বিশ্বাসী মুসলিম তরুণদের প্রতি আমার আহ্বান, আপনারা নিজের শক্তি ও সামর্থ্য সম্পর্কে সচেতন হোন। কবি বলেন,‘নিজের ভেতর খুঁজে নাও জীবনের পথ, যদি তুমি আমার না হও, অন্তত নিজের তো হও। নিজের প্রতি তো সুবিচার করুন। আপনারা জাতির নেতৃত্ব দিতে অগ্রসর হোন।কেননা বিশ্বাসী মানুষের নেতৃত্বের সঙ্গে পুরো জাতির ভবিষ্যৎ জড়িত।
বিষয়টি শুধু একটি মাদরাসা, কোনো জামিয়া,কোনো মক্তবের নয়; বিষয়টি কোনো পদ-পদবি বা ভবন রক্ষার নয়, অথবা শুধু ইসলামী জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চা ও ব্যক্তিত্ব রক্ষার নয়। আপনাদের অন্যের পেছনে পেছনে চলার জন্য সৃষ্টি করা হয়নি, অন্যের আজ্ঞাবহ হয়ে থাকার এবং অন্যের সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য আপনাদের পাঠানো হয়নি। আপনাদের জাতির গতিপথ ঠিক করার জন্য, বরং পুরো মানবজাতির নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে।
সমাজ ও রাষ্ট্র এখন বারবার আত্মহত্যার কসম করছে, জাতি অগ্নিকুণ্ডের ঝাঁপ দেওয়ার জন্য প্রস্তুত, তারা অনৈতিকতা ও মনুষ্যত্বহীনতার ফেনার ভেতর হাবুডুবু খাচ্ছে। আপনারাই এমন এক সম্প্রদায়, যারা শুধু ভারতবর্ষ নয়, বরং সমগ্র মানবসভ্যতাকে রক্ষা করতে পারেন। এ জন্য আপনাদের অনেক প্রস্তুতি ও পাথেয়র প্রয়োজন নেই। আপনারা শুধু আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের কথা বলবেন। অসুস্থ কোনো প্রতিযোগিতায় লিপ্ত না হয়ে আপনারা পূর্বসূরিদের পথ অনুসরণ করে এগিয়ে যাবেন। আল্লাহই আপনাদের সাফল্যের জন্য যথেষ্ট হয়ে যাবেন। ইনশাআল্লাহ, বিজয় আপনাদেরই হবে। কেননা আপনাদের মধ্যে নিষ্কলুষ একত্ববাদের বিশ্বাস, মানবীয় সাম্যের নীতি, সামাজিক সুবিচারের ঐতিহ্য বিদ্যমান। আপনারা সেই অদম্য জাতি, যাদের অন্তরে ঈমান আছে এবং যারা বিশ্বাস করে শুভ পরিণাম মুত্তাকিদের জন্য।
আপনারা তাদের অন্তর্ভুক্ত নন, যাদের দৃষ্টি বাহ্যিক শক্তি ও সামর্থ্যে আবদ্ধ, যাদের দৃষ্টিতে সম্পদ, প্রাচুর্য ও সংখ্যাগরিষ্ঠতাই সব এবং যারা নির্বাচনে বিজয়ী হওয়াকে সাফল্যের মাপকাঠি মনে করে। যারা সম্পদের দর্শনে বিশ্বাস করে, অস্তগামী সূর্যের ব্যাপারে ধারণা করে তা কখনো উদিত হবে না, তাদের কেউ বাঁচাতে পারবে না।
দুঃখের বিষয়, বর্তমান মুসলিম বিশ্বের সর্বত্র আমি এই দৃশ্যই দেখছি। তাদের দেখে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর একটি হুঁশিয়ারির কথা মনে পড়ে যায়। তিনি বলেছেন, আল্লাহর কসম! আমি তোমাদের ব্যাপারে দারিদ্র্যের ভয় করি না। কিন্তু তোমাদের ব্যাপারে এ আশঙ্কা করি যে তোমাদের ওপর দুনিয়া এরূপ প্রসারিত হয়ে পড়বে যেমন তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর প্রসারিত হয়েছিল। আর তোমরাও দুনিয়ার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়বে, যেমন তারা আকৃষ্ট হয়েছিল। আর তা তোমাদের বিনাশ করবে, যেমন তাদের বিনাশ করেছে। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৩১৫৮)
মুসলমান যদি আল্লাহর অঙ্গীকারের প্রতি তাদের বিশ্বাস পূর্ণ করে নেয় এবং ঈমানি স্তম্ভগুলো মজবুত করে নেয়, তবে তারা এখনো নমরুদের অগ্নিকুণ্ডে ফুল বাগান সৃষ্টির ক্ষমতা রাখে। আমি দৃঢ় বিশ্বাসের সঙ্গে বলতে চাই, আল্লামা কাসেম নানুতবি (রহ.), শায়খুল হিন্দ মাহমুদ হাসান (রহ.), হাকিমুল উম্মত আশরাফ আলী থানবি (রহ.), আল্লামা হুসাইন আহমদ মাদানি (রহ.)-সহ আমাদের পূর্বসূরি সব আলেম এলক্ষ্য নিয়েই কাজ করেছেন যে ভারতবর্ষের মুসলমানরা যেন নিজেদের স্বাতন্ত্র্য ও জাতিগত বৈশিষ্ট্য নিয়ে টিকে থাকে, কোরআন ও সুন্নাহ বুকে ধারণ করে রাখে। নিজেদের দ্বিন, ধর্ম ও ধর্মীয় পরিচয় নিয়ে তাদের মধ্যে কোনো হীনম্মন্যতা না থাকে।
আমি আপনাদের বলতে চাই, আপনারা নিজেদের জন্য নেতৃত্বের জায়গাটি নির্বাচন করুন। জাতীয় নেতৃত্বই আপনাদের উপযুক্ত স্থান। আল্লাহর কিতাব ও রাসুলের সুন্নাহকে ধারণ করে যদি আপনারা অগ্রসর হতে পারেন, তবে আপনাদের প্রতিহত করার মতো কেউ নেই। ইনশাআল্লাহ! আপনারাই বিজয়ী হবেন। এটা আল্লাহর অঙ্গীকার। আল্লাহর অঙ্গীকার কখনো মিথ্যা হতে পারে না। তিনি বলেছেন, তোমরা হীনবল হয়ো না এবং দুঃখিতও হয়ো না; তোমরাই বিজয়ী হবে যদি তোমরা মুমিন হও। (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ১৩৯)