৭ জুন ২০২৩ ২২:৩১ অপরাহ্ন
Islamic News BD - The Lesson of Peace

Islamic News BD - The Lesson of Peace

ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ ধর্ম। মানবজীবনের ছোট-বড় সবধরনের সমস্যার সমাধান ইসলামে বিদ্যমান। অন্য সব বিধানের মতো অর্থনীতির ব্যাপারেও ইসলামে রয়েছে পূর্ণাঙ্গ বিধান। তাই একজন সচেতন মুসলমানের জন্য আবশ্যক হলো, সে অর্থনীতির হালাল-হারামের বিষয়টিও ইসলামের আলোকেই সমাধান করে নেবে। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন- ‘হে ওই সব লোক যারা ঈমান এনেছ, তোমরা ইসলামে পরিপূর্ণরূপে প্রবেশ করো।’
এই আয়াতের ব্যাখ্যায় মুফাসসিরিনে কেরাম বলেন, এখানে পরিপূর্ণ ইসলামে প্রবেশ করার মানে হলো, জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ইসলামের পূর্ণ অনুসরণ করা আবশ্যক। অথচ অত্যন্ত আফসোস ও দুঃখজনক ব্যাপার হলো, আজ আমরা ইসলামকে ব্যক্তিগত জীবনে নিছক কিছু আনুষ্ঠানিকতা পালনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ করে ফেলেছি। অন্য অনেক কিছুর মতো অর্থনৈতিক জীবনেও ইসলামের বিধানাবলির ব্যাপারে আমরা চরম উদাসীন, অসচেতন। জীবিকা নির্বাহের পন্থা নির্বাচনে এবং অর্থোপার্জনের প্রক্রিয়ায় হালাল-হারামের তোয়াক্কা করছি না। কেমন যেন বেঁচে থাকার জন্য খাবারের ব্যবস্থা করতে হবে, আর খাবারের জন্য যেভাবেই হোক অর্থের একটি ব্যবস্থা করতেই হবে। সে জন্য যদি সুদ-ঘুষের মতো জঘন্য হারাম রাস্তা বেছে নিতে হয়, আমরা কুণ্ঠাবোধ করি না। অথচ রিজিক যদি হারাম হয়, তাহলে তো ইবাদতও কবুল হয় না। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, রাসূল সা: ইরশাদ করেন, হে লোকেরা! নিশ্চয় আল্লাহ পবিত্র। তিনি পবিত্র ছাড়া কিছু গ্রহণ করেন না। আল্লাহ তায়ালা রাসূলদেরকে যে বিষয়ের আদেশ দিয়েছেন, মু’মিনদেরকেও সে বিষয়ে আদেশ করছেন। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন- হে রাসূল! পবিত্র বস্তু থেকে আহার করো এবং সৎকর্ম করো। নিশ্চয় আমি তোমাদের কৃতকর্ম সম্পর্কে জ্ঞাত। (সূরা মু’মিনুন-৫১) অন্যত্র বলেছেন- হে ঈমানদাররা! আমি তোমাদেরকে যে উত্তম রিজিক দিয়েছি, তা থেকে আহার করো। (সূরা বাকারাহ-১৭২)
ইসলামের বৈশিষ্ট্য হলো- ইসলাম মানুষের সামনে হালাল ও হারাম নামে সম্পূর্ণ ভিন্নধর্মী দুটো রাস্তা আলাদা করে উল্লেখ করে দিয়েছে।
আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন- হে মানবজাতি! পৃথীবিতে যা কিছু বৈধ ও পবিত্র বস্তু আছে তা থেকে তোমরা আহার করো এবং শয়তানের অনুসরণ করো না। নিশ্চয় সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু। (সূরা বাকারাহ-১৬৮) হে ঈমানদাররা, তোমাদেরকে জীবিকারূপে যে উৎকৃষ্ট বস্তুসম্ভার দিয়েছি তা থেকে যা ইচ্ছা খাও। (সূরা বাকারাহ-১৭২)
হজরত আনাস বিন মালিক রা: থেকে বর্ণিত- রাসূলুল্লাহ সা: ইরশাদ করেন, হালাল রুজি সন্ধান করা প্রত্যেক মুসলিমের ওপর অনিবার্য। (মাজমাউজ জাওয়ায়েদ, হাদিস-১৮০৯৯)

হারাম বর্জন : কুরআনুল কারিমে ইরশাদ হয়েছে- হে ঈমানদাররা! তোমরা অন্যায়ভাবে একে অপরের সম্পদ ভোগ করো না। (সূরা নিসা-২৯)
আবু হুরায়রা রা: থেকে বর্ণিত- রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, সেই সত্তার শপথ, যার হাতে আমার প্রাণ, তোমাদের আল্লাহ যা হারাম করেছেন এমন কিছু নিজ মুখে দেয়ার চেয়ে মুখে মাটি দেয়া অনেক ভালো। (মুসনাদে আহমাদ-২ : ২৭৫)
আবু বারজাহ আসলামি রা: থেকে বর্ণিত- রাসূলুল্লাহ সা: ইরশাদ করেছেন, কিয়ামতের দিন কারো দুই পা সামনে অগ্রসর হবে না যতক্ষণ না তাকে তার জীবন সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে কিভাবে সেটি ব্যবহার করেছে, তার ইলম সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে সে অনুযায়ী আমল করেছে কি না, তার সম্পদ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে কোথা থেকে তা উপার্জন করেছে ও কোথায় তা ব্যয় করেছে, তার দেহ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে কিভাবে তা ক্ষয় হয়েছে। (তিরমিজি) অর্থনীতির প্রভাব : মানুষের যাপিত জীবনের প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রই অর্থনীতির সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। অর্থনীতিকে বাদ দিয়ে জীবনের কথা চিন্তাই করা যায় না। একটা মানুষের মৌলিক চাহিদা ও অধিকারের তালিকা করা হলে পাঁচটি জিনিসের কথা বলা হয়। সেগুলো হলো- ১. খাদ্য; ২. বস্ত্র; ৩. বাসস্থান; ৪. শিক্ষা ও ৫. চিকিৎসা। এর প্রতিটিই অর্থনীতির সাথে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত।জীবনের ভাঁজে ভাঁজে এই যে অর্থনীতির সরব উপস্থিতি তাকে কলুষিত ও অসুস্থ করতে পদে পদে আছে হারামের খাদের কিনারে পড়ে যাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা। তাই আমাদের জীবনপ্রবাহকে স্থিতিশীল ও সমৃদ্ধ করার জন্য আমাদের আবশ্যক হলো, একটি টেকসই অর্থব্যবস্থা অনুসরণ করা। এমন এক অর্থব্যবস্থা, যেখানে সম্পদ উপার্জনের সঠিক রাস্তা নির্বাচনের নির্দেশনা থাকবে, যে অর্থব্যবস্থা সমাজের সর্বস্তরে সম্পদের ন্যায়ভিত্তিক ও সুষম বণ্টন নিশ্চিত করবে। সম্পদ যাতে গুটিকয়েক মানুষের কাছে পুঞ্জীভূত না হয়ে পড়ে। হারাম অর্থব্যবস্থা যাতে আমাদেরকে গ্রাস করতে না পারে। অর্থনীতিকে কলুষিত করে এমন সব চুক্তি থেকে আমাদেরকে বিরত থাকতে হবে। বর্তমানে চার দিকে সুদ-ঘুষের সয়লাবে ছেয়ে গেছে। যেখানেই লেনদেন করতে যাবেন না কেন, সুদ-ঘুষের ঝাপটা আপনাকে স্পর্শ করবেই। সুদ-ঘুষের এই ভয়াল ও সর্বগ্রাসী থাবা থেকে বেঁচে থাকাটা একটি চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই চ্যালেঞ্জ প্রতিটি মুসলমানকে গ্রহণ করতেই হবে। আর এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার উত্তাল সমুদ্রে ইসলামী অর্থনীতিই হতে পারে নূহের কিস্তি।