Islamic News BD - The Lesson of Peace
রাবেয়া খাতুন ছিলেন জ্ঞানের সেবক যে মুসলিম রাজকন্যা
সোমবার, ১০ জুলাই ২০২৩ ২৩:১৭ অপরাহ্ন
Islamic News BD - The Lesson of Peace

Islamic News BD - The Lesson of Peace

রাবেয়া খাতুন বিনতে আইয়ুব (রহ.) ছিলেন আইয়ুবীয় রাজবংশের বিখ্যাত রাজকন্যা। তিনি বহু কল্যাণমুখী কাজ করেছেন। বিশেষত তিনি ছিলেন জ্ঞানের সেবক। ধর্মীয় শিক্ষার প্রচার-প্রসারে রাবেয়া (রহ.) বহুমুখী অবদান রাখেন। তাঁর প্রতিষ্ঠিত মাদরাসাতুস সাহিবাহ এখনো সমাজে জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে যাচ্ছে। এ ছাড়া তিনি মাদরাসাতুল খাতুনিয়্যাহ জাওয়ানিয়্যা প্রতিষ্ঠায় পৃষ্ঠপোষকতা করেন। তৈরি করেন একাধিক খানকা।

রাবেয়া বিনতে আইয়ুব (রহ.) ছিলেন সুলতান সালাহ উদ্দিন আইয়ুবি (রহ.)-এর বোন।

সালাহ উদ্দিন আইয়ুবি (রহ.) প্রথমে তাঁকে সাআদুদ্দিন আমির মাসউদ বিন মুঈনুদ্দিনের সঙ্গে বিয়ে দেন। আমির সাআদুদ্দিন মারা গেলে তিনি কুর্দিস্তানের ইরবিল অঞ্চলের শাসক মুজাফফার উদ্দিন কাউকাবরির সঙ্গে বিয়ে দেন। ইরবিলে তাঁর সঙ্গে ৪০ বছরের চেয়েও বেশি সময় সংসার করেন। ৬৩০ খ্রিস্টাব্দে মুজাফফার উদ্দিন ইন্তেকাল করলে তিনি দামেস্কে ফিরে আসেন এবং ৬৪৩ হিজরিতে ইন্তেকাল করেন। তখন তাঁর বয়স ৮০ বছর অতিক্রম করেছিল এবং কাসিয়ুনে তাঁকে দাফন করা হয়।

রাবেয়া বিনতে আইয়ুব (রহ.) ছিলেন আমাতুল লফিত বিনতে নাসিহ হাম্বলি (রহ.) শিষ্য। তিনি ছিলেন সময়ের বিখ্যাত পণ্ডিত ব্যক্তিত্ব ও লেখিকা। তাঁর পিতা নাসিহ উদ্দিন আবুল ফরজ হাম্বলি (রহ.)-ও ছিলেন হাম্বলি মাজহাবের নেতৃস্থানীয় আলেম। আমাতুল লতিফ (রহ.) তাঁকে হাম্বলি মাজহাবের অনুসারীদের জন্য একটি মাদরাসা নির্মাণ করে দেওয়ার অনুরোধ করেন। তাঁর আবেদনে সাড়া দিয়ে তিনি কাসিয়ুনে মাদরাসাতুস সাহিবাহ প্রতিষ্ঠা করেন এবং মাদরাসা পরিচালনার জন্য বিপুল পরিমাণ সম্পদ ওয়াকফ করেন। সাহিবাহ ছিল আইয়ুবীয় রাজকন্যাদের উপাধি। মূলত রাবেয়া (রহ.)-এর সঙ্গে সম্পৃক্ত করেই মাদরাসাতুস সাহিবাহর নামকরণ করা হয়। সিরিয়ায় মাদরাসাটি এখনো টিকে আছে।

রাবেয়া বিনতে আইয়ুব (রহ.) শুধু হাম্বলি মাজহাবের অনুসারীদের জন্য মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করেননি, বরং তিনি শাফেয়ি ও হানাফি মাজহাবের অনুসারীদের জন্য পৃথক মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করেন। সব মাজহাবের প্রতি উদারনীতি তিনি পারিবারিকভাবেই লাভ করেন। তাঁর ভাই সালাহ উদ্দিন আইয়ুবি ও স্বামী মুজাফফার উদ্দিন উভয়ে মাজহাব বিষয়ে উদার ছিলেন। সুলতান সালাহ উদ্দিন আইয়ুবি (রহ.)-এর আমলে সব মাজহাবের আলেমরা সমান মর্যাদা ও সুযোগ লাভ করতেন। আর মুজাফফার উদ্দিন নিজে শাফেয়ি মাজহাবের অনুসারী হলেও ইরবিলে শাফেয়ি ও হানাফি মাজহাবের অনুসারীদের জন্য পৃথক দুটি মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করেন।

রাবেয়া বিনতে আইয়ুব (রহ.) ছিলেন অত্যন্ত বুদ্ধিমান ও বিচক্ষণ একজন নারী। স্বামীকে তিনি রাষ্ট্রীয় কর্মকাণ্ড পরিচালনায় বুদ্ধি ও পরামর্শ দিতেন। ব্যক্তিগত জীবনে ছিলেন আল্লাহভীরু ও অধিক পরিমাণ ইবাদতকারী। রাত জেগে নামাজ আদায় ও কোরআন তিলাওয়াত করা ছিল তাঁর প্রিয় আমল। আল্লাহর রাস্তায় খরচ করতে তিনি কখনো কুণ্ঠাবোধ করতেন না। পিতা ও স্বামীর কাছ থেকে যে বিপুল পরিমাণ সম্পদ তিনি লাভ করেছিলেন তার বেশির ভাগই তিনি ধর্মীয় শিক্ষার বিস্তারে ব্যয় করেন। তিনি সুফিবাদ দ্বারা প্রভাবিত ছিলেন। তিনি নিজেকে তাসাউফ ও আধ্যাত্মিক সাধনায় আত্মনিয়োগ করেছিলেন। সময়ের প্রসিদ্ধ সুফিদের জন্য একাধিক খানকা তৈরি করে দিয়েছিলেন তিনি। বিখ্যাত আলেম ও মুহাদ্দিসদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করতেন।

সূত্র : মারেফা ডটকম ও কিসসাতুল ইসলাম