ইসলামে শপথ শুধু আল্লাহর নামেই করতে হয়। আল্লাহ ছাড়া কারো নামে শপথ করা হারাম ও ছোট শিরক যা বড় গুনাহসমূহের অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহর ছাড়া যে কোনো ব্যক্তি বা বস্তু যেমন ফেরেশতা, নবিজি (সা.), কাবা, আমানত, নামাজ, বাবা-মা বা কোনো দরবেশের নামে শপথ করা হারাম। রাসুল (সা.) বলেন, আল্লাহ তোমাদেরকে বাবা-মায়ের নামে শপথ করতে নিষেধ করেছেন। যে শপথ করতে চায়, সে যেন আল্লাহর নামে শপথ করে অথবা চুপ থাকে। (সহিহ বুখারি, সহিহ মুসলিম)
কসম বা তার সমার্থক শব্দ উচ্চারণ না করে শুধু কোরআন স্পর্শ করে, হাতে বা মাথায় নিয়ে কোনো কিছুর অঙ্গীকার করলে তা দ্বারা কসম সংঘটিত হয় না। তবে কোরআন স্পর্শ করে বা হাতে নিয়ে কসম করছি বললে কসম হয়ে যায়। কোরআনের কসম করছি বললেও কসম হয়ে যায়। যদিও উপরোক্ত হাদিসের নিষেধাজ্ঞা থেকে বোঝা যায় এমনটি করা ঠিক নয়। কসম শুধু আল্লাহর নামেই করা উচিত।
কেউ যদি আল্লাহর নামে কোনো শপথ করে পরে তা রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়, শপথটি ভেঙে ফেলে, তাহলে সেজন্য কাফফারা দিতে হয়। কসমের কাফফারা হলো দশজন দরিদ্র ব্যক্তিকে দুই বেলা তৃপ্তি সহকারে খাবার খাওয়ানো অথবা দশজন দরিদ্র ব্যক্তিকে এক জোড়া করে কাপড় দেওয়া। এভাবে কাফফারা আদায় করার সামর্থ্য না থাকলে লাগাতার তিন দিন রোজা রাখতে হবে। আল্লাহ বলেন,
لَا یُؤَاخِذُکُمُ اللّٰهُ بِاللَّغۡوِ فِیۡۤ اَیۡمَانِکُمۡ وَ لٰکِنۡ یُّؤَاخِذُکُمۡ بِمَا عَقَّدۡتُّمُ الۡاَیۡمَانَ فَکَفَّارَتُهٗۤ اِطۡعَامُ عَشَرَۃِ مَسٰکِیۡنَ مِنۡ اَوۡسَطِ مَا تُطۡعِمُوۡنَ اَهۡلِیۡکُمۡ اَوۡ کِسۡوَتُهُمۡ اَوۡ تَحۡرِیۡرُ رَقَبَۃٍ فَمَنۡ لَّمۡ یَجِدۡ فَصِیَامُ ثَلٰثَۃِ اَیَّامٍ
আল্লাহ তোমাদেরকে পাকড়াও করেন না অর্থহীন কসমের ব্যাপারে, কিন্তু যে কসম তোমরা দৃঢ়ভাবে কর সে কসমের জন্য তোমাদেরকে পাকড়াও করেন। সুতরাং এর কাফফারা হল দশ জন মিসকীনকে খাবার দান করা, মধ্যম ধরনের খাবার, যা তোমরা নিজেদের পরিবারকে খাইয়ে থাক, অথবা তাদের বস্ত্র দান করা, কিংবা একজন দাস-দাসী মুক্ত করা। যে সামর্থ্য রাখে না, তার জন্য তিন দিন রোজা রাখা। (সুরা মায়েদা: ৮৯)
আল্লাহর নামে কৃত শপথকে কোনো কল্যাণকর কাজের জন্য প্রতিবন্ধক বানানো উচিত নয়। কোনো কাজ করা বা না করার শপথ করার পর যদি মনে হয়, শপথের বিপরীত কাজটিই কল্যাণকর, তাহলে তার কর্তব্য শপথ ভেঙে কল্যাণকর কাজটি করা এবং শপথের জন্য কাফফারা দিয়ে দেওয়া। যেমন কেউ শপথ করলো, স্ত্রীকে তালাক দেবে, গাড়ি বিক্রি করে দেবে, বাড়ি পরিবর্তন করবে, তার ভাইয়ের বাড়িতে প্রবেশ করবে না অথবা কারো সাথে কথা বলবে না, তারপর তার কাছে স্পষ্ট হলো যে তার শপথের বিপরীত কাজই তার জন্য কল্যাণকর, তাহলে ওই শপথ ভেঙে কল্যাণকর কাজটি করবে। নবিজি (সা.) নিজেও এ রকমই করতেন। আবু মুসা আশআরি (রা.) থেকে বর্ণিত নবিজি (সা.) বলেছেন,
إِنِّي وَاللَّهِ إِنْ شَاءَ اللَّهُ لاَ أَحْلِفُ عَلَى يَمِينٍ فَأَرَى غَيْرَهَا خَيْرًا مِنْهَا إِلاَّ كَفَّرْتُ عَنْ يَمِينِي وأَتَيْتُ الَّذِي هُوَ خَيْرٌ আল্লাহর কসম! ইনশাআল্লাহ কোন বিষয়ে কসম করার পর তার বিপরীত কাজ উত্তম মনে হলে আমি কাফফারা দেই এবং উত্তমটিই করি। (সহিহ বুখারি, সহিহ মুসলিম)