Islamic News BD - The Lesson of Peace
জিকির ও আল্লাহর নৈকট্য লাভ
বৃহস্পতিবার, ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ২২:৩৪ অপরাহ্ন
Islamic News BD - The Lesson of Peace

Islamic News BD - The Lesson of Peace

মু মিন বান্দা সবসময় আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য উদগ্রীব থাকে। যেকোনো আমলের কথা শুনলেই পালন করার জন্য সে তৎপর হয়ে ওঠে। মহান রবের আনুগত্যে নিজেকে সঁপে দেয়। সর্বদা ইবাদতে লেগে থাকে। সব ইবাদতই বান্দাকে আল্লাহর নিকটবর্তী করে দেয়। তবে জিকির এমন একটি ইবাদত যা সহজে পালনীয়। জিকিরের মাধ্যমে দ্রুত আল্লাহর সান্নিধ্য লাভ করা যায়। মহান প্রতিপালকের সাথে সম্পর্ক স্থাপনের এটি একটি অব্যর্থ পন্থা। জিকির আল্লাহর নৈকট্য লাভের অমোঘ উপায় হওয়ার কয়েকটি কারণ রয়েছে।

সব ইবাদতের প্রাণ হলো জিকির : ইসলামের একটি মৌলিক ইবাদত হচ্ছে সালাত। সালাতের মাধ্যমেই মুমিন ও কাফেরের মধ্যে পার্থক্য সৃষ্টি হয়। গুরুত্বপূর্ণ এই ইবাদতের মূল উদ্দেশ্য হলো আল্লাহর স্মরণ। আল্লাহ তায়ালা বলেন, তুমি আমার স্মরণের উদ্দেশ্যে সালাত কায়েম করো। (সূরা তহা : ১০) একইভাবে সিয়াম, জাকাত, হজ ও জিহাদ নামক ইবাদতের মূল প্রাণ হলো আল্লাহকে স্মরণ করা। এসব ইবাদতের মাধ্যমেও আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা যায়। তবে এসব ইবাদতে যদি আল্লাহর স্মরণ ও সন্তুষ্টি না থাকে তাহলে ফরজ আদায় হয় ঠিকই; কিন্তু আল্লাহর নৈকট্য লাভ হয় না। আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য একনিষ্ঠতা ও একাগ্রতা জরুরি। আর জিকির ছাড়া এ বিষয়টি থাকে ধরাছোঁয়ার বাইরে।

অন্তরের খোরাক জিকির : পেটের ক্ষুধা নিবারণের জন্য খাবার খেতে হয়। পানি দিয়ে পিপাসা মিটাতে হয়। মানবদেহের গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ হলো রূহ। এটি সুস্থ থাকলে পুরো দেহ সুস্থ থাকে। আর এই রূহের খাবার হচ্ছে আল্লাহর জিকির। যার অন্তরে যত বেশি জিকির, তার অন্তর তত বেশি সুস্থ। যার অন্তর যত বেশি সুস্থ, তার অন্তর তত বেশি হেদায়েতপ্রাপ্ত। আর হেদায়েতপ্রাপ্ত অন্তরগুলোই আল্লাহর সান্নিধ্য লাভে বেশি ধন্য হয়। আল্লাহ তায়ালা যেন আমাদের এ শ্রেণীর লোকদের অন্তর্ভুক্ত করে দেন। আমিন।

আল্লাহ তায়ালাও তার বান্দাকে স্মরণ করেন : আবু উসমান রহ: একদা তার ছাত্রদের উদ্দেশে বলেন, আমি এমন এক সময়ের কথা জানি যখন স্বয়ং আল্লাহ তায়ালাই তাঁর বান্দার জিকির করেন। তোমরা কি সে সময়ের কথা জানো? সবাই অবাক হয়ে একে অপরের দিকে তাকিয়ে রইল। কেউই জবাব দিতে পারল না। আবু উসমান রহ: বললেন, তোমার কি এই আয়াত শ্রবণ করোনি? তোমরা আমার জিকির করো, তবে আমিও তোমাদের জিকির করব। (সূরা বাকারাহ : ১৫২) এটাই হচ্ছে সেই সময় যার কথা আমি বললাম।

রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, আল্লাহ ঘোষণা করেন, আমি সে রকমই, যে রকম বান্দা আমার প্রতি ধারণা রাখে। আমি বান্দার সাথে থাকি যখন সে আমাকে স্মরণ করে। যদি সে মনে মনে আমাকে স্মরণ করে আমিও তাকে নিজে স্মরণ করি। আর যদি সে জন-সমাবেশে আমাকে স্মরণ করে, তবে আমিও তাদের চেয়ে উত্তম সমাবেশে তাকে স্মরণ করি। (বুখারি : ৭৪০৫, মুসলিম : ১৬৭৫) হাদিসে আরো এসেছে, নবীজী সা: বলেছেন, আল্লাহ তায়ালা বলেন, আমি আমার বান্দার সাথেই আছি যখন সে আমাকে স্মরণ করে এবং তার দুই ঠোঁট নড়ে। (ইবনে মাজাহ, সহিহ হাদিসে কুদসি : ২৯)

জিকিরের দ্বারা আল্লাহ তাঁর বান্দাকে কাছে টেনে নেন : জিকিরের মাধ্যমে বান্দা আল্লাহর একদম নিকটবর্তী হয়ে যায়। আল্লাহ তায়ালাও বান্দার নিকটবর্তী হন। মহানবী সা: তাঁর প্রতিপালক থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আমার বান্দা যখন আমার দিকে এক বিঘত ধাবিত হয়, আমি তখন তার দিকে এক হাত ধাবিত হই। আর সে যখন আমার দিকে এক হাত এগিয়ে আসে, আমি তখন তার দিকে দু হাত এগিয়ে আসি। সে যদি আমার দিকে হেঁটে আসে আমি তার দিকে দৌড়ে যাই। (বুখারি : ৭৫৩৬)

জিকিরের ফজিলত অশেষ : অন্যান্য ইবাদতের তুলনায় জিকিরের মর্যাদা ও ফজিলত অনেক। এটি এমন এক ইবাদত যার দ্বারা আল্লাহর অশেষ নৈকট্য অর্জন করা যায়। হাদিসে এসেছে, যে তার প্রতিপালকের জিকির করে, আর যে জিকির করে না, তাদের উপমা হলো জীবিত ও মৃত ব্যক্তি। (বুখারি :৬৪০৭) ওই হাদিসে রাসূল সা: জিকিরকারীকে জীবিত আখ্যা দিয়েছেন। আর যারা জিকির করে না তাদের মৃত বলেছেন। হাদিসে আরো এসেছে, রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, হালকা-পাতলা লোকেরা অগ্রগামী হয়ে গেছে । সাহাবিরা বলেন, হে আল্লাহর রাসূল! হালকা-পাতলা লোক কারা? তিনি বলেন, যেসব লোক আল্লাহ তায়ালার স্মরণে নিমগ্ন থাকে এবং আল্লাহর জিকির তাদের (পাপের) ভারী বোঝাটি তাদের থেকে সরিয়ে ফেলে। ফলে কিয়ামতের দিন তারা আল্লাহ তায়ালার সম্মুখে হালকা বোঝা নিয়েই হাজির হবে। (তিরমিজি : ৩৫৯৬) হাশরের মাঠে আল্লাহর আরশের ছায়া ব্যতীত আর কোনো ছায়া থাকবে না। সে দিন সাত শ্রেণীর লোক আরশের নিচে ছায়া পাবে। তন্মধ্যে এক শ্রেণী হলো ওই ব্যক্তি যে নির্জনে আল্লাহর জিকির করে এবং দু চোখ বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ে। (বুখারি : ৬৪০৪)
জিকির সর্বদা জারি রাখা উচিত : জিকির শব্দটি ব্যাপক। দ্বীনি ইলেম অর্জন, কুরআন তিলাওয়াত ও তাসবিহ-তাহলিলও জিকিরের অন্তর্ভুক্ত। জিকিরের মজলিস বলতে সাহাবায়ে কেরাম ইলেমের মজলিস বুঝতেন। তা ছাড়া আমরা পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের পর, সব সন্ধ্যায় ও বিভিন্ন উপলক্ষে যেসব দোয়া পড়ি সেগুলোও জিকিরের অন্তর্ভুক্ত। (আল-আযকার লিননববী) এ সময়গুলো ব্যতীত বাকি সময় মুখে মুখে আল্লাহর নাম জারি রাখা যায়। সর্বদা জিকির করা খুবই সহজ। হজরত আয়েশা রা: থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা: সর্বাবস্থায়ই আল্লাহর জিকির করতেন। (মুসলিম :৭১২)

এ জন্যই তাঁর উম্মতও যেন সর্বদা জিকিরে রত থাকে সে নির্দেশ দিয়ে তিনি বলেন, তোমার জবান যেন সর্বদা জিকিরে সিক্ত থাকে । (তিরমিজি : ৩৩৭৫)

আল্লাহ পাকের জিকিরের মাধ্যমে আমরা সহজেই তাঁর সাথে গভীর সম্পর্ক স্থাপন করতে পারি। যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে গভীর সম্পর্ক স্থাপন করতে পারল, সেই সফলকাম।