Islamic News BD - The Lesson of Peace
ফাতেমা বিনতে হামাদ আল-ফুদাইলিয়া (রহ.) নিজ বাড়িতে ইলমের মজলিস করতেন ফাতেমা বিনতে হামাদ আল-ফুদাইলিয়া (রহ.)
বুধবার, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ২৩:০২ অপরাহ্ন
Islamic News BD - The Lesson of Peace

Islamic News BD - The Lesson of Peace

ফাতেমা বিনতে হামাদ আল-ফুদাইলিয়া (রহ.) ছিলেন হিজরি ত্রয়োদশ শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ মুসলিম নারী পণ্ডিত। বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী এই নারী ছিলেন একই সঙ্গে হাদিসবিশারদ, আইনবিদ ও সুফিসাধক। তিনি ইরাকের ‘আল জুবাইর’ জেলায় জন্মগ্রহণ করায় তাঁকে ‘জুবাইরিয়া’ও বলা হয়। ফাতেমা ফুদাইলিয়া (রহ.)-এর জ্ঞানগত দক্ষতা, আল্লাহভীতি, ইবাদত-বন্দেগি ও মর্যাদার প্রতি লক্ষ্য করে তাঁকে ‘আশ-শায়খা আল-ফুদাইলিয়া’ বলা হয়। তিনি এই নামেই অধিক পরিচিত।

‘আস-সাহবুল ওয়াবিলা’ গ্রন্থকার লেখেন, শায়খা ফুদাইলিয়া (রহ.) ছিলেন একজন নেককার আধ্যাত্মিক সাধক আলেমা। তিনি সাইয়িদুন জুবায়ের ইবনুল আউয়াম (রা.)-এর শহর আল-জুবাইরিয়াতে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি এই শহরেই বেড়ে ওঠেন এবং এখানেই তাঁর শিক্ষাজীবন অতিবাহিত হয়। তিনি ইরাকের বিখ্যাত আলেমদের কাছে পাঠ গ্রহণ করেন। যাঁদের মধ্যে শায়খ ইবরাহিম বিন জাদিদ অন্যতম। ফাতেমা ফুদাইলিয়া (রহ.) তাঁর কাছ থেকে তাফসিরশাস্ত্র, হাদিসশাস্ত্র, ফিকহ, উসুলুশ শরিয়াহ ও তাসাউফশাস্ত্রের পাঠ নেন। এ ছাড়া আরো অনেকের কাছ থেকে তিনি শিক্ষা গ্রহণ করেন। শৈশব থেকেই ফাতেমা বিনতে হামাদ (রহ.) হাতের লেখা চর্চা করতেন এবং হস্তলিপিতে বিশেষ দক্ষতা অর্জন করেন। তিনি বিভিন্ন শাস্ত্রের একাধিক বইয়ের অনুলিপি তৈরি করেন। বইয়ের অঙ্গসজ্জা ও ক্যালিগ্রাফিতে তাঁর সুনাম ও খ্যাতি ছিল। ইসলামী জ্ঞানের প্রায় প্রতিটি শাখায় তাঁর বিচরণ ছিল। তবে তিনি হাদিস চর্চাকে সব কিছুর ওপর প্রাধান্য দিতেন। তিনি একাধিক মুসালসাল হাদিস (যে হাদিস মুহাদ্দিস স্বীয় শিক্ষকের আচরণ ও বর্ণনা পদ্ধতিসহ বর্ণনা করেন) একত্র করেন। তিনি অসংখ্য হাদিসের কিতাব পাঠ করেন এবং সময়ের শ্রেষ্ঠ হাদিসবিদদের কাছ থেকে অনুমতি লাভ করেন।

ফাতেমা (রহ.) শেষ জীবনে জন্মভূমি ছেড়ে মক্কায় হিজরত করেন। তিনি মক্কার নিকটবর্তী একটি বাড়িতে বসবাস করতেন। তিনি মক্কায় আগমনের পর তাঁর জ্ঞান-গরিমার কথা স্থানীয় জ্ঞানান্বেষীদের ভেতর ছড়িয়ে পড়ে। ফলে মক্কার বেশির ভাগ আলেম তাঁর কাছ থেকে হাদিসের অনুমতি গ্রহণ করেন এবং তিনিও তাঁদের কারো কারো কাছ থেকে হাদিস শ্রবণ করেন। তাঁদের মধ্যে শায়খুল ইসলাম ওমর আবদুর রব হানাফি ও শায়খ মুহাম্মদ সালিহ শাফেয়ি অন্যতম।

তাঁর হিজরতের প্রেক্ষাপট বর্ণনা করে মুহাদ্দিস আবু জাইয়াব বলেন, ‘তৎকালীন শাসক যখন দেখল আমাদের দাবি ফাতেমা (রহ.) তাঁর ওয়াজ-নসিহতে শাসকদের ব্যাপারে কঠোর ভাষা ব্যবহার করছেন এবং তাদের সমালোচনা করছেন, তখন তাঁকে বলা হলো—আপনি হয় চুপ করুন অথবা দেশ ছেড়ে যেখানে ইচ্ছা চলে যান। তিনি হিজরতের জন্য মক্কা নগরীকে বেছে নেন।’

তাসাউফ চর্চায় ফাতেমা বিনতে হামাদ (রহ.) নকশাবন্দিয়া ও কাদেরিয়া তরিকার অনুসারী ছিলেন। তিনি নারীদের আত্মিক পরিশুদ্ধির জন্য কাজ করতেন। বহুসংখ্যক নারী তাঁর হাতে তরিকতের বাইআত ও দীক্ষা গ্রহণ করে। তিনি তাঁর বাড়িতে নারীদের জন্য ইলম ও জিকিরের মজলিস করতেন। সেখানে তিনি তাদের ফরজ ইলম, আল্লাহভীতি, পরহেজগারি, অল্পতুষ্টি, ধৈর্য ও উত্তম চরিত্র অর্জন ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা করতেন।

শায়খ আবদুল্লাহ বিন ইবরাহিম কামলাশ (রহ.) লেখেন, শায়খা ফাতেমা ফুদাইলিয়া (রহ.) তাঁর সংগৃহীত যাবতীয় বই-পুস্তক হাম্বলি মাজহাবের অনুসারী শিক্ষার্থীদের জন্য ওয়াকফ করেন এবং শায়খ মুহাম্মদ হামাদ হুদাইবি (রহ.) পাঠাগারের তত্ত্বাবধায়ক নিযুক্ত করেন। ফাতেমা ফুদাইলিয়া (রহ.)-এর জ্ঞান দ্বারা নারী-পুরুষ সবাই উপকৃত হতো। তাঁর বাড়িতে শিক্ষার্থীদের ভিড় লেগে থাকত। মুহাম্মদ বিন আবদুল্লাহ সালমান তাঁর সম্পর্কে বলেন, তিনি ছিলেন ফিকহে হাম্বলিতে পারদর্শী একজন নারী। পর্দার আড়াল থেকে তিনি শিক্ষার্থীদের পাঠদান করতেন।

শেষ জীবনে ফাতেমা (রহ.) দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলেন। ফলে এক রাতে তাহাজ্জুদের জন্য অজু করতে বের হলে পড়ে গিয়ে তাঁর পাঁজরের দুটি হাড় ভেঙে যায়। এতে তিনি খুব কষ্ট পাচ্ছিলেন। তখন এক রাতে স্বপ্নযোগে নবীজি (সা.) আগমন করেন এবং নিজের চাদরের এক কোনা ফাতেমা (রহ.)-এর চোখ ও ভাঙা হাড়ের ওপর বুলিয়ে দেন। ফলে তিনি সুস্থ হয়ে যান। তাঁর এই কেরামতের কথা ছড়িয়ে পড়লে বিশ্বের নানা প্রান্তের বহুসংখ্যক আলেম সাক্ষাতে ও পত্রযোগে তাঁর কাছে দোয়ার আবেদন করেন। ১৮৩১ খ্রিস্টাব্দে এই মহীয়সী নারী ইন্তেকাল করেন এবং তাঁকে মক্কার ‘জান্নাতুল মুআল্লা’ কবরস্থানে দাফন করা হয়।

সূত্র : আন-নাতুল আকমাল