গাজার হাসপাতালে নির্মম হত্যাযজ্ঞের ঘটনায় আরব ও মুসলিমবিশ্বকে সেখানকার অধিবাসীদের সহযোগিতায় এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছে মিসরের আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়। গতকাল মঙ্গলবার (১৭ অক্টোবর) রাতে এক বিবৃতিতে ইসরায়েলের হামলা ও দখলদারিত্ব প্রতিরোধে ফিলিস্তিনিদের এগিয়ে যেতে বলা হয়। তা ছাড়া গাজাবাসীর সহযোগিতায় মিসরের জাকাত ও চ্যারিটি বিভাগকে জরুরি তহবিল গঠন করতে বলা হয়। বিবৃতিতে বলা হয়, আরব ও মুসলিম জাতিকে উদ্ধত আমেরিকা ইউরোপের ওপর নির্ভলশীলতার বিষয়ে পুনরায় চিন্তা করতে হবে।
ফিলিস্তিনিদের অবশ্যই এ আস্থা রাখতে হবে যে তাদের সামনে পশ্চিমাদের সব সামরিক শক্তি ও ধ্বংসাত্মক সরঞ্জাম খুবই দুর্বল ও ক্ষীণ। কারণ পশ্চিমারা অন্যের ভূমিতে এসে যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছে এবং মধ্যযুগীয় হাস্যকর আদর্শ সুরক্ষার চেষ্টা করছে। বিবৃতিতে আরো বলেছে, মহান আল্লাহ ও মুহাম্মদ রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর নির্দেশনা আঁকড়ে ধরে পশ্চিমাদের অমানবিক বর্বরোচিত নৃশংস হামলার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা আপনাদের কর্তব্য। সোমালিয়া ও আফগানিস্তানের ক্ষেত্রে তাদের নীতি নির্ধারণের বিষয়টি আপনাদের অজানা নয়।
চলমান পরিস্থিতিতে মুসলিম জাতির কর্তব্য উল্লেখ করে আল-আজহার বিবৃতিতে জানিয়েছে, মহান আল্লাহ প্রদত্ত শক্তি-সামর্থ্য, সহায়-সম্পত্তি ও সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে ফিলিস্তিন ও এর নিপীড়িত জাতির পাশের দাঁড়ানো মুসলিম উম্মাহর গুরু দায়িত্ব। কারণ তারা দীর্ঘকাল যাবত এমন পাশবিক শত্রুদলের মোকাবেলা করে চলছে যাদের কাছে নীতি-নৈতিকতা, মানবতা ও নবী-রাসুলদের সুশিক্ষার কোনো গুরুত্ব নেই।
বিবৃতির শেষে বলা হয়, মহান আল্লাহর ডাকে সাড়া দেওয়া সবার কর্তব্য। তিনি বলেছেন, তোমরা মনোবল হারাবে না, তোমরা দুশ্চিন্তা করবে না, তোমরাই বিজয়ী হবে যদি তোমরা মুমিন হয়ে থাকে। আপনারা শত্রুর বাস্তব অবস্থা জানতে চাইলে এই আশা কোরো, ‘অতঃপর তোমাদের কঠোর হয়ে পড়ে, তা পাথরের মতো হয়ে পড়ে কিংবা আরো কঠোর হয়ে পড়ে। মহান আল্লাহ আমাদের নিষ্পাপ শহীদদের ওপর অনুগ্রহ করুন এবং জঙ্গলের পশুদের উপযুক্ত বিনিময় দিন।
এদিকে গত ১৬ অক্টোবর গাজাবাসীর সহযোগিতায় জাতীয় তহবিল গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যান্ড ইমাম শায়খ ড. আহমদ আল-তাইয়েব। তিনি দেশটির জাকাত অ্যান্ড চ্যারিটি বিভাগকে ‘গাজাকে সাহায্য করুন’ প্রচারণা কার্যক্রম শুরু করতে বলেন। তোমাদের সম্পদ নিয়ে ফিলিস্তিনের সাহায্যে এগিয়ে আসো শীর্ষক এই কার্যক্রমের মাধ্যমে গাজা উপত্যাকার যুদ্ধাহত মানুষকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসহ জরুরি সহায়তা দেওয়া হবে বলে জানানো হয়। জাকাত অ্যান্ড চ্যারিটি বিভাগ জানিয়েছে, সংগৃহীত অর্থ দিয়ে খাদ্য সামগ্রী, নির্মল পানীয়, কম্বল, শীতবস্ত্রসহ গাজাবাসী জরুরি প্রয়োজনগুলো পূরণ করা হবে। তা ছাড়া জাকাত ও সদকা বাবদ সংগৃহীত অর্থ কোরআনে বর্ণিত খাতে যথাযথভাবে ব্যয় করা হবে।
উল্লেখ্য, গত ৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস ও ইসরায়েলের হামলার মধ্য দিয়ে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শুরু হয়। ১১ দিনের হামলায় ফিলিস্তিনের তিন হাজার তিন শয়ের বেশি লোক মারা গেছে যার মধ্যে এক-তৃতীয়াংশ শিশু রয়েছে। সর্বশেষ গত মঙ্গলবার রাতে গাজার আল-আহলি হাসপাতালে বোমা বর্ষণে পাঁচ শতাধিক শিশু নিহত হয়। অপরদিকে হামাসের হামলায় ইসরায়েলের প্রায় দেড় হাজার লোক নিহত হয়।