Islamic News BD - The Lesson of Peace
 ইসলামী আকীদার পরিচয় এবং দীনের মৌলিক ভিত্তি
সোমবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ২৩:৫৮ অপরাহ্ন
Islamic News BD - The Lesson of Peace

Islamic News BD - The Lesson of Peace

আকীদা শব্দটি আরবী العَقدُ العَقدُ (আল-‘আকদু (থেকে গৃহিত। এর অর্থ কোনো কিছু বেঁধে রাখা। বলা হয়عَقدْتُ عَليْهِ القلبَ وَالضَّمِيْرَ  অর্থাৎ আমি এর ওপর হৃদয় ও মনকে বেঁধেছি। আকীদা হলো ঐ বিষয়, মানুষ যা মেনে চলে। বলা হয়, ‘তার আছে সুন্দর আকীদা’ অর্থাৎ এমন আকীদা যা সন্দেহমুক্ত। আকীদা অন্তরের কাজ। অন্যভাবে বলা যায়, আকীদা হলো কোনো বিষয়ের প্রতি অন্তরের ঈমান ও প্রত্যয় এবং অন্তর দিয়ে সে বিষয়কে সত্য প্রতিপন্ন করা।

আকীদার শর‘ঈ অর্থ:

শরী‘আতের পরিভাষায় আকীদা হলো: আল্লাহর প্রতি, তাঁর মালাইকা (ফিরিশতা), তাঁর গ্রন্থসমূহ, তাঁর রাসূলগণ ও আখিরাত দিবসের প্রতি ঈমান পোষণ এবং তাকদীরের ভালো-মন্দের প্রতি ঈমান রাখা। আর এগুলোকে বলা হয় ঈমানের রুকন। শরী‘আত দু’ভাগে বিভক্ত: আকীদা ও আমল তথা অন্তরের বিশ্বাসগত বিষয় ও দৈহিক, আর্থিক কর্মকাণ্ডগত বিষয়:

আকীদাগত বিষয়সমূহ হলো এমন যা কাজে রূপায়িত করার সাথে সংশ্লিষ্ট নয় অর্থাৎ যার কোনো বাহ্যিক কার্যরূপ নেই। যেমন এই আকীদা পোষণ করা যে, আল্লাহ্ রব এবং তাঁর ইবাদাত করা ওয়াজিব। একইভাবে ঈমানের উল্লে­খিত বাকী রুকনগুলোর প্রতিও বিশ্বাস রাখা। এগুলোকে বলা হয় মৌলিক বিষয়।

আর আমলী বিষয়সমূহ হলো এমন যা কার্যে পরিণত করা যায়, যেমন সালাত আদায়, যাকাত প্রদান, সাওম পালন ও যাবতীয় সকল আমলী বিধান। এগুলোকে বলা হয় আনুষঙ্গিক বিষয়। কেননা এগুলোর শুদ্ধাশুদ্ধি উক্ত মৌলিক বিষয়সমূহের শুদ্ধাশুদ্ধির ওপর নির্ভরশীল।

অতএব, বিশুদ্ধ আকীদা হলো এমন মৌলিক ভিত্তি যার ওপর দীন স্থাপিত এবং যা থাকলে আমল শুদ্ধ ও সহীহ হয়। যেমন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন: “অতএব, যে ব্যক্তি তার পালনকর্তার সাক্ষাত কামনা করে সে যেন সৎকর্ম সম্পাদন করে এবং তার রবের ইবাদাতে কাউকে শরীক না করে। [সূরা আল-কাহাফ, আয়াত: ১১০]

আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন: তোমার প্রতি ও তোমার পূর্ববর্তীদের প্রতি অহী প্রেরণ করা হয়েছে যে, যদি (আল্লাহর সাথে) শরীক কর তাহলে তোমার আমল নিষ্ফল হয়ে যাবে এবং তুমি ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে। [সূরা আয-যুমার, আয়াত: ৬৫]

আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন: “অতএব, তুমি ইখলাস ও নিষ্ঠার সাথে আল্লাহর ইবাদাত কর। জেনে রাখ, আল্লাহর জন্যই নিষ্ঠাপূর্ণ ইবাদাত ও আনুগত্য। [সূরা আয-যুমার, আয়াত: ২-৩]

সুতরাং এই মহান আয়াতসমূহ ও অনুরূপ অর্থে আরো বহুসংখ্যক যে আয়াতসমূহ এসেছে তা এ প্রমাণই বহন করছে যে, আমল শির্ক থেকে মুক্ত না হওয়া ব্যতীত কবুল হয় না। এ দৃষ্টিকোণ থেকেই রাসূলগণ (আল্লাহ তাদের ওপর সালাত ও সালাম বর্ষণ করুন) সর্বপ্রথম আকীদা সংশোধনের প্রতি গুরুত্ব আরোপ করেছেন। তাই তারা সর্বপ্রথম স্ব-স্ব জাতির লোকদেরকে একমাত্র আল্লাহর ইবাদাতের প্রতি ও অন্য সব কিছুর ইবাদাত ত্যাগ করার প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন। যেমন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

“আমরা অবশ্যই প্রত্যেক জাতির মধ্যে একজন রাসূলকে প্রেরণ করেছিলাম এ নির্দেশ দিয়ে যে, তোমরা আল্লাহর ইবাদাত করবে এবং তাগুতকে পরিহার করবে। [সূরা আন-নাহল, আয়াত: ৩৬]

প্রত্যেক রাসূলই তার জাতিকে প্রথমে এ কথা বলে সম্বোধন করেছিলেন যে, ﴿   “তোমরা আল্লাহর ইবাদাত করো, তিনি ছাড়া তোমাদের প্রকৃত আর কোনো ইলাহ নেই। [সূরা আল-আ‘রাফ, আয়াত: ৮৫] এ কথাটি বলেছিলেন নূহ, হুদ, সালেহ, শু‘আইব এবং সকল নবীগণ (আল্লাহ তাদের ওপর সালাত ও সালাম বর্ষণ করুন) তাদের নিজ নিজ জাতির উদ্দেশ্যে।

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নবুওয়াতের পর তের বছর ধরে মানুষকে তাওহীদের প্রতি ও আকীদার সংশোধনের প্রতি আহ্বান জানাতে থাকলেন। কেননা আকীদাই হচ্ছে ঐ মূলভিত্তি যার ওপর দীনের ভিত্তি স্থাপিত। আর প্রত্যেক যুগেই দা‘ঈ-ইলাল্লাহ ও সংস্কারকগণ নবী ও রাসূলগণের সে আদর্শের অনুসারী ছিলেন। তারা তাওহীদের প্রতি ও আকীদা সংশোধনের প্রতি আহ্বান করার মাধ্যমেই তাদের কাজ শুরু করেছিলেন। এরপর তারা দীনের অন্যান্য নির্দেশনাসমূহ বাস্তবায়নের দিকে মনোনিবেশ করেন।