Islamic News BD - The Lesson of Peace
বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক স্থাপন এবং তার পরিণতি
মঙ্গলবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২৪ ০০:৩৭ পূর্বাহ্ন
Islamic News BD - The Lesson of Peace

Islamic News BD - The Lesson of Peace

বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক স্থাপন এবং তার পরিণতিতে অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণ আমাদের সমাজে নতুন কিছু নয়। যার প্রমাণ ঘন ঘন নবজাতকের মরদেহ উদ্ধারেই পাওয়া যায়। ধীরে ধীরে বাড়ছে এই জঘন্যতম অপরাধ। এর কারণ কী কী হতে পারে সে ব্যাপারে আমাদের কমবেশি ধারণা রয়েছে। বর্তমান যুগ তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির যুগ। ইন্টারনেট সংযোগ গোটা বিশ্বকে এনে দিয়েছে হাতের মুঠোয়। দিনে দিনে বাড়ছে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যাও। যার ফলে ইন্টারনেটে যুক্ত স্মার্ট ফোন, কম্পিউটার,ল্যাপটপ ও অন্যান্য ডিভাইস বহির্বিশ্বের বিশ্বাস,প্রথা,সংস্কৃতি,জীবনাচরণের মত ব্যাপারগুলো খুব ব্যাপকতার সাথে আমাদের সামনে উপস্থাপন করছে। আমরা তাতে প্রভাবিতও হচ্ছি। আধুনিক বিশ্বের বহু দেশেই প্রকাশ্যে কিংবা অপ্রকাশ্যে বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক বেশ জমজমাটভাবেই চলছে যা লিভ টুগেদার নামে পরিচিত। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে আমাদের দেশের জনগণের চিন্তাধারাতেও। খেয়াল করলে দেখবেন সিনেমাগুলোতে লিভ টুগেদারকে কতটা ইতিবাচকতার সাথে তুলে ধরা হয়। আবার আছে নানা ধরণের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অশ্লীলতার প্রচার প্রসার। কৌশলেই বেশ কিছু মাধ্যমে যৌনতাকে ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে ইন্টারনেটের দুনিয়ায়। এছাড়াও রয়েছে তরুণ তরুণীদের মাঝে অবাধ মেলামেশার প্রবণতা। আজকাল স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে তরুণ তরুণীরা বেশ অবাধেই মেলামেশা করছে। অনলাইন চ্যাটিং, আড্ডা, ট্যুর, বিভিন্ন অনুষ্ঠান ইত্যাদিতে তারা খুব কাছাকাছি আসার সুযোগ পাচ্ছে। যৌনাকাঙ্ক্ষা যেহেতু প্রত্যেক মানুষের সহজাত বৈশিষ্ট্য সেহেতু বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আকাঙ্ক্ষা তৈরি হওয়াটাও স্বাভাবিক একটি ব্যাপার। যার ফলে আজকাল তরুণ তরুণীরা জড়িয়ে পড়ছে বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কে। পরিণতিতে ঘটছে অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণ। পরবর্তীতে লোকলজ্জা বা পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার ভয়ে কিংবা সমাজে ঐ সন্তান স্বীকৃতি না পাওয়ার ভয়ে করছে গর্ভপাত। শহরের বিভিন্ন আবর্জনার স্তূত,ডাস্টবিন আর ড্রেনে ঘন ঘনই উদ্ধার হচ্ছে নবজাতকের লাশ। যা বর্বরতম ঘৃণ্য একটি অপরাধ। কিন্তু বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে নিষিদ্ধ এবং পাপের কাজ। আর মানুষ ধর্মীয় অনুশাসন না মেনে চলার কারণেই জড়িয়ে পড়ছে এহেন গর্হিত কাজে। ইসলাম ধর্মে বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক বা যিনা, ব্যভিচারকে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। যার ব্যাপারে স্বয়ং আল্লাহ রব্বুল আ’লামীন এবং রাসূলুল্লাহ (সা.) কঠোর হুশিয়ারি দিয়েছেন এবং এর শাস্তি সম্পর্কেও বিশদ বর্ণনা দিয়েছেন। মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে বলেন : আর তোমরা ব্যভিচারের নিকটবর্তীও হয়ো না। নিশ্চয়ই এটা অশ্লীল কাজ এবং নিকৃষ্ট পন্থা। (সুরা বনী ইসরাঈল : ৩২) এ ব্যাপারে রাসূল (সা.) বলেন : কোন ব্যক্তি যখন ব্যভিচার করে, তখন তার ভেতর থেকে ঈমান বেরিয়ে যায়, এরপর তা তার মাথার উপর ছায়ার মত অবস্থান করতে থাকে। এরপর সে যখন তা থেকে তাওবা করে, তখন তার ঈমান পুনরায় তার কাছে ফিরে আসে। (আবু দাউদ)। 

রাসূল (সা:) আরো বলেছেন : কিয়ামতের দিন আল্লাহ তিন ব্যক্তির সাথে কথা বলবেন না, তাদের দিকে তাকাবেন না, তাদেরকে পবিত্রও করবেন না এবং তাদের জন্য যন্ত্রণাদায়ক কঠোর শাস্তি নির্ধারিত থাকবে। তারা হচ্ছে বৃদ্ধ ব্যভিচারী, মিথ্যাবাদী শাসক এবং অহংকারী গরীব।” -[মুসলিম ও নাসায়ী] এছাড়াও অন্য হাদিসে রাসূলুল্লাহ (সা.) যিনা, ব্যভিচারের শাস্তির জ্বলজ্বলন্ত ব্যাখাও প্রদান করেন। যিনার শাস্তি সম্পর্কে হাদিসে রাসূল (সা.) বলেছেন : আমি স্বপ্নে একটি চুলা দেখতে পেলাম যার উপরের অংশ ছিল চাপা আর নিচের অংশ ছিল প্রশস্ত আর সেখানে আগুন উত্তপ্ত হচ্ছিল, ভিতরে নারী পুরুষরা চিৎকার করছিল। আগুনের শিখা উপরে আসলে তারা উপরে উঠছে, আবার আগুন স্তিমিত হলে তারা নিচে যাচ্ছিল, সর্বদা তাদের এ অবস্থা চলছিল, আমি জিবরীল আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে জিজ্ঞেস করলাম, এরা কারা? জিবরাইল আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলল, তারা হল, অবৈধ যৌনচারকারী নারী ও পুরুষ। সহীহ আল-বুখারী। বর্তামান আমরা নারী পুরুষের অবাধ মেলামেশাকে খুব সাধারণ ব্যাপার হিসেবেই দেখি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে, কর্মক্ষেত্রে, যাত্রাপথে সহযাত্রী হিসেবে, ফেইসবুক বা অনলাইনে পরিচিতির খাতিরে নারী পুরুষের মাঝে বেশ সখ্যতা গড়ে ওঠে। কিন্তু ইসলামি দৃষ্টিকোণে এগুলোও নিষিদ্ধের আওতায়। এ ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : কোন বেগানা নারীর প্রতি দৃষ্টি দেওয়া চোখের যিনা, অশ্লীল কথাবার্তা বলা জিহ্বার যিনা, অবৈধভাবে কাউকে স্পর্শ করা হাতের যিনা, ব্যাভিচারের উদ্দেশ্যে হেঁটে যাওয়া পায়ের যিনা, খারাপ কথা শোনা কানের যিনা আর যিনার কল্পণা করা ও আকাংখা করা মনের যিনা। অত:পর লজ্জাস্থান একে পূর্ণতা দেয় অথবা অসম্পূর্ণ রেখে দেয়। সহীহ আল-বুখারী, সহীহ আল-মুসলিম,সুনানে আবু দাউদ, সুনানে আন-নাসায়ী।

কিন্তু তাই বলে ব্যভিচারের ফলে জন্মলাভ করা সন্তানকে শান্তির ধর্ম ইসলামে হত্যা করে ফেলতে বলা হয়নি। বরং তার সুরক্ষা এবং ভরণপোষণের ব্যাপারে তাগিদ প্রদান করা হয়েছে। পরিপূর্ণ জীবনব্যবস্থার ধর্ম ইসলামে সেই শিশুকে নিষ্পাপ এবং সেই পাপ কাজের অংশীদার না বানানোর কথা বলা হয়েছে। ইসলামে শরিয়াহ মতে ব্যভিচারের ফলে জন্মলাভ করা সন্তান মায়ের পরিচয়ে পরিচিত হবে যেহেতু তার পিতা অবৈধ এবং মাকেই তার ভরণপোষণের দায়ভার গ্রহণ করতে হবে। কিন্তু আমাদের সমাজে বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক স্থাপনে তো একটি পাপ করছেই উপরন্তু নবজাতককে হত্যা করে আরও একটি মহাপাপ করছে। আর এই জঘন্যতম অপরাধ বন্ধে আমাদেরকে তৎপর হতে হবে। জীবনে ধর্মীয় রীতিনীতি, বিধিনিষেধ এবং অনুশাসন মেনে চলার পাশাপাশি বেশ কিছু বাড়তি সতর্কতা এবং পদক্ষেপ গ্রহণ করলে এরকম ঘৃণ্য কর্মকা- বিনাশ করা সম্ভব হবে। যেমন: সন্তানদের মাঝে ধর্মীয় জ্ঞানের প্রসার ঘটাতে হবে,নারীর প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। ইসলাম ধর্মসহ অন্যান্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতেও এ অবৈধ সম্পর্কের বিধিনিষেধ এবং পরকালের শাস্তির ব্যাপারে অবগত হতে হবে। তরণ তরুণীদের মধ্যকার অবাধ মেলামেশা নিয়ন্ত্রণে আনতে অভিভাবকগণকে এবং শিক্ষকগণকে সচেতন হতে হবে। ইন্টারনেটের নেতিবাচক প্রভাবের ব্যাপারে জনগণকে অবহিত করতে হবে।নবজাতক হত্যাকারীদের চিহ্নিত করে তাদের সর্বোচ্চ শাস্তির বিধান কার্যকর করতে হবে। প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিদের অনতিবিলম্বে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করতে হবে। এক্ষেত্রে কর্মসংস্থানের ঘাটতির মত সমস্যা নিরসনে উদ্যোগী হতে হবে। তবে মূল কথা একটাই জীবনের সর্বক্ষেত্রে ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলতে হবে। কোন ব্যক্তি যদি পরিপূর্ণভাবে তার ধর্মকে লালন করে নিজের মাঝে তাহলে তার দ্বারা এরকম গর্হিত পাপকার্য সম্পন্ন হওয়ার কথা নয়।