পৃথিবীতে মৃত্যু এক অনিবার্য সত্য। পরকালীন জীবনই মুমিনের গন্তব্য। তবু প্রিয়জনের বিদায়ে মানুষ ব্যথিত হয়, শোক-সন্তপে সে কাতর হয়। প্রিয়জন হারানো এই শোকাতুর মানুষগুলোর প্রতি ইসলাম ভালোবাসা ও মমত্ব প্রকাশের নির্দেশ দিয়েছে।
মহানবী (সা.) স্বজনহারা মানুষের সেবা, সান্ত্বনা ও খোঁজ-খবর রাখার শিক্ষা দিয়েছে। নিম্নে স্বজনহারাদের প্রতি মুসলমানের করণীয়গুলো বর্ণনা করা হলো।
১. স্বজনহারাদের সান্ত্বনা দেওয়া : কেউ মারা গেলে মহানবী (সা.) তার বাড়ি যেতেন এবং তাদের আল্লাহর কথা স্মরণ করিয়ে দিতেন। মৃত ব্যক্তির পরিবারকে শোক ও বিলাপের পরিবর্তে ধৈর্যধারণে উৎসাহিত করতেন।
উম্মে সালমা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, তোমাদের কারো ওপর বিপদ এলে সে যদি বলে, ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। আল্লাহুম্মা আজুরনি ফি মুসিবাতি ওয়াখলিফলি খাইরাম-মিনহা (নিশ্চয়ই আমরা আল্লাহর জন্য এবং আমরা নিশ্চয়ই তাঁর কাছে ফিরে যাব। হে আল্লাহ, আমাকে আমার বিপদের উত্তম প্রতিফল দান করুন এবং বিপদকে আমার জন্য কল্যাণে পরিবর্তন করে দিন) আল্লাহ তার বিপদকে কল্যাণে পরিবর্তন করে দেন। (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ২১৬৬)
২. স্বজনহারাদের জন্য খাবার তৈরি করা : মহানবী (সা.) স্বজনহারা পরিবারের জন্য খাবার তৈরি করে পাঠাতেন।
আবদুল্লাহ ইবনে জাফর (রা.) থেকে বর্ণিত, যখন জাফর (রা.)-এর মৃত্যুর খবর এলো; নবী (সা.) বললেন, জাফরের পরিবারের জন্য খাবার তৈরি করো। কেননা তাদের কাছে এমন দুঃসংবাদ এসেছে, যা তাদের ব্যস্ত করে রাখবে। (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস : ৩১৩২)
৩. স্বজনহারাদের সঙ্গে কোমল আচরণ করা: আপনজনকে হারালে মানুষ সাধারণত অসংযত আচরণ করে। কিন্তু মহানবী (সা.) এমন সময় তাদের প্রতি কঠোর আচরণ না করে কোমল আচরণ করতেন। জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, (উহুদ যুদ্ধে) আমার পিতা আবদুল্লাহ (রা.) শহিদ হলেন।
আমি তাঁর মুখমণ্ডল হতে কাপড় সরিয়ে কাঁদতে লাগলাম। লোকজন আমাকে নিষেধ করতে লাগল। কিন্তু নবী (সা.) আমাকে নিষেধ করেননি। আমার ফুফি ফাতিমা (রা.)ও কাঁদতে লাগলেন। তখন নবী (সা.) বললেন, তুমি কাঁদ বা না-ই কাঁদ (উভয় সমান)। তোমরা তাকে তুলে নেওয়া পর্যন্ত ফেরেশতারা তাঁদের ডানা দিয়ে ছায়া বিস্তার করে রেখেছে। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১২৪৪)
৪. মৃত ব্যক্তির প্রশংসার মাধ্যমে সান্ত্বনা দেওয়া : রাসুলুল্লাহ (সা.) কখনো কখনো মৃত ব্যক্তির সম্মান ও পরকালীন মর্যাদা ঘোষণার মাধ্যমে তার পরিবার-পরিজনকে সান্ত্বনা দিতেন। আবদুল্লাহ বিন সাবিত (রা.)-এর মৃত্যু ঘনিয়ে এলে তার মেয়ে রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে জানাল তাঁর পিতা শাহাদাতের আকাঙ্ক্ষা পোষণ করতেন। তিনি বলেন, আল্লাহ তাআলা তাঁর নিয়ত অনুযায়ী তাঁকে শাহাদাতের সওয়াব দিয়ে দিয়েছেন। আচ্ছা, তোমরা শাহাদাত কাকে মনে করো? তাঁরা বললেন, আল্লাহর রাস্তায় মৃত্যুবরণ করাকে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, আল্লাহর রাস্তায় মৃত্যুবরণ করা ছাড়াও আরো সাত প্রকারের শাহাদাত আছে এক. প্লেগ রোগে মৃত ব্যক্তি শহিদ, ২. পেটের পীড়ায় মৃত ব্যক্তি শহিদ, ৩. পানিতে ডুবে মৃত ব্যক্তি শহিদ, ৪. প্রাচীর বা ঘর চাপা পড়ে মৃত ব্যক্তি শহিদ, ৫. অভ্যন্তরীণ বিষ ফোঁড়ায় মৃত ব্যক্তি শহিদ, ৬. অগ্নিদাহে মৃত ব্যক্তি শহিদ, ৭. প্রসবকালে মৃত নারী শহিদ। (সুনানে নাসায়ি, হাদিস : ১৮৪৬)
৫. মৃত ব্যক্তির জন্য দোয়া করে সান্ত্বনা দেওয়া : মানুষ যখন মারা যায়, তখন তার আপনজনরা তার পরকালীন মুক্তি নিয়ে চিন্তিত থাকে। তাই কেউ তার জন্য দোয়া করলে তাদের হৃদয় প্রশান্ত হয় এবং মৃত ব্যক্তিও তা দ্বারা উপকৃত হয়। মহানবী (সা.) মৃত ব্যক্তির জন্য দোয়া করতেন এবং অন্যদেরও দোয়া করতে বলতেন। তিনি বলেন, তোমরা যখন কোনো মৃত ব্যক্তির জানাজা পড়বে নিষ্ঠার সঙ্গে দোয়া করবে। (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস : ৩২০১)
অপর বর্ণনায় এসেছে, নবী (সা.) মৃতের দাফন শেষ করে সেখানে দাঁড়িয়ে বলতেন, তোমাদের ভাইয়ের জন্য তোমরা ক্ষমা প্রার্থনা করো এবং সে যেন প্রতিষ্ঠিত থাকে সে জন্য দোয়া করো। কেননা তাকে এখনই জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস : ৩২২১)