Islamic News BD - The Lesson of Peace
ফিলিস্তিন সংকটে মুসলিমদের মনোভাব
সোমবার, ৩০ অক্টোবর ২০২৩ ০০:৫১ পূর্বাহ্ন
Islamic News BD - The Lesson of Peace

Islamic News BD - The Lesson of Peace

যদি পাহাড়গুলোর কলিজা থাকত তবে তা টুকরা হয়ে যেত। যদি গাছগুলোর চোখ থাকত তবে আশ্চর্যের কিছু ছিল না যে তা অশ্রু বিসর্জন দিয়ে নদী বইয়ে দিত। যদি পৃথিবীর বাকশক্তি থাকত, তবে তার আর্তনাদ ও কান্নায় পৃথিবী কেঁপে উঠত। যদি হিংস্র পশুরা মানুষরূপী পশুদের দেখত তাহলে তারাও হয়তো এদের বর্বরতার কাছে লজ্জিত হয়ে আত্মসমর্পণ করত। গাজায় বছরের পর বছর যে বর্বরতা ও রক্তপাত চলছে, যেভাবে একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রকে নামধারী মুসলিম শাসকদের মদদে মুসলমানদের জন্য জেলখানা বানানো হয়েছে, তাদের মৌলিক অধিকার হরণ করা হয়েছে—তা দেখে প্রকৃতিও হয়তো নিজেকে স্থির রাখতে পারছে না।

সেসব মুক্তিকামী যোদ্ধাদের মহান আল্লাহ সাহায্য করুন, যাঁরা ইসলাম নামক পবিত্র বৃক্ষকে বাঁচিয়ে রাখতে তার মূলে নিজেদের তাজা রক্ত ঢেলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। শতসহস্র রহমত বর্ষিত হোক সেসব শহীদের ওপর, যাঁরা নিজেদের শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে ইসলামের ঝাণ্ডা বুলন্দ করার জন্য লড়ে গেছেন। এর বিপরীতে যারা নিরীহ মানুষের ওপর জুলুম করছে, মহান আল্লাহ তাদের হিদায়াত দান করুন। অন্যথায় মহান আল্লাহর মর্জি অনুযায়ী তাদের দমন করার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করুন।

এখন প্রশ্ন হলো, যেসব মুসলিম তাদের নির্যাতিত মুসলিম ভাইদের নৈতিকভাবে সমর্থন দেওয়া ছাড়া আর কিছুই করতে পারে না, তাদের মনোভাব কেমন হওয়া উচিত? নবীজি (সা.) তাঁর হাদিসে সে বিষয়ে নির্দেশনা দিয়ে গেছেন। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, আবু সাঈদ আল খুদরি (রা.) বলেন, আমি রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি, তোমাদের কেউ গর্হিত কাজ হতে দেখলে সে যেন স্বহস্তে (শক্তি প্রয়োগে) পরিবর্তন করে দেয়, যদি তার সে ক্ষমতা না থাকে, তবে মুখ (বাক্য) দ্বারা এর পরিবর্তন করবে। আর যদি সে সাধ্যও না থাকে, তখন অন্তর দ্বারা করবে, তবে এটা ঈমানের দুর্বলতম পরিচায়ক। (মুসলিম, হাদিস : ৮১)

পৃথিবীতে জুলুম-অত্যাচার সবচেয়ে বড় পাপের একটি। কখনো কখনো তা শিরকের চেয়েও নিকৃষ্ট কাজ। কেননা যারা আগে থেকেই জন্ম থেকে মুশরিক তাকে হত্যা করার বিধান নেই, তবে কেউ যদি জুলুম করে কাউকে হত্যা করে, তাহলে ইসলামী আইন অনুযায়ী তাকেও কিসাসস্বরূপ মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার বিধান আছে। তাই কোথাও জুলুম হলে মুমিনের উচিত, নিজের শক্তি-সামর্থ্য অনুযায়ী সেই জুলুমের প্রতিবাদ করা। তাদের বিরোধিতা করা। 

বিরোধিতার একটি বহিঃপ্রকাশ হলো অত্যাচারীর সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করা। এই শিক্ষা স্বয়ং মহান আল্লাহ দিয়েছেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনগণ! তোমরা ইহুদি ও খ্রিস্টানদের বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না, তারা পরস্পর বন্ধু; আর তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি তাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করবে নিশ্চয়ই সে তাদেরই মধ্যে গণ্য হবে; নিশ্চয়ই আল্লাহ অত্যাচারী সম্প্রদায়কে সুপথ প্রদর্শন করেন না।’ (সুরা : মায়েদা, আয়াত : ৫১)

এখানে মহান আল্লাহ তাদের বন্ধুরূপে গ্রহণ করতে নিষেধ করেছেন, অর্থাৎ আন্তরিকতা, চিন্তা-চেতনা, সামাজিক ও আর্থিক সম্পর্ক ইত্যাদি এর অন্তর্ভুক্ত। এগুলো জুলুমের প্রতি অসমর্থন প্রদর্শনের মাধ্যম। আয়াতের শেষে মহান আল্লাহ জুলুমের কথাও উল্লেখ করেছেন, অর্থাৎ যেসব ইহুদি-নাসারা জুলুমে লিপ্ত থাকবে, মুসলমানদের দায়িত্ব হবে নিজের শক্তি-সামর্থ্য অনুযায়ী তাদের বিরোধিতা করবে, তাদের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করবে। কোনোভাবেই তাদের কোনো সহযোগিতা করবে না। অন্য আয়াতে এ বিষয়টি আরেকটু স্পষ্ট করা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ শুধু তাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে নিষেধ করেন, যারা দ্বিনের ব্যাপারে তোমাদের সঙ্গে যুদ্ধ করেছে, তোমাদের স্বদেশ থেকে বহিষ্কৃত করেছে এবং তোমাদের বহিষ্কারে সাহায্য করেছে। তাদের সঙ্গে যারা বন্ধুত্ব করে তারা তো অত্যাচারী।’ (সুরা : মুমতাহিনা, আয়াত : ৯)

অর্থাৎ যারা মুসলমানদের সঙ্গে দ্বিনের ব্যাপারে লড়াইয়ে লিপ্ত হয়, মুসলমানদের তাদের ভূমি থেকে উচ্ছেদ করতে চায়, তাদের সঙ্গে সব ধরনের সম্পর্ক ছিন্ন করা আবশ্যক। কেউ যদি সামাজিক স্বার্থে কিংবা রাজনৈতিক স্বার্থেও তাদের সঙ্গে সম্পর্ক রাখে, তাদের বিরুদ্ধে আওয়াজ তোলা থেকে বিরত থাকে, তাহলেও সে-ও কোরআনের এই নির্দেশনাগুলোর বিপরীত কাজে লিপ্ত হলো। তবে যদি কোনো ইহুদি-নাসারা এমন হয় যে, তারা ইসলামের বিরুদ্ধে কোনো কর্মসূচিতে লিপ্ত নয়, মুসলমানদের ওপর জুলুম-নির্যাতন করে না, তাদের কথা ভিন্ন। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘দ্বিনের ব্যাপারে যারা তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেনি এবং তোমাদেরকে তোমাদের বাড়ি-ঘর থেকে বের করে দেয়নি, তাদের প্রতি সদয় ব্যবহার করতে এবং তাদের প্রতি ন্যায়বিচার করতে আল্লাহ তোমাদেরকে নিষেধ করছেন না। নিশ্চয়ই আল্লাহ ন্যায়পরায়ণদের ভালোবাসেন।’ (সুরা : মুমতাহিনা, আয়াত : ৮)

অর্থাৎ যেসব অমুসলিম ভাই ইনসাফের ওপর থাকবে, মুসলমানদের ওপর আক্রমণাত্মক মনোভাব রাখবে না, তাদের সঙ্গে যুদ্ধ করবে না, তাদের ভূমি থেকে উচ্ছেদ করার চেষ্টা করবে না, তাদের ক্ষতি করার চেষ্টা করবে না, তাদের সঙ্গে বৈরিতা নয়। তাদের সঙ্গে সদ্ব্যবহার করা যাবে এবং ভ্রাতৃত্ব বজায় রাখা যাবে, বরং তাদের সঙ্গে বাড়াবাড়ি করা জায়েজ নয়।

সম্পর্ক ছিন্ন করতে হবে সেসব অমুসলিমের সঙ্গে, যারা ইসলাম ও মুসলমানের ব্যাপারে আক্রমণাত্মক মনোভাব পোষণ করে। কারণ তাদের সঙ্গে যতই ভালো ব্যবহার করা হোক, তাদের স্বার্থ পূরণ করা হোক, তারা মুসলমানদের ওপর কখনো খুশি হবে না। যতক্ষণ মুসলমান তার ঈমান থেকে সরে আসবে না, ততক্ষণ তারা মুসলমানকে মন থেকে ভালোবাসবে না।

এই পরিস্থিতি যেমন নবীজি (সা.)-এর যুগে ছিল, তেমন এখনো আছে। এ জন্যই মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘ইহুদি-খ্রিস্টানরা কখনো তোমার প্রতি সন্তুষ্ট হবে না, যতক্ষণ না তুমি তাদের ধর্মের আদর্শ গ্রহণ করো। বলো, আল্লাহর দেখানো পথই প্রকৃত সুপথ আর তুমি যদি তাদের প্রবৃত্তির অনুসরণ করো তোমার কাছে যে জ্ঞান এসেছে তার পর, তাহলে আল্লাহর বিপরীতে তোমার কোনো অভিভাবক ও সাহায্যকারী থাকবে না।’ (সুরা : বাকারাহ, আয়াত : ১২০)

তাই আমাদের উচিত দখলদার ইসরায়েল ও তাদের মদদদাতাদের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করা। রাজনৈতিক, ব্যাবসায়িক থেকে শুরু সব অঙ্গনে তাদের বয়কট করা। ফিলিস্তিনিদের ওপর তাদের আগ্রাসনের তীব্র বিরোধিতা করা। মহান আল্লাহর কাছে ফিলিস্তিনের মজলুম জনতার জন্য দোয়া করা। এটাই আমাদের মানবিক ও ঈমানি দায়িত্ব।