ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানিয়ে মালয়েশিয়ায় বৃহত্তম গণসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। গত মঙ্গলবার রাজধানী কুয়ালালামপুরের আজিয়াটা অ্যারেনা স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ফিলিস্তিনের সঙ্গে রয়েছে মালয়েশিয়া শীর্ষক মিছিল ও জমায়েতে অংশ নেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইবরাহিম। স্টেডিয়ামের ১৬ হাজার আসনের পুরো ভেন্যু পূর্ণ হয়ে যায়, যা ছিল গাজায় হামলার শুরুর পর দেশটির বৃহত্তম গণজমায়েত। ঐতিহ্যবাহী ফিলিস্তিনি স্কার্ফ পরে এবং ফিলিস্তিনি পতাকা বহন করে এতে অংশ নেয় সবাই। তারা ফিলিস্তিনের সঙ্গে সংহতি ফিলিস্তিন বাঁচাও গাজায় গণহত্যা বন্ধ করো এবং নদী থেকে সমুদ্র পর্যন্ত, ফিলিস্তিন স্বাধীন হবে স্লোগান দিতে থাকে। বক্তব্যে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা ফিলিস্তিনি জনগণের সঙ্গে অতীতে ছিলাম, বর্তমানে রয়েছি এবং ভবিষ্যতেও থাকব। ইয়াসির আরাফাতের সময় থেকে আজ পর্যন্ত মালয়েশিয়ার মানুষ স্বাধীন ফিলিস্তিনের জন্য নির্ভয়ে নিজেদের সমর্থন অব্যাহত রেখেছে। মানুষ হত্যা করা, শিশুদের হত্যা করা, হাসপাতালে বোমা ফেলা এবং স্কুল ধ্বংস করার অনুমতি দেওয়া পাগলামির একটি স্তর। তিনি আরা বলেন, এই মুহূর্তে আমরা আর কিছু চাই না। আমরা চাই আরব, ফিলিস্তিন ও গাজার জনগণকে মানুষ হিসেবে গণ্য করা হোক। হত্যা বন্ধ করুন। তাদের খাবার দিন। তাদের ওষুধ দিন। শিশুদের বাঁচার অধিকার দিন। এতে কি খুব বেশি চাওয়া হয়েছে?
মিছিলে অংশ নেওয়া বৃদ্ধ মোহাম্মদ হাসান বলেন, অনেকে গাজায় যেতে চান। তবে তা এখন অসম্ভব। আমরা গাজায় যেতে না পারলেও মানবিক সমর্থন দিতে পারি। আর এ জন্যই আমরা এখানে এসেছি। মালয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পররাষ্ট্রনীতি এবং নিরাপত্তা কৌশলবিদ কলিন্স চং ইউ কিট বলেন, মানবিক কারণে এক বিশালসংখ্যক মুসলিম ও অমুসলিম জনসংখ্যা ফিলিস্তিন ইস্যুতে সংহতি জানিয়েছে। তা ছাড়া সুবিধাবঞ্চিতদের পাশে দাঁড়ানো মালয়েশিয়ার দীর্ঘ ঐতিহ্য রয়েছে। এটি তারই বহিঃপ্রকাশ। তবে ফিলিস্তিন ইস্যুতে মালয়েশিয়া সব সময়ই অবিচল ও সোচ্চার থাকলেও বাস্তবিক প্রভাব তৈরি করতে দেশটির আরো সুদৃঢ় অবস্থান জরুরি। এ ক্ষেত্রে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিকভাবে কূটনৈতিক চাপ বাড়াতে মালয়েশিয়ার কূটনৈতিক নৈপুণ্যের প্রয়োজন হবে।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বহু সংস্কৃতির একটি দেশ মালয়েশিয়া। ফিলিস্তিনের সঙ্গে ঐতিহাসিক সম্পর্ক রয়েছে দেশটির। ফলে ইসরায়েলের সঙ্গে নেই কোনো কূটনৈতিক সম্পর্ক। ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা, ফিলিস্তিনি ইস্যু এবং ফিলিস্তিনিদের অধিকার প্রতিষ্ঠার সমর্থনে দেশটিতে কোনো ধরনের রাজনৈতিক ও ধর্মীয় বিভক্তি দেখা যায় না।
গত ৭ অক্টোবর থেকে ইসরায়েলের নৃশংস হত্যাযজ্ঞে মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছে ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকা। হামাসের সঙ্গে এ যুদ্ধে গাজায় পাঁচ হাজারের বেশি লোক মারা গেছে, যার মধ্যে ৬০ শতাংশই নারী ও শিশু। গাজার বেসামরিক স্থাপনা ও হাসপাতালে বোমা নিক্ষেপের পাশাপাশি সেখানে বিদ্যুৎ, পানি, খাবার ও চিকিৎসা সরঞ্জাম সরবরাহ বন্ধ করে দেয় ইসরায়েল। এতে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর যুদ্ধবিরতির আহ্বান উপেক্ষা করে ইসরায়েলের আত্মরক্ষায় সমর্থন জানিয়েছে পশ্চিমা দেশগুলো।
সূত্র : স্ট্রেইটস টাইমস