Islamic News BD - The Lesson of Peace
ইবাদত কবুল হওয়ার জন্য জীবিকা হালাল হওয়া আবশ্যক
রবিবার, ১১ জুন ২০২৩ ২৩:৫৪ অপরাহ্ন
Islamic News BD - The Lesson of Peace

Islamic News BD - The Lesson of Peace

জীবনের প্রয়োজনে মানুষকে বিভিন্ন পেশা অবলম্বন করতে হয়। দিন-রাত কঠোর পরিশ্রম করতে হয়। নিজের ও পরিবারের ভরণ-পোষণ করতে গিয়ে মানুষ বাধ্যতামূলক এই পরিশ্রমে আত্মনিয়োগ করে। মানুষের এই দৈনন্দিন কাজগুলোও যদি আল্লাহর বিধান ও নবীজি (সা.)-এর তরিকা মেনে করা হয়, তাহলে এগুলোও ইবাদতের অন্তর্ভুক্ত হতে পারে।

নিম্নে মানুষের দৈনন্দিক কাজ ইবাদতে পরিণত হওয়ার শর্তগুলো তুলে ধরা হলো—
কাজটি ইসলামের দৃষ্টিতে বৈধ হতে হবে : জীবিকা নির্বাহের জন্য করা কাজগুলো ইবাদতে পরিণত হওয়ার জন্য সে কাজ/পেশাটি ইসলামের দৃষ্টিতে বৈধ হতে হবে। কারণ যে কাজ বা পেশা ইসলামের দৃষ্টিতে বৈধই নয়, তা কী করে ইবাদতে পরিণত হবে। বরং ইবাদত কবুল হওয়ার জন্য জীবিকা হালাল হওয়া আবশ্যক। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, হে লোকসকল, আল্লাহ তাআলা পবিত্র।
তিনি পবিত্র জিনিস ছাড়া কিছু কবুল করেন না। আল্লাহ তাঁর রাসুলদের যেসব বিষয়ের নির্দেশ দিয়েছেন, মুমিনদেরও সেসব বিষয়ের নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘হে রাসুলগণ, তোমরা পবিত্র বস্তু থেকে আহার করো এবং সৎকাজ করো। তোমরা যা করো সে সম্বন্ধে আমি সবিশেষ অবগত।’ (সুরা আল-মুমিনুন, আয়াত ৫১)। 

তিনি আরো বলেন, ‘হে মুমিনগণ, তোমাদের আমি যে রিজিক দিয়েছি তা থেকে পবিত্র বস্তু আহার করো।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৭২)। বর্ণনাকারী বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) এক ব্যক্তির কথা উল্লেখ করলেন, দীর্ঘ সফরের ক্লান্তিতে যার মাথার চুল বিক্ষিপ্ত, অবিন্যস্ত এবং সারা শরীর ধূলিমলিন। সে আসমানের দিকে হাত দরাজ করে বলে, হে আমার প্রভু, হে আমার প্রতিপালক, অথচ তার খাদ্য ও পানীয় হারাম, তার পোশাক হারাম, তার জীবন-জীবিকাও হারাম।

এ অবস্থায় তার দোয়া কিভাবে কবুল হতে পারে। (তিরমিজি, হাদিস : ২৯৮৯)
নিয়ত শুদ্ধ হতে হবে : বিশুদ্ধ নিয়ত মানুষের পরিশ্রমকে ফলপ্রসু করে। বিশুদ্ধ নিয়তহীন হাজার রাকাত নফল নামাজও অর্থহীন হয়ে যায়। আবার বিশুদ্ধ নিয়তের মাধ্যমে অনেক জাগতিক কাজও ইবাদতে পরিণত হতে পারে। এ জন্য নবীজি (সা.)- তাঁর উম্মতদের নিয়ত বিশুদ্ধ করার তাগিদ দিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে, আলকামাহ ইবনে ওয়াক্কাস আল-লায়সি (রহ.) থেকে বর্ণিত, আমি উমর ইবনুল খাত্তাব (রা.)-কে মিম্বরের ওপর দাঁড়িয়ে বলতে শুনেছি, আমি আল্লাহর রাসুল (সা.)-কে বলতে শুনেছি, কাজ (এর প্রাপ্য হবে) নিয়ত অনুযায়ী। আর মানুষ তার নিয়ত অনুযায়ী প্রতিফল পাবে। তাই যার হিজরত হবে ইহকাল লাভের অথবা কোনো মহিলাকে বিয়ে করার উদ্দেশ্যে, তবে তার হিজরত সে উদ্দেশ্যেই হবে, যে জন্য সে হিজরত করেছে। (বুখারি, হাদিস : ১)

জীবিকা অর্জনের উদ্দেশ্য যদি এই হয় যে মহান আল্লাহ হালাল রিজিক অন্বেষণ করতে বলেছেন, হালাল রিজিক খেতে বলেছেন, আত্মীয়-স্বজন, এতিম ও অসহায়দের জন্য খরচ করতে বলেছেন, আল্লাহর আদেশ পালনার্থেই হালালভাবে জীবিকা নির্বাহের চেষ্টা করছি, তাহলে জীবিকা নির্বাহের জন্য করা কাজগুলোও বিশুদ্ধ নিয়তের কারণে ইবাদতে পরিণত হবে ইনশাআল্লাহ।

আল্লাহর নির্ধারিত সীমা মেনে চলতে হবে : প্রতিটি কাজেই মহান আল্লাহ নির্দিষ্ট সীমারেখা ঠিক করে দিয়েছেন, হালাল-হারাম ঠিক করে দিয়েছেন। কাজের ক্ষেত্রে আল্লাহর বেঁধে দেওয়া সীমা লঙ্ঘন করা যাবে না। মহান আল্লাহ যেখানে যতটুকু অনুমোদন দিয়েছেন, ঠিক ততটুকুই করা যাবে। এর বেশি নয়। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা আল্লাহর রাস্তায় সেই লোকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করো, যারা তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে; কিন্তু সীমা অতিক্রম করো না। আল্লাহ নিশ্চয়ই সীমা অতিক্রমকারীকে ভালোবাসেন না। (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৯০)

আল্লাহর রাস্তায় যুদ্ধ করা তাঁর সন্তুষ্টি অর্জনের অন্যতম মাধ্যম, সেই যুদ্ধেও সীমা অতিক্রমের সুযোগ নেই।

দুনিয়াবি কাজ দ্বিনি কর্তব্য থেকে যেন গাফেল না করে : দ্বিনি কর্তব্য যথাযথভাবে পালনের পাশাপাশি আল্লাহর সন্তুষ্টি ও দ্বিনের খেদমতের আশায় হালালভাবে জীবিকা উপার্জন করলে সেটা ইবাদতে পরিণত হবে ইনশাআল্লাহ। যা তা করবে, মহান আল্লাহ তাদের উত্কৃষ্ট প্রতিদান দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘সেই সব লোক, যাদের ব্যবসা-বাণিজ্য এবং ক্রয়-বিক্রয় আল্লাহর স্মরণ থেকে এবং নামাজ কায়েম ও জাকাত প্রদান থেকে বিরত রাখে না, তারা ভয় করে সেই দিনকে, যেদিন তাদের অন্তর ও দৃষ্টি বিপর্যস্ত হয়ে পড়বে, আল্লাহ তাআলা তাদেরকে তাদের কর্মের উত্কৃষ্টতম প্রতিদান দেবেন। অর্থাৎ শুধু কর্মের প্রতিদানই শেষ নয়; বরং আল্লাহ নিজ কৃপায় তাদের বাড়তি নিয়ামতও দান করবেন।’ (সুরা : নুর, আয়াত : ৩৭-৩৮)