আল্লাহ দুনিয়াতে মানুষকে বিভিন্ন অবস্থায় রাখেন। কাউকে সুখে রাখেন, কাউকে দুঃখ-দুর্দশায় রাখেন, কাউকে দারিদ্র্য দেন, আবার কাউকে সমৃদ্ধি দান করেন, কাউকে নিরাপদে রাখেন, কাউকে বিপদ-আপদে রাখেন। এভাবে আল্লাহ মানুষকে পরীক্ষা করেন। যারা বিপদে থাকে তারা যেমন ধৈর্যধারণ, আল্লাহর কাছে প্রার্থনার মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারে, যারা সুখ ও নিরাপত্তা লাভ করে, সমৃদ্ধির মধ্যে থাকে, তাদের কর্তব্য হয়ে দাঁড়ায় বিপদগ্রস্তদের সাহায্যে সর্বশক্তিতে এগিয়ে যাওয়া। আল্লাহ যতটুকুই সামর্থ্য দিয়েছেন তা নিয়ে বিপদগ্রস্ত বান্দাদের পাশে দাঁড়ানো। এভাবে তারা আল্লাহর নেয়ামতের হক ও শোকর আদায় করতে পারে। আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَّ لٰكِنۡ لِّیَبۡلُوَكُمۡ فِیۡ مَاۤ اٰتٰىكُمۡ فَاسۡتَبِقُوا الۡخَیۡرٰتِ তিনি তোমাদেরকে যা দিয়েছেন, তাতে তোমাদেরকে পরীক্ষা করতে চান। সুতরাং তোমরা ভাল কাজে প্রতিযোগিতা কর। (সুরা মায়েদা: ৪৮)
অন্যের সাহায্যে এগিয়ে গেলে মানুষ আল্লাহর সাহায্য লাভ করে। আল্লাহ তার ওপর সন্তুষ্ট হন এবং তার নেয়ামত আরও বাড়িয়ে দেন। কারণ এর মাধ্যমে আল্লাহর নেয়ামতের প্রতি তার কৃতজ্ঞতা ও শুকরিয়া প্রকাশ পায়। আল্লাহ তার কৃতজ্ঞ বান্দাদের নেয়ামত বাড়িয়ে দেন আর অকৃতজ্ঞরা শাস্তির সম্মুখীন হয়। আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَ اِذۡ تَاَذَّنَ رَبُّكُمۡ لَئِنۡ شَكَرۡتُمۡ لَاَزِیۡدَنَّكُمۡ وَ لَئِنۡ كَفَرۡتُمۡ اِنَّ عَذَابِیۡ لَشَدِیۡدٌ স্মরণ কর, যখন তোমাদের প্রতিপালক ঘোষণা করেন, যদি তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর তাহলে আমি অবশ্যই তোমাদের জন্য (আমার নি য়ামাত) বৃদ্ধি করে দেব, আর যদি তোমরা অকৃতজ্ঞ হও (তবে জেনে রেখ, অকৃতজ্ঞদের জন্য) আমার শাস্তি অবশ্যই কঠিন। (সুরা ইবরাহিম: ৭)
আবু হোরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, যে ব্যক্তি কোন ঈমানদারের দুনিয়া থেকে কোন বিপদ দূর করে দেবে, আল্লাহ তা আলা বিচার দিবসে তার কোনো বিপদ দূর করে দেবেন। যে ব্যক্তি কোন দুঃস্থ লোকের অভাব দূর করবে, আল্লাহ তাআলা দুনিয়া ও আখিরাতে তার দুরবস্থা দূর করবেন। যে ব্যক্তি কোন মুসলিমের দোষ-ত্রুটি লুকিয়ে রাখবে আল্লাহ তা আলা দুনিয়া ও আখিরাতে তার দোষ-ত্রুটি লুকিয়ে রাখবেন। বান্দা যতক্ষণ তার ভাই এর সহযোগিতায় আত্মনিয়োগ করে আল্লাহ ততক্ষণ তার সহযোগিতা করতে থাকেন। (সহিহ মুসলিম)
আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত আরেকটি হাদিসে নবিজি (সা.) বিপদে-আপদে কারো পাশে দাঁড়ানো, কোনো অভাবগ্রস্তের প্রয়োজন পূরণ করাকে মসজিদে নববিতে এক মাস ইতিকাফের করার চেয়েও উত্তম বলেছেন। আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় সেই ব্যক্তি যে মানুষের জন্য সবচেয়ে বেশি উপকারী। আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয়তম আমল হলো, একজন মুসলমানের হৃদয় আনন্দে পরিপূর্ণ করা অথবা তার কোনো কষ্ট দূর করে দেওয়া। তার পক্ষ থেকে তার ঋণ আদায় করে দেওয়া অথবা তার ক্ষুধা দূর করে দেওয়া। এই মসজিদে এক মাস ইতিকাফ করার চাইতে কোনো মুসলিম ভাইয়ের প্রয়োজন পূরণ করা আমার কাছে বেশি পছন্দের। (তাবরানি)