Islamic News BD - The Lesson of Peace
মুসলিম উম্মাহর বিভক্তির সমাধান
বুধবার, ২৬ জুন ২০২৪ ০০:৪২ পূর্বাহ্ন
Islamic News BD - The Lesson of Peace

Islamic News BD - The Lesson of Peace

ঐক্য বলতে সাধারণত আমরা বুঝি একতা, ভ্রাতৃত্ব, সৌহার্দ্যপূর্ণ বন্ধন। আর মুসলিম ঐক্য বলতে বুঝায় দেশ-জাতি, ভাষা,বর্ণ ও অঞ্চল ভেদাভেদ থেকে মুক্ত হয়ে সকল মুসলিমরা নিজেদের স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে সমগ্র মুসলিম বিশ্ব একাত্মতা পোষণ করা। অর্থাৎ বিশ্বের সকল মুসলিম একটি দেহের ন্যায় আবদ্ধ হওয়া, যেখানে থাকবে না কোন ব্যক্তি স্বার্থ। সবাই ভৌগোলিকভাবে দূরে থাকলেও সম্পর্ক হবে এক ও অভিন্ন।

পবিত্র কুরআন মাজিদে মহান আল্লাহ তায়ালা তায়ালা ইরশাদ করেন, ‘হে মুমিনগণ! তোমারা আল্লাহর রজ্জুকে আঁকড়ে ধরো (ঐক্যবদ্ধ হও) এবং পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না।’ (সূরা আল-ইমরান : আয়াত ১০৩)। এখানে রজ্জু দ্বারা দ্বীন-ইসলামকে বুঝানো হয়েছে। একে রজ্জু এজন্যই বলা হয়েছে যে, এক দিকে আল্লাহর সাথে ঈমানদার লোকদের সস্পর্ক স্থাপন হয় এবং অন্যদিকে সমস্ত মুসলিমরা পরস্পর ঐক্যবদ্ধ ও মিলিত হয়ে একটি দৃঢ় ও শক্তিশালী জাতিতে রূপান্তরিত হয়। এই রজ্জুকে দৃঢ়ভাবে ধারণ করার অর্থ এই যে, এ দ্বীনকে আল্লাহর জমিনে প্রতিষ্ঠা করার জন্য চেষ্টা করা করা এবং এক মুসলমান অপর মুসলমানকে ব্যক্তি স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে বৃহত্তর কল্যাণে প্রতিটি মুসলমানের একাত্মতা ঘোষণা করা অবশ্যই কর্তব্য। সকল মুসলিম জনগোষ্ঠী ভাই-ভাই। এক মুসলমান ভাইয়ের কোন সমস্যা পরিলক্ষিত হলে বা এক মুসলমান নির্যাতিত হলে অপর মুসলমান ভাই তার সাহায্যে এগিয়ে যাবে। কুরআন মাজিদে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘নিশ্চয়ই মুমিনগণ পরস্পর ভাই ভাই।’ (সূরা হুজরাত : আয়াত ১০)। 

কিন্তু পরিতাপের বিষয় হলো সমগ্র মুসলিম বিশ্ব আজ এই দীক্ষা থেকে শত মাইল দূরে সরে গেছে। নিজেদের স্বার্থ হাসিলে আজ মুসলমান পরস্পর ভাইয়ের সম্পর্ক ভাইয়ের সেটা ভুলে গিয়েছে। ঐতিহাসিকভাবে এ বিষয়টি প্রমাণিত যে, যদি কোন জনসমষ্টি, রাষ্ট্র বা গোত্র পরাশক্তির অধিকারী হতে চায়, তবে তাদেরকে ঐক্যবদ্ধ ও নিজেদের মধ্যে দৃঢ় বন্ধনে আবদ্ধ হতে হবে। এই বিষয়টির সঠিক জ্ঞান কাজে লাগিয়ে পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদী ও উপনিবেশবাদী দেশগুলো এবং ইহুদি ও খ্রিস্টানরা তাদের মধ্যকার ঐতিহাসিক শত্রুতাকে ভুলে নিজ স্বার্থ রক্ষার্থে রাজনৈতিক, কূটনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামরিক ও সাংস্কৃতিক বিভিন্ন ক্ষেত্রে একই প্লাটফর্মে সমবেত হয়েছে। আর অন্যদিকে আমাদের মুসলিম দেশগুলো ভৌগলিক, আঞ্চলিক, ভাষাগত, জাতিভিত্তিক ও রাজনৈতিক সীমার বিভাজনেই শুধু বিভক্ত নয় বরং তারা হাজার দলে বিভক্ত হয়ে নিজেদের সকল বীরত্বের ইতিহাস ভুলে যেতে বসেছে। বর্তমানে মুসলিম উম্মাহর মধ্যে অনৈক্য ও অসংহতি মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। বর্তমান পৃথিবীতে প্রায় দুইশো কোটির বৃহৎ একটি মুসলিম জনশক্তি রয়েছে।

পৃথিবীর প্রায় এক-চতুর্থাংশ ভূমি মুসলমানদের দখলে রয়েছে। তবুও বিশ্বের অন্যান্য শক্তির কাছে তারা আজ নত। দেশে দেশে আজ মুসলিমরা লাঞ্ছিত ও নিষ্পেষিত হচ্ছে । মজলুম মানুষের কান্নায় আকাশ ভারী হচ্ছে। কখনো কী ভেবে দেখেছি যে, মুসলমানদের এই অবস্থা হলো কেন? আর এর উত্তরে একমাত্র যে কারণ তা হলো, মুসলিম উম্মাহর ভেতরে ঢুকে গেছে অনৈক্যের বীজ। মুসলিম বিশ্ব আজ শত দলে বিভক্ত। উম্মাহর এই অনৈক্য ও অসংহতি সৃষ্টি করছে মারাত্মক বিষক্রিয়ার। ফলে তারা কাটাচ্ছে মুমূর্ষু অবস্থা।

অনৈক্যের কারণে বর্তমান বিশ্বে মজলুম মুসলিমদের সংখ্যা ক্রমাগত বেড়েই চলছে। বর্তমানে বহির্বিশ্বে মুসলিমরা ক্রমাগত তাদের ন্যায্য অধিকার হারাচ্ছে। নিজ ভূ-খ-ে নিজেরাই দাসে পরিণত হচ্ছে। এমনকি নিজেরাই নিজেদের মধ্যে যুদ্ধে জড়িয়ে যাচ্ছে, যেখানে নিজেরা এক মুসলিম সম্প্রদায় অন্য মুসলিম সম্প্রদায়কে বহিরাগত আক্রমণ থেকে রক্ষা করার কথা ছিলো। ক্রমাগত মজলুম মুসলমানদের নীরব কান্না বেড়েই চলছে। সাম্প্রতিক ফিলিস্তিনের গাজা এলাকায় ইসরাইলি দখলদার বাহিনী যে গণহত্যা তান্ডব চালাচ্ছে, যেখানে মুসলিম বিশ্ব নীরব। মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর সংগঠন ওআইসি, আরবলীগ থেকেও তাদের স্বাধীনতার জন্য কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে না।

পশ্চিমা দেশগুলো যেভাবে ইসরায়েলকে সাপোর্ট দিয়ে আসছে, তার কিয়দংশও যদি মুসলিম বিশ্ব বা ওআইসি, আরবলীগের মতো সংগঠন দিতো তাহলে আজকে এই দূরাবস্থায় পড়তে হতো না। শুধু ফিলিস্তিন নয়, সিরিয়া থেকে শুরু করে, ইরাক, চীন, ভারত, মিয়ানমারসহ বিশ্বের অনেক দেশেই এখন নির্যাতন-নিপীড়নের লক্ষ্যবস্তু হলো মুসলিম সম্প্রদায়। মুসলিম ঐক্য থাকলে আজ ইসরাইল ও পশ্চিমা দেশগুলো এমন সাহস পেত না। সুতরাং এখান থেকেও বুঝা যায় যে,মুসলিম ঐক্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ। উম্মাহের এই ক্রান্তিলগ্নে ঐক্যতার কোন বিকল্প নেই।