ইবনে তুফাঈল ছিলেন একজন মুসলিম বহুবিদ্যা- বিশারদ। তিনি একাধারে লেখক, দার্শনিক, ধর্মতত্ত্ববিদ, চিকিৎসক, জ্যোতির্বিজ্ঞানী ও উজির ছিলেন। তিনি বিশ্বের প্রথম দার্শনিক উপন্যাস বা দর্শন ভিত্তিক উপন্যাস "হাই ইবনে ইয়াকজান" রচনার জন্য খ্যাতি লাভ করেছিলেন। পাশ্চাত্য জগতে তিনি "ফিলোসফিকাল অটোডিডাকটাস" নামে পরিচিত। একজন চিকিৎসক হিসেবে তিনি ব্যবচ্ছেদ ও ময়নাতদন্তের প্রাথমিক সমর্থক ছিলেন। যা তিনি তাঁর উপন্যাসেও প্রকাশ করেছেন।
ইবনে তুফাঈল ১১০৫ সালে স্পেনের আন্দালুসিয়া'র গ্রানাডায় জন্মগ্রহণ করেন। আরব দার্শনিক ইবনে বাজাহ্ (১০৮৫-১১৩৮) এর কাছে তিনি দীক্ষিত হন। তিনি পারিবারিক-ভাবে আরবের কায়স গোত্রের মানুষ ছিলেন। তিনি ১১৫৪ সালে সেউটা এবং ট্যাঙ্গিয়ারের শাসক-সহ বেশ কয়েকটি নেতার সচিব ছিলেন। তিনি গ্রানাডার শাসকের সচিব হিসেবেও কাজ করেছিলেন। পরে তিনি আলমোহাদ খলিফা আবু ইয়াকুব ইউসুফ (১১৩৫-১১৮৪) এর উজির এবং চিকিৎসক হিসেবেও কাজ করেছিলেন। যার কাছে তিনি ১১৬৯ সালে তার নিজের ভবিষ্যতের উত্তরসূরি হিসেবে ইবনে রুশদকে (১১২৬-১১৯৮) সুপারিশ করেছিলেন।
ইবনে তুফায়েল ১১৮২ সালে অবসর গ্রহণের পর ইবনে রুশদ উত্তরসূরি হন। এর কয়েক বছর পর ইবনে তুফায়েল ১১৮৫ সালে মরক্কোতে মারা যান। জ্যোতির্বিজ্ঞানী নুর আদ-দ্বীন আল-বিত্রুজিও (আনুঃ ১১৩৫-১২০৪) ইবনে তুফাইলের শিষ্য ছিলেন। আল-বিত্রুজি জ্যোতির্বিজ্ঞানের অ্যারিস্টটল (খ্রিষ্টপূর্ব ৩৮৪-৩২২) এর পদ্ধতি অনুসরণ করার জন্য তাঁর দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিলেন। কারণ, তিনি মূলত জ্যোতির্বিজ্ঞানের ক্লডিয়াস টলেমী (খ্রিষ্টপূর্ব ১৮০-১০০) এর পদ্ধতি অনুসরণ করেছিলেন।
অনেক ইসলামী দার্শনিক, লেখক, চিকিৎসক এবং জ্যোতির্বিজ্ঞানী ইবনে তুফাইল এবং তার কাজ দ্বারা প্রভাবিত হয়েছেন। এই ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছে নূর আদ-দ্বীন আল-বিত্রুজি (আনুঃ ১১৩৫-১২০৪), আব্দুল-ওয়াহিদ আল-মাররাকুশি ( ১১৮৫-১২৫০), ইবনে আল-খাতিব (১৩১৩-১৩৭৪), আহমেদ মোহাম্মদ আল-মাক্কারি (১৫৭৭-১৬৩২) সহ আরও অনেকে।