Islamic News BD - The Lesson of Peace
হজ যিলহজের প্রথম দশ দিনের আমল
সোমবার, ১২ জুলাই ২০২১ ২৩:০৫ অপরাহ্ন
Islamic News BD - The Lesson of Peace

Islamic News BD - The Lesson of Peace

১. হজ ও উমরা সম্পাদন করা :
এ দুটি হলো এ দশকের সর্বশ্রেষ্ঠ আমল। যারা এ দিনগুলোতে হজ আদায়ের সুযোগ পেয়েছেন তারা যে অনেক ভাগ্যবান তাতে কোনো সন্দেহ নেই। আল্লাহ যাকে তাঁর নির্দেশিত এবং রাসূলুল্লাহ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রদর্শিত পন্থায় হজ বা উমরা করার তাওফীক দান করেন তার পুরস্কার শুধুই জান্নাত। কারণ, আবূ হুরায়রা রাদিআল্লাহু আনহু কর্তৃক বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

এক উমরা থেকে আরেক উমরা এতদুভয়ের মাঝের গুনাহগুলোর কাফফারা এবং মাবরূর হজের প্রতিদান কেবলই জান্নাত।[বুখারী : ১৭৭৩; মুসলিম : ৩৩৫৫]
আর মাবরূর হজ সেটি যা পরিপূর্ণভাবে সম্পাদিত হয় রাসূলুল্লাহ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রদর্শিত পন্থায়। 

২. সিয়াম পালন করা :
মুসলমানের জন্য উচিত হবে যিলহজ মাসের এই মুবারক দিনগুলোতে যত বেশি সম্ভব সিয়াম পালন করা। সাওম আল্লাহর অতি প্রিয় আমল। হাদীসে কুদসীতে সিয়ামকে আল্লাহ নিজের সঙ্গে সম্পৃক্ত করেছেন। আবূ হুরায়রা রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আল্লাহ বলেছেন, সিয়াম ছাড়া আদম সন্তানের প্রতিটি কাজই তার নিজের জন্য; শুধু সিয়াম ছাড়া। কারণ, তা আমার জন্য। তাই আমিই এর প্রতিদান দেব। সিয়াম ঢাল স্বরূপ।[বুখারী : ১৯০৪; মুসলিম : ২৭৬২]


সাওম যে এক বড় মর্যাদাসম্পন্ন ও আল্লাহর কাছে প্রিয় আমল তা আমরা অনুধাবন করতে পারি আমরাএ হাদীস থেকে। তবে রাসূলুল্লাহ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরাফার দিনের সাওমের প্রতি বিশেষভাবে গুরুত্বারোপ করেছেন এবং এর মর্যাদা বর্ণনা করেছেন। আবূ কাতাদা রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আরাফার দিনের সাওম আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বিগত ও আগত বছরের গুনাহের কাফফারা হিসেবে গ্রহণ করে থাকেন। [মুসলিম : ১১৬৩]
এ হাদীসের ভিত্তিতে যিলহজের নয় তারিখ সাওম পালন করা সুন্নত। সাওমের জন্য এ তিন দিনকে নির্দিষ্ট করার কোনো প্রমাণ বা ভিত্তি নেই। যিলহজের ১ থেকে ৯ তারিখে যে কোনো দিন বা পূর্ণ নয় দিন সাওম পালন করা যেতে পারে।

৩. সালাত কায়েম করা :
সালাত অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ, সম্মানীত ও মর্যাবান আমল। তাই এ দিনগুলোতে আমাদের সবার চেষ্টা করা উচিত ফরয সালাতগুলো জামাতে আদায় করতে। আরও চেষ্টা করা দরকার বেশি বেশি নফল সালাত আদায় করতে। কারণ, নফল সালাতের মাধ্যমে বান্দা আল্লাহর সবচে বেশি নৈকট্য হাসিল করে। আবূ হুরাইরা রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

আল্লাহ তাআলা বলেন, যে ব্যক্তি আমার কোনো অলির সঙ্গে শত্রুতা রাখে, আমি তার সাথে যুদ্ধ ঘোষণা করি। আমার বান্দা ফরয ইবাদতের চাইতে আমার কাছে অধিক প্রিয় কোনো ইবাদতের মাধ্যমে আমার নৈকট্য লাভ করতে পারে না। আমার বান্দা নফল ইবাদত দ্বারাই সর্বদা আমার নৈকট্য অর্জন করতে থাকে। এমনকি অবশেষে আমি তাকে আমার এমন প্রিয়পাত্র বানিয়ে নেই যে, আমি তার কান হয়ে যাই, যা দিয়ে সে শুনে। আমি তার চোখ হয়ে যাই, যা দিয়ে সে দেখে। আর আমিই তার হাত হয়ে যাই, যা দিয়ে সে ধরে। আমি তার পা হয়ে যাই, যা দিয়ে সে চলে। সে আমার কাছে কোনো কিছু চাইলে আমি অবশ্যই তাকে তা দান করি। আর যদি সে আমার কাছে আশ্রয় চায় আমি তাকে অবশ্যই আশ্রয় দেই। আমি যে কোনো কাজ করতে চাইলে তাতে কোনো রকম দ্বিধা-সংকোচ করি না, যতটা দ্বিধা-সংকোচ করি মুমিন বান্দার প্রাণহরণে। সে মৃত্যুকে অপছন্দ করে থাকে অথচ আমি তার বেঁচে থাকাকে অপছন্দ করি। [বুখারী : ৬৫০২]

৪. দান-সাদাকা করা :
এ দিনগুলোতে যে আমলগুলো বেশি বেশি দরকার তার মধ্যে অন্যতম হলো সাদাকা। আল্লাহ তাআলা মানুষকে সাদাকা দিতে উদ্বুদ্ধ করেছেন। ইরশাদ হয়েছে :

<হে মুমিনগণ, আমি তোমাদেরকে যে রিযক দিয়েছি তা হতে ব্যয় কর, সে দিন আসার পূর্বে, যে দিন থাকবে না কোনো বেচাকেনা, না কোনো বন্ধুত্ব এবং না কোনো সুপারিশ। আর কাফিররাই যালিম। {সূরা আল-বাকারা, আয়াত : ২৫৪}
আবূ হুরায়রা রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

সাদাকা সম্পদকে কমায় না, ক্ষমার মাধ্যমে আল্লাহ বান্দার মর্যাদা বৃদ্ধি করেন এবং কেউ আল্লাহর জন্য বিনয়ী হলে আল্লাহ তাকে উঁচু করেন। [মুসলিম : ৬৭৫৭]

৫. তাকবীর, তাহমীদ ও তাসবীহ পড়া :
এসব দিনে তাকবীর (আল্লাহু আকবার), তাহমীদ (আলহামদু লিল্লাহ), তাহলীল (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ) ও তাসবীহ (সুবহানাল্লাহ) পড়া সুন্নত। এ দিনগুলোয় যিকর-আযকারের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে, হাদীসে এসেছে, আবদুল্লাহ ইবন উমর রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

এ দশ দিনে নেক আমল করার চেয়ে আল্লাহর কাছে বেশি প্রিয় ও মহান কোনো আমল নেই। তাই তোমরা এ সময়ে তাহলীল (লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ), তাকবীর (আল্লাহু আকবার) ও তাহমীদ (আল-হামদুলিল্লাহ) বেশি বেশি করে পড়। [বাইহাকী, শুআবুল ঈমান : ৩৪৭৪; মুসনাদ আবী আওয়ানা : ৩০২৪] তাকবীরের শব্দগুলো নিম্নরূপ :

(আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার লা ইলাহা ইল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার ওয়া লিল্লাহিল হামদ।) উল্লেখ্য, বর্তমানে তাকবীর হয়ে পড়েছে একটি পরিত্যাক্ত ও বিলুপ্তপ্রায় সুন্নত। আমাদের সকলের কর্তব্য এ সুন্নতের পুনর্জীবনের লক্ষ্যে এ সংক্রান্ত ব্যাপক প্রচারণা চালানো। হাদীসে উল্লিখিত হয়েছে,

যে ব্যক্তি আমার সুন্নতসমূহ থেকে একটি সুন্নত পুনর্জীবিত করল, যা আমার পর বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে, তাকে সে পরিমাণ সওয়াব দেওয়া হবে, যে পরিমাণ তার ওপর (সে সুন্নতের ওপর) আমল করা হয়েছে। এতে (আমলকারীদের) সওয়াব হতে বিন্দুমাত্র কমানো হবে না। [তিরমিযী : ৬৭৭]

যিলহজ মাসের সূচনা থেকে আইয়ামে তাশরীক শেষ না হওয়া পর্যন্ত এ তাকবীর পাঠ করা সকলের জন্য ব্যাপকভাবে মুস্তাহাব। তবে বিশেষভাবে আরাফা দিবসের ফজরের পর থেকে মিনার দিনগুলোর শেষ পর্যন্ত অর্থাৎ যেদিন মিনায় পাথর নিক্ষেপ শেষ করবে সেদিন আসর পর্যন্ত প্রত্যেক সালাতের পর এ তাকবীর পাঠ করার জন্য বিশেষ জোর দেওয়া হয়েছে।

 

৬. পশু কুরবানী করা :
এ দিনগুলোর দশম দিন সামর্থ্যবান ব্যক্তির জন্য কুরবানী করা সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাঁর নবীকে কুরবানী করতে নির্দেশ দিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে,

আপনি আপনার প্রতিপালকের উদ্দেশ্যে সালাত আদায় করুন ও কুরবানী করুন। {সূরা আল-কাউসার, আয়াত : ০২}
এই দশদিনের অন্যতম সেরা প্রিয় আমল হলো কুরবানী। কুরবানীর পশু জবাই ও গরিবদের মধ্যে এর গোশত বিতরণের মাধ্যমে আল্লাহর বিশেষ নৈকট্য লাভ হয়। এর দ্বারা গরিবদের প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ পায় ।