মানবজীবনের সব দিক ও বিভাগে যাঁকে অনুসরণ করলে মহান আল্লাহর নৈকট্য ও ভালোবাসা অর্জিত হবে তিনি হলেন আমাদের জন্য সর্বোত্তম আদর্শ মহানবি (সা.)। তিনি সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনায় আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করতেন। লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ হচ্ছে ঈমানের সত্তরটি শাখার মধ্যে সর্বোত্তম। যে কারণে এ কালিমার জিকিরের রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ ফজিলত। যে ব্যক্তি সবসময় লা ইলাহা ইল্লাহর জিকির করবে আল্লাহতাআলা তাকে ঈমানের সঙ্গে মৃত্যু নসিব করবেন। আলহামদুলিল্লাহ শব্দের অর্থ সব প্রশংসা মহান আল্লাহর জন্য। যে কোনো উত্তম আনন্দময় ও শুভ খবর অথবা ভালো কিছুর জন্য এটি বলা হয়ে থাকে। পছন্দনীয় কিছু দেখলে বা শুনলে আলহামদুলিল্লাহ বলতে হয়। আলহামদুলিল্লাহ শব্দের মধ্যে আছে হামদ শব্দটি। আমরা আল্লাহর গুণকীর্তন করে হামদ গাই। হামদ অর্থ প্রশংসা। ভালো কোনো খবর শুনলে আলহামদুলিল্লাহ বলা সুন্নত। কোরআন পড়া শুরুই করতে হয় আলহামদুলিল্লাহ বলে। এ ছাড়া কোরআনের আরও কিছু সুরা এ বাক্য দিয়ে শুরু করতে হয়। এ থেকে এর তাৎপর্যের প্রমাণ পাওয়া যায়।
মহানবি (সা.)-বলেছেন আল্লাহর কাছে চারটি বাক্য প্রিয় সুবহানাল্লাহ আলহামদুলিল্লাহ লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ আল্লাহু আকবার । হাদিসে আছে আল্লাহর মাহাত্ম্য বর্ণনা ও প্রশংসার জন্য আলহামদুলিল্লাহ র চেয়ে উত্তম বাক্য আর নেই। আলহামদুলিল্লাহ বলার ফজিলত অগণিত। এই শব্দ হাশরের ময়দানে কাজে আসবে। মহানবি (সা.)-বলেন, আলহামদুলিল্লাহ মিজান (হাশরের মাঠের আমল মাপার যন্ত্র) পূর্ণ করে দেয়।অন্য হাদিসে এরশাদ হয়েছে-যদি আমার কোনো উম্মতকে পুরো দুনিয়া দিয়ে দেওয়া হয় আর সে আলহামদুলিল্লাহ বলে তাহলে এই শব্দ পুরো দুনিয়া থেকে উত্তম। (অর্থাৎ, পুরো পৃথিবী পেয়ে যাওয়া এত বড় নেয়ামত নয় যা আলহামদুলিল্লাহ বলার মধ্যে রয়েছে। কারণ এই পৃথিবী তো একদিন ধ্বংস হয়ে যাবে কিন্তু আলহামদুলিল্লাহর সওয়াব থেকে যাবে।
আল্লাহ তাআলা কোরআন শরিফের সুরা ফাতিহা, সুরা আনআম, সুরা কাহাফ, সুরা সাবা ও সুরা ফাতির আলহামদুলিল্লাহ শব্দের মাধ্যমে শুরু করেছেন। এছাড়াও কোরআনের বিভিন্ন আয়াতে আলহামদুলিল্লাহ শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে।আলহামদুলিল্লাহকে সবচেয়ে উত্তম দোয়া বলা হয়েছে। মহানবি (সা.)-বলেছেন সর্বোত্তম ফজিলতপূর্ণ বাক্য লা ইলাহা ইল্লাল্লা এবং সর্বোত্তম দোয়া আলহামদুলিল্লাহ । মহানবি (সা.)-আরও বলেছেন আলহামদুলিল্লাহ আমলের পাল্লা পূর্ণ করে দেয়। আর সুবহানাল্লাহ ও আলহামদুলিল্লাহ শব্দ দুটি আসমান ও জমিনের খালি জায়গা পূর্ণ করে দেয়। মূলত আলহামদুলিল্লাহ শব্দটি মুমিনের সফলতার সোপান। কেননা আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করার জন্য ‘আলহামদুলিল্লাহ’ পাঠ কর হয়। আর শুকরিয়া আদায়কারীদের আল্লাহ অশেষ নেয়ামত দান করেন। তাদের ব্যাপারে আল্লাহতা আলা বলেন যদি তোমরা শুকরিয়া আদায় করো তবে আমি অবশ্যই তোমাদের আরও বাড়িয়ে দেবো আর যদি তোমরা অকৃতজ্ঞ হও, নিশ্চয়ই আমার আজাব বড় কঠিন। (সুরা ইবরাহিম : ০৭)
প্রিয়নবি (সা.) বলেছেন, যখন তুমি আলহামদুলিল্লাহ বলার মাধ্যমে আল্লাহ তাআলার শুকরিয়া আদায় করবে তখন আল্লাহ তায়ালা নেয়ামতে বরকত দেবেন। খাওয়া দাওয়ার পরে, খুশির খবরে, বাথরুমের কাজ সেরে, হাঁচি দিয়ে, যে কোনো উত্তম কাজ শেষ করার পরে এবং আল্লাহর অসংখ্য নেয়ামতের কৃতজ্ঞতাস্বরূপ সব সময় আলহামদুলিল্লাহ বলা মুমিনের বৈশিষ্ট্য। আনাস (রা.)-বর্ণনা করেন রাসুলুল্লাহ (সা.)-বলেছেন, নিশ্চয় আল্লাহ সেই বান্দার প্রতি সন্তুষ্ট হন যে বান্দা কিছু খেলে আল্লাহর প্রশংসা করে এবং কিছু পান করলেও আল্লাহর প্রশংসা করে (অর্থাৎ আলহামদুলিল্লাহ পড়ে)।
তার মানে সবকিছুতেই আলহামদুলিল্লাহ পাঠ করতে উৎসাহিত করা হয়েছে। এমনকি প্রিয়বস্তু হারানোর পরও আলহামদুলিল্লাহ বলতে অভ্যস্ত বান্দার জন্য জান্নাতে বিশেষ নেয়ামতের ঘোষণা দিয়েছেন প্রিয়নবি (সা.)। আবু মুসা আশআরি (রা.)-বর্ণিত হাদিসে মহানবি (সা.)-ইরশাদ করেছেন যখন কোনো বান্দার সন্তান মারা যায় তখন মহান আল্লাহ (জান কবজকারী) ফেরেশতাদের বলেন তোমরা আমার বান্দার সন্তানের প্রাণ হরণ করেছ কি? তারা বলেন, হ্যাঁ। তিনি বলেন, তোমরা তার কলিজার টুকরার প্রাণ হরণ করেছ? তারা বলেন, হ্যাঁ। তিনি বলেন, সে সময় আমার বান্দা কী বলেছে? তারা বলেন, সে আপনার প্রশংসা করেছে ও ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন পাঠ করেছে। মহান আল্লাহ বলেন, আমার এ বান্দার জন্য জান্নাতের মধ্যে একটি ঘর নির্মাণ করো আর তার নাম রাখো বায়তুল হামদ অর্থাৎ প্রশংসার ঘর।অসুস্থ ব্যক্তির আলহামদুলিল্লাহ বলা সম্পর্কে হাদিসে কুদসিতে এসেছে, মহান আল্লাহ বলেন, যখন আমি আমার মুমিন বান্দাকে রোগাক্রান্ত করি আর বান্দা সে অবস্থায় আমার প্রশংসা করে আলহামদুলিল্লাহ বলে; তবে সে বিছানা থেকে এমনভাবে ওঠে দাঁড়ায়; যেমন তার মা তাকে জন্ম দিয়েছিল। অর্থাৎ সে পুরোপুরি গুনাহমুক্ত হয়ে যায়।