সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে সব মা-বাবা চিন্তা করে। তারা চায় সন্তানের জন্য ভবিষ্যতের পথ মসৃণ করে রেখে যেতে। সন্তানের সুন্দর জীবনের কথা চিন্তা করে সব কষ্ট সহ্য করে নেয় তারা। পবিত্র কোরআনের একটি আয়াতে সন্তানের ভবিষ্যৎ সুরক্ষা করার নীতি ও নির্দেশনা রয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর ওই প্রাচীর, যা ছিল নগরবাসী দুই পিতৃহীন কিশোরের, এর নিম্নদেশে আছে তাদের গুপ্তধন এবং তাদের পিতা ছিল সৎকর্মপরায়ণ। সুতরাং আপনার প্রতিপালক দয়াপরবশ হয়ে ইচ্ছা করলেন যে, তারা বয়ঃপ্রাপ্ত হোক এবং তারা তাদের ধনভাণ্ডার উদ্ধার করুক।’ (সুরা : কাহফ, আয়াত : ৮২)
আয়াতের প্রেক্ষাপট
কোরআনের উল্লিখিত আয়াতটি মুসা ও খিজির (আ.)-এর সফরের বিবরণে এসেছে। একবার মুসা (আ.) খিজির (আ.)-এর সফরসঙ্গী হওয়ার ইচ্ছা করেন এবং তাঁরা একসঙ্গে পথ চলতে শুরু করেন। একসময় তাঁরা ক্ষুধার্ত হন এবং একটি শহরে পৌঁছে শহরবাসীর কাছে মেহমানদারির অনুরোধ করেন। কিন্তু তারা আপ্যায়ন করতে অস্বীকার করে। মেহমানদারির মতো সাধারণ ভদ্রতা ও শিষ্টাচার রক্ষা না করায় মুসা (আ.) মনে কষ্ট পান। তাঁরা উভয়ে চলতে থাকেন।
পথে দেখতে পান, শহরের একটি প্রাচীর ভেঙে পড়েছে। খিজির (আ.) পতনোম্মুখ প্রাচীরটি ঠিক করে দেন। মুসা (আ.) বললেন, আপনি এই প্রাচীর মেরামতের বিনিময়ে পারিশ্রমিক নিতে পারতেন। কেননা একদিকে আমরা ক্ষুধার্ত, আমাদের প্রয়োজন আছে, অন্যদিকে তারা খাবার না দিয়ে অমানবিক আচরণ করেছে। উত্তরে খিজির (আ.) জানান, প্রাচীর মেরামতের কাজ তিনি শুধু নিজের ইচ্ছায় করেননি, বরং আল্লাহর নির্দেশনায় করেছেন।
আয়াতের শিক্ষা
আয়াতে প্রাচীর মেরামতের ব্যাপারে আল্লাহর ইচ্ছা ও উদ্দেশ্য দুটিই বর্ণনা করা হয়েছে। তা হলো তিনি প্রাচীর মেরামতের মাধ্যমে নেককার পিতার সম্পদ সন্তানদের জন্য সংরক্ষণ করতে চান। যেন তারা উপযুক্ত বয়সে তা লাভ করে এবং এর দ্বারা উপকৃত হতে পারে। অথচ তাদের পিতা তাদেরকে অপরিণত বয়সে রেখে গেছেন। এ আয়াতের প্রধান দুটি শিক্ষা হলো :
১. সন্তানের জন্য সম্পদ রেখে যাওয়া : ইসলামের দৃষ্টিতে সন্তানদের নিঃস্ব রেখে যাওয়ার চেয়ে তাদের জন্য কিছু সম্পদ রেখে যাওয়া উত্তম। যেমন আয়াতে বর্ণিত বাবা তাঁর সন্তানদের জন্য সম্পদ সংরক্ষণ করেছিলেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁর উম্মতকে এমন নির্দেশনাই দিয়েছেন। তিনি বলেন, তোমার পরিবার-পরিজনকে যদি তুমি সম্পদশালী রেখে যাও, অথবা বলেছেন স্বাচ্ছন্দ্যে রেখে যাও, তবে তা তাদের মানুষের কাছে হাত পাতা অবস্থায় রেখে যাওয়ার তুলনায় ভালো। (মুসলিম, হাদিস : ৪১০৭)
২. মা-বাবার নেক আমলও সম্পদ : আলোচ্য আয়াতের ভাষ্য থেকে বোঝা যায়, মা-বাবার নেক আমলও সন্তানের জন্য সম্পদস্বরূপ, বরং তা অন্যান্য সম্পদের জন্য নিরাপত্তা। মা-বাবা যদি নেককার হন এবং তারা সামান্য সম্পদ রেখে যান, তবে আল্লাহ এর মাধ্যমে সন্তানদের উপকৃত হওয়ার সুযোগ দেবেন। তাদের নেক আমল, দোয়া ও চোখের পানির বদৌলতে সম্পদগুলো সন্তানদের জন্য রক্ষা করবেন; বরং আল্লাহ তাদের দায়িত্ব গ্রহণ করবেন।অন্যদিকে মা-বাবার স্বেচ্চাচারী জীবন, তাদের হারাম উপার্জন সন্তানের ভবিষ্যেক অভিশপ্ত করে তোলে। সমাজে এমন বহু পরিবার দেখা যায় যারা এক প্রজন্ম আগে ধনী ছিল, কিন্তু এক প্রজন্ম পরেই চরম দারিদ্র্যের শিকার হয়েছে।