আবু মাসউদ আনসারি (রা.) থেকে বর্ণিত রাসুল (সা.) বলেছেন,
إِذَا أَنْفَقَ الْمُسْلِمُ نَفَقَةً عَلٰى أَهْلِه وَهُوَ يَحْتَسِبُهَا كَانَتْ لَه صَدَقَةً
সওয়াবের আশায় কোন মুসলমান যখন তার পরিবার-পরিজনের জন্য ব্যয় করে, তা তার জন্য সদকা গণ্য হয়। (সহিহ বুখারি, সহিহ মুসলিম)
১. নিজের স্ত্রী ও সন্তানদের জন্য কেউ যদি আল্লাহর কাছে প্রতিদান পাওয়ার আশায় খরচ করে, তার যদি নিয়ত থাকে আল্লাহর এ নির্দেশে সাড়া দেওয়া,
لِیُنۡفِقۡ ذُوۡ سَعَۃٍ مِّنۡ سَعَتِهٖ وَ مَنۡ قُدِرَ عَلَیۡهِ رِزۡقُهٗ فَلۡیُنۡفِقۡ مِمَّاۤ اٰتٰىهُ اللّٰهُ لَا یُکَلِّفُ اللّٰهُ نَفۡسًا اِلَّا مَاۤ اٰتٰىهَا سَیَجۡعَلُ اللّٰهُ بَعۡدَ عُسۡرٍ یُّسۡرًا
সামর্থ্যবান যেন নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী ব্যয় করে আর যার রিজিক সংকীর্ণ করা হয়েছে সে যেন আল্লাহ তাকে যা দিয়েছেন তা হতে ব্যয় করে। আল্লাহ কারো ওপর বোঝা চাপাতে চান না তিনি তাকে যা দিয়েছেন তার চাইতে বেশী। আল্লাহ কঠিন অবস্থার পর সহজতা দান করবেন। (সুরা তালাক: ৭)
তাহলে পরিবারের জন্য কৃত খরচও সদকা গণ্য হবে এবং সে এ জন্য সওয়াব লাভ করবে। যার এ নিয়ত থাকবে না, যার জন্য এটা শুধুই দুনিয়াবি কাজ, সে সওয়াব পাবে না। ।
সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস (রা.) থেকে বর্ণিত রাসুল (সা.) বলেছেন, যে খরচগুলো তুমি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য করবে, সেগুলোর জন্য সওয়াব লাভ করবে; এমন কি যে খরচ তুমি তোমার স্ত্রীর জন্য করো। (সহিহ বুখারি, সহিহ মুসলিম)
২. স্ত্রী ও সন্তানের জন্য খরচ করা ওয়াজিব। তাদেরকে খরচ না দেওয়া আল্লাহর নির্দেশের লঙ্ঘন ও আমানত নষ্ট করার শামিল। এটা সমাজে বড় বড় ফিতনা-ফাসাদের কারণ হয়। আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস থেকে বর্ণিত রাসুল (সা.) বলেছেন,
كَفَى بِالمَرْءِ إثْمَاً أنْ يُضَيِّعَ مَنْ يَقُوتُ মানুষের পাপী হওয়ার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে, সে তাদের অধিকার নষ্ট করবে, যাদের ভরণ-পোষণের জন্য সে দায়িত্বশীল। (সুনানে আবু দাউদ)
৩. স্ত্রী-সন্তানদের জন্য ব্যয় সর্বোত্তম ব্যয়সমূহের অন্যতম এবং এটা সব ধরনের সদকার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। সওবান (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন,
أَفْضَلُ دِينَارٍ يُنْفِقُهُ الرَّجُلُ دِينَارٌ يُنْفِقُهُ عَلَى عِيَالِهِ وَدِينَارٌ يُنْفِقُهُ عَلَى فَرَسٍ فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَدِينَارٌ يُنْفِقُهُ الرَّجُلُ عَلَى أَصْحَابِهِ فِي سَبِيلِ اللَّهِ
সবচেয়ে উত্তম দীনার হলো- যা মানুষ তার পরিবার-পরিজনের জন্য ব্যয় করে, যা আল্লাহর রাস্তায় জিহাদের ঘোড়া প্রতিপালনে ব্যয় করে এবং যা আল্লাহর রাস্তায় জিহাদকারী তার সহ-যোদ্ধাদের জন্য ব্যয় করে। (সহিহ মুসলিম)
হাদিসটির একজন বর্ণনাকারী আবু কিলাবা (রহ.) এ হাদিস বর্ণনার পর বলেন, রাসুল (সা.) প্রথম বলেছেন পরিবারের কথা। যে ব্যাক্তি তার ছোট ছোট সন্তান-সন্ততির জন্য ব্যয় করে, ফলে আল্লাহ তাদেরকে পবিত্র ও অমুখাপেক্ষী রাখেন, অভাবমুক্ত ও উপকৃত করেন, তার চেয়ে বেশি সওয়াবের অধিকারী আর কে হতে পারে?
আবু হোরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত রাসুল সা. বলেছেন, একটি দিনার তুমি আল্লাহর রাস্তায় খরচ করলে, একটি দিনার দাস মুক্ত করার কাজে খরচ করলে, একটি দিনার কোনো দরিদ্র ব্যক্তিকে দান করলে, একটি দিনার তোমার পরিবারের জন্য খরচ করলে, এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সওয়াব ওই দিনরটির কারণে পাবে যা তুমি তোমার পরিবারের জন্য খরচ করেছো। (সহিহ মুসলিম)
স্ত্রী-সন্তানদের পাশাপাশি নিজের বাবা-মা ও আত্মীয় স্বজনের জন্য ব্যয় করাও সর্বোত্তম ব্যয় ও সদকা। যেমন আল্লাহ বলেছেন,
یَسۡـَٔلُوۡنَکَ مَا ذَا یُنۡفِقُوۡنَ ۬ؕ قُلۡ مَاۤ اَنۡفَقۡتُمۡ مِّنۡ خَیۡرٍ فَلِلۡوَالِدَیۡنِ وَ الۡاَقۡرَبِیۡنَ وَ الۡیَتٰمٰی وَ الۡمَسٰکِیۡنِ وَ ابۡنِ السَّبِیۡلِ ؕ وَ مَا تَفۡعَلُوۡا مِنۡ خَیۡرٍ فَاِنَّ اللّٰهَ بِهٖ عَلِیۡمٌ
তারা তোমাকে জিজ্ঞাসা করে, তারা কীভাবে ব্যয় করবে? বলো, তোমরা যে সম্পদ ব্যয় করবে তা পিতা-মাতা, আত্মীয়, এতিম, মিসকিন ও মুসাফিরদের জন্য। আর যে কোনো ভাল কাজ তোমরা করো, নিশ্চয় সে ব্যাপারে আল্লাহ ভালোভাবে অবগত রয়েছেন। (সুরা বাকারা: ২১৫)