Islamic News BD - The Lesson of Peace
প্রাচুর্য ও দরিদ্রতা আল্লাহর পক্ষ থেকে পরীক্ষা
মঙ্গলবার, ২৯ আগস্ট ২০২৩ ০১:০৫ পূর্বাহ্ন
Islamic News BD - The Lesson of Peace

Islamic News BD - The Lesson of Peace

প্রাচুর্য ও দরিদ্রতা আল্লাহর পক্ষ থেকে পরীক্ষা। মহান আল্লাহ কাউকে অঢেল সম্পদ দিয়ে পরীক্ষা করেন যে সে মহান আল্লাহর দেওয়া সম্পদ কী কাজে ব্যয় করছে। আল্লাহর শোকর কতটুকু আদায় করছে। সম্পদের জাকাত ঠিকমতো দিচ্ছে কি না, অভাবীর অভাব মোচনে সচে ষ্ট হচ্ছে কি না ইত্যাদি।  আবার কাউকে কাউকে দরিদ্রতা দিয়ে দেখেন যে সে তার দরিদ্রতার ওপর ধৈর্য ধরতে পারছে কি না, আল্লাহর সিদ্ধান্তে তার কোনো অভিযোগ আছে কি না ইত্যাদি। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর আমি ভালো-মন্দ (উভয় অবস্থা) দ্বারা তোমাদের পরীক্ষা করে থাকি, আমার কাছেই তোমাদের ফিরিয়ে আনা হবে।’ (সুরা আম্বিয়া, আয়াত : ৩৫)

যারা প্রকৃত মুমিন তাদের জন্য সব অবস্থাই কল্যাণকর। সুখ-দুঃখ, দরিদ্রতা-সচ্ছলতা সব অবস্থাই তাদের জন্য কল্যাণ বয়ে আনে। তাদের মর্যাদা বৃদ্ধি করে। এ জন্য প্রিয় নবীজি (সা.) বলেছেন, মুমিনের অবস্থা বিস্ময়কর। সব কাজই তার জন্য কল্যাণকর। মুমিন ছাড়া অন্য কেউ এই বৈশিষ্ট্য লাভ করতে পারে না। তারা সুখ-শান্তি লাভ করলে শোকরগুজার করে আর অসচ্ছলতা বা দুঃখ-মুসিবতে আক্রান্ত হলে ধৈর্য ধরে, প্রত্যেকটিই তাদের জন্য কল্যাণকর। (মুসলিম, হাদিস : ৭৩৯০)

দুনিয়াতে মানুষের সবচেয়ে বড় সম্পদ হলো ঈমান। যার ঈমান আছে, যার সঙ্গে আল্লাহর রহমত আছে, সেই সফল। ধন-সম্পদ পরীক্ষা মাত্র। এর বণ্টন মহান আল্লাহ এমনভাবে করেছেন, যাতে প্রত্যেক শ্রেণি একে অপরের কাছে উপকৃত হতে পারে।  কারো মেধা আছে, সম্পদ নেই, কারো সম্পদ আছে মেধা তুলনামূলক কম, কারো আবার সম্পদ, মেধা দুটোই আছে, কিন্তু তার একার পক্ষে সব কাজ করা সম্ভব নয়। প্রত্যেকেই ক্ষেত্রভেদে প্রত্যেকের কাছে মুখাপেক্ষী। এই কৌশলেই মহান আল্লাহ গোটা বিশ্বের শৃঙ্খলা বজায় রেখেছেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তারা কি তোমার রবের করুণা বণ্টন করে? আমিই তাদের মধ্যে জীবিকা বণ্টন করি তাদের পার্থিব জীবনে এবং একজনকে অপরের ওপর মর্যাদায় উন্নীত করি, যাতে একে অপরের দ্বারা কাজ করিয়ে নিতে পারে; এবং তারা যা জমা করে তা থেকে তোমার রবের অনুগ্রহ উত্কৃষ্টতর। (সুরা জুখরুফ, আয়াত : ৩২)

কিন্তু আল্লাহ যদি সবাইকে সমান প্রাচুর্য দিতেন তাহলে পৃথিবীতে বিশৃঙ্খলা তৈরি হতো। মানুষ সম্পদ দ্বারা উপকৃত হতে পারত না। জীবনে স্বাদ পেত না। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর আল্লাহ যদি তাঁর সব বান্দাকে জীবনোপকরণের প্রাচুর্য দিতেন, তাহলে তারা পৃথিবীতে অবশ্যই বিপর্যয় সৃষ্টি করত, কিন্তু তিনি তাঁর ইচ্ছামতো সঠিক পরিমাণেই দিয়ে থাকেন। তিনি তাঁর বান্দাদের সম্পর্কে পূর্ণ ওয়াকিফহাল, সম্যক দ্রষ্টা। (সুরা : আশ-শুরা, আয়াত: ২৭)

তাই মানুষের উচিত, সম্পদের তারতম্যের কারণে কখনো হতাশ না হওয়া। যে অবস্থায় আল্লাহ রেখেছেন, সে অবস্থায় আল্লাহর শোকর আদায় করা। যা আছে তাতে তুষ্ট থাকা।  অন্যের সম্পদের পাহাড় দেখে ব্যথিত না হওয়া; বরং নিজের চেয়ে অসচ্ছল ব্যক্তিদের দেখে আল্লাহর শোকর আদায় করা। রাসুল (সা.) বলেছেন, তোমাদের কারো নজর যদি এমন লোকের ওপর পড়ে, যাকে ধন-সম্পদ ও দৈহিক গঠনে অধিক মর্যাদা দেওয়া হয়েছে, তবে সে যেন এমন লোকের দিকে নজর দেয়, যে তার চেয়ে নিম্ন স্তরে রয়েছে। (বুখারি, হাদিস : ৬৪৯০)

অভাব অনটনে আল্লাহর সাহায্য চাওয়া, মানুষের দারে দারে গিয়ে অভাবের কথা না বলা। যারা অভাব থাকা সত্ত্বেও যথাসম্ভব স্বাভাবিকভাবে মানুষের সঙ্গে মেশে, যাতে মানুষ বুঝতে না পারে যে লোকটি অসচ্ছল। পবিত্র কোরআনে তাদের প্রশংসা করা হয়েছে। এবং দান করার ক্ষেত্রে তাদের অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, (সদকা) সেসব দরিদ্রের জন্য, যারা আল্লাহর রাস্তায় আটকে গিয়েছে, তারা জমিনে চলতে পারে না। না চাওয়ার কারণে অনবগত ব্যক্তি তাদের অভাবমুক্ত মনে করে। তুমি তাদের চিনতে পারবে তাদের চিহ্ন দ্বারা। তারা মানুষের কাছে নাছোড় হয়ে চায় না। আর তোমরা যে সম্পদ ব্যয় কর, অবশ্যই আল্লাহ সে সম্পর্কে পূর্ণ জ্ঞানী। (সুরা : বাকারা, আয়াত : ২৭৩)

মানুষের প্রকৃত ধন হচ্ছে ঈমানের ধন, তা যদি কেউ অর্জন করতে পারে, তাহলে তাকে দরিদ্রতা যত বেশি কষ্ট দেবে, তার পরকাল তত বেশি সুন্দর হবে। এ জন্য রাসুল (সা.) বলেছেন, জান্নাতে উঁকি দিয়ে দেখলাম তার অধিকাংশ অধিবাসীই দরিদ্র। (বুখারি, হাদিস : ৬৫৪৬)

এমন ভাবে যারা ধনী, তাদের যদি পাশাপাশি ঈমানের ধনও থাকে এবং তারা তাদের সম্পদ আল্লাহর রাস্তায় আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (সা.)-এর নির্দেশনা মোতাবেক ব্যয় করতে পারে, তাহলে তাদের মর্যাদাও আল্লাহর কাছে বহু গুণে বেড়ে যায়। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, নবী (সা.) বলেছেন, বিধবা ও মিসকিন-এর জন্য খাদ্য জোগাড় করতে চেষ্টরত ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় মুজাহিদের মতো অথবা রাতে নামাজে দণ্ডায়মান ও দিনে সিয়ামকারীর মতো। (বুখারি, হাদিস : ৫৩৫৩)