Islamic News BD - The Lesson of Peace
ল্লাহর সন্তুষ্টিতে দান-সদকা
বৃহস্পতিবার, ১৫ আগস্ট ২০২৪ ২২:৪২ অপরাহ্ন
Islamic News BD - The Lesson of Peace

Islamic News BD - The Lesson of Peace

মহান আল্লাহ তা'য়ালা কর্তৃক মানুষের প্রতি এক বিরাট এহসান হল মানুষ তার রবের সন্তুষ্টিতে দান-সদকা করা। এটা মানুষের জন্য আল্লাহর বিশেষ এহসান। কেননা এর মধ্য দিয়ে মহান আল্লাহ তায়ালা মানুষের জন্য রেখেছেন অনেক কল্যাণ। দান-সদকার ফলে আল্লাহ তায়ালা বান্দার গুণাহ মাফ করে থাকেন, আয়ের মধ্যে বরকত দেন, পারস্পরিক ভালোবাসা বৃদ্ধি করেন ও বিভিন্ন বিপদ থেকে হেফাজত করেন। তাছাড়া দানের ফলে ঐক্য প্রতিষ্ঠায় সহায়ক হয়ে থাকে, শান্তি-শৃঙ্খলা বৃদ্ধি পায় এবং সুন্দর ও সৌহার্দ্য সমাজ প্রতিষ্ঠায় এর ভূমিকা অত্যধিক।

মহাগ্রন্থ আল-কুরআনে বর্ণিত হয়েছে যে, ‘নিশ্চয় দানশীল পুরুষগণ ও দানশীল নারীগণ এবং আল্লাহকে উত্তম ঋণ দান করে তাদেরকে দেয়া হবে বহুগুণ বেশী এবং তাদের জন্য রয়েছে সম্মানজনক পুরস্কার।’ (সূরা-হাদিদ: ১৮)। উক্ত আয়াতে মহান আল্লাহ তা'য়ালা দানশীল নারী-পুরুষদের জন্য কল্যাণের সুসংবাদ দিয়েছেন। তাছাড়া আল্লাহ প্রদত্ব উক্ত এহসানের মধ্যে সর্বপ্রথম যে দানের কথা আসে তা হল যাকাত। যাকাত হচ্ছে দান-সদকার মধ্যে একটি ফরজ পর্যায়ের ইবাদাত যা কেবল সামর্থ্যবানদের উপর ফরজ করা হয়েছে। আর এই দানের ফলে বান্দার ধন-সম্পদ পবিত্র হয়। আল্লাহ তা'য়ালা বলেন, ‘আর তোমরা সালাত প্রতিষ্ঠা করো ও যাকাত দাও এবং রুকূ’কারীদের সাথে রুকূ করো।’ (সূরা-বাকারাহ : ৪৩)। 

দানের কারণে কখনো সম্পদ কমে না; বরং বৃদ্ধি পেতে থাকে। বাহ্যিকতায় সুদের বৃদ্ধি দেখলেও প্রকৃত অর্থে সূদে রয়েছে মহা ক্ষতি। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহ সূদকে নিশ্চিহ্ন করেন এবং দানকে বর্ধিত করেন।’ (সূরা-বাকারাহ: ২৭৬)।

দান-সদকা এমন একটি বিষয় যা আল্লাহর সন্তুষ্টিতে যদি কোনো ক্ষুদ্র কাজও করা হয়, তাও কিন্তু সদকা হিসেবে গণ্য হবে। সুবহানআল্লাহ! এমনকি নিজের প্রতিপাল্য ও অধীনস্থ পরিবার-পরিজনের ভরণপোষণে যে অর্থ আমরা ব্যয় করি, তাও কিন্তু সদকা হিসেবে বিবেচিত। এই ক্ষেত্রে যে সাওয়াব মিলে তা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে রাসূলুল্লাহ (সা.)। উক্ত প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন এভাবে: তুমি যা কিছুই ব্যয় করো, সেটাই তোমার জন্য সদকা। এমনকি তোমার স্ত্রীর মুখে যে নলাটি তুমি তুলে দাও সেটাও। (সহীহ বুখারী : ৫৩৫৪)।

দানের বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি হাদিসে বর্ণিত হয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি হালাল উপায়ে অর্জিত মাল সদকা করে, (আল্লাহ তা’আলা হালাল, অর্থাৎ পবিত্রকেই কবুল করেন)।, তাহলে উক্ত সদকা সে আল্লাহর হাতে দিল। আল্লাহ তা'য়ালা তাকে এইভাবে লালন-পালন করেন, যেভাবে তোমরা ঘোড়ার বাচ্চা কিংবা উটের বাচ্চা লালন-পালন কর। শেষ পর্যন্ত সেই সদকা (বৃদ্ধি পেয়ে)। পর্বতের সমান হইয়ে যায়। (মুয়াত্তা মালিক)।

অধিকাংশই অর্থ-সম্পদ দান করাকে কেবল দান-সদকা হিসেবে বুঝে থাকেন। মূলত তা নয়; বরং কাউকে কথা দিয়ে সহযোগিত করা, কারো কাজে সহায়তা করা, পথহারা ব্যক্তিকে পথ দেখিয়ে দেওয়া, অসুস্থ ব্যক্তিকে সেবা করা, অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে যাওয়া, দু'জনের মধ্যে মিমাংসা করা, স্ত্রীর সাথে মুচকি হাসা, স্ত্রীর মুখে খাবার তুলে দেওয়া, হাসি মুখে কথা বলা, অসহায় ব্যক্তিকে সাহায্য করা, মাজলুমের পাশে দাঁড়ানো, উত্তম পরামর্শ দিয়ে পাশে থাকা, ভালো ব্যবহার ও উত্তম আচরণ করা, অতিথি সেবা, পথের কষ্টদায়ক বস্তু সরিয়ে ফেলা ইত্যাদি যত প্রকার কল্যাণমুখি কাজ রয়েছে সব ক্ষেত্রে আল্লাহর সন্তুষ্টিতে করা কাজগুলো সদকা হিসেবে বিবেচত।

দান-সদকার এতই গুরুত্ব থাকার আরো একটি বিশেষ কারণ হল, বান্দার উপর আল্লাহর রাগান্বিত অবস্থায় যদি কোনো বান্দা দান-সদকা করেন, তাহলে মহান আল্লাহ তা'য়ালা রাগকে ছুড়ে ফেলে বান্দার উপর খুশি হয়ে যান এবং রহমত বর্ষণ করেন। সুবহানআল্লাহ! তবে দান-সদকার পর কখনো খোটা দিয়ে কষ্ট দিতে নেই, কখনো প্রচার করতে নেই, কখনো গর্ব করতে নেই। এই বিষয়ে আল্লাহর নির্দেশনা রয়েছে— ‘যারা আল্লাহর পথে ধন-সম্পদ ব্যয় করে। তারপর যা ব্যয় করে তা প্রচার করে না এবং কোন প্রকার কষ্টও দেয় না , তাদের জন্য প্রতিদান রয়েছে তাদের রবের নিকট । আর তাদের কোন ভয় নেই এবং তারা চিন্তিতও হবে না ।’ (সূরা-বাকারাহ : ২৬২)।

সুতরাং, প্রত্যেকের উচিত বেশি বেশি দান-সদকা করা এবং দান-সদকার কাজে উৎসাহিত করা। দান-সদকার কাজে উৎসাহিত করা ব্যক্তিদের আল্লাহ তা'য়ালা পুরস্কৃত করবেন। আল্লাহ তা'য়ালা বলেন, ‘কল্যাণ আছে যে নির্দেশ দেয় সাদকা, সৎকাজ ও মানুষের মধ্যে শান্তি স্থাপনের; আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় কেউ তা করলে তাকে অবশ্যই আমরা মহা পুরস্কার দেব।’ (সূরা-নিসা : ১১৪)।