Islamic News BD - The Lesson of Peace
যেভাবে আপনি ধূমপান ছাড়বেন
সোমবার, ২৬ জুলাই ২০২১ ০২:০২ পূর্বাহ্ন
Islamic News BD - The Lesson of Peace

Islamic News BD - The Lesson of Peace

ধূমপানের উপরোক্ত ব্যক্তিগত ও সামাজিক অপকার জানার পর আশা তো আপনি এখনি ধূমপান থেকে তাওবা করতে প্রস্তুত। তবে এ ক্ষেত্রে কয়েকটি ব্যাপার আপনাকে বিশেষ সহযোগিতা করবে যা নিম্নরূপ:
ক. আল্লাহ তা‘আলার ওপর পূর্ণ ভরসা রেখে ধূমপান ত্যাগের ব্যাপারে কঠিন প্রতিজ্ঞা তথা তাওবা করতে হবে এবং এ ব্যাপারে পূর্ণ নিষ্ঠার সাথে আল্লাহ তা‘আলার সহযোগিতা চেয়ে তাঁর কাছে বিশেষভাবে ফরিয়াদ করতে হবে।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

“হে ঈমানদারগণ! তোমরা সবাই আল্লাহ তা‘আলার নিকট প্রত্যাবর্তন করো, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পারো”। [সুরা আন-নূর, আয়াত: ৩১]
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,

“তিনিই তো উত্তম যিনি আর্তের আহ্বানে সাড়া দেন যখন সে তাঁকে ডাকে, বিপদ-আপদ দূরীভূত করেন এবং তোমাদেরকে পৃথিবীতে প্রতিনিধি করেন। আল্লাহ তা‘আলার পাশাপাশি অন্য কোনো মা‘বূদ আছে কি? তোমরা তো অতি সামান্যই উপদেশ গ্রহণ করে থাকো”। [সুরা আন-নামল, আয়াত: ৬২]
খ. ধূমপানের অপকারগুলো দৈনিক নিজে ভাবুন এবং নিজ বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী ও স্ত্রী-সন্তানদের সামনে এগুলো নিয়ে আলোচনা করুন।
গ. ধূমপায়ীদের সঙ্গ ছেড়ে দিন। অন্ততপক্ষে ধূমপানের মজলিস থেকে বহু দূরে এবং কল্যাণকর কাজে সর্বদা ব্যস্ত থাকুন।
ঘ. ধূমপানকে ঘৃণা করতে চেষ্টা করুন এবং সর্বদা এ কথা ভাবুন যে, কেউ একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টির জন্য কোনো হারাম বস্তু পরিত্যাগ করলে আল্লাহ তা‘আলা এর প্রতিদান হিসেবে তাকে এর চাইতে আরো উন্নত ও কল্যাণকর বস্তু দান করবেন।
আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টির জন্য কেউ কোনো হারাম বস্তু পরিত্যাগ করলে তা সহজেই পরিত্যাগ করা সম্ভব। তবে আল্লাহ তা‘আলা সর্ব প্রথম আপনাকে অবশ্যই পরীক্ষা করে দেখবেন যে, আপনি উক্ত হারাম বস্তু পরিত্যাগে কতটুকু সত্যবাদী। তখন আপনি এ ব্যাপারে ধৈর্য ধরতে পারলে তা পরিশেষে সত্যিই মজায় রূপান্তরিত হবে।
ধূমপান পরিত্যাগ করলে প্রথমতঃ আপনার গভীর ঘুম নাও আসতে পারে। রক্তে ঘাটতি দেখা দিবে। দীর্ঘ সময় কোনো কিছু নিয়ে গভীরভাবে ভাবতে পারবেন না। রাগ ও অস্থিরতা বেড়ে যাবে। নাড়ির সাধারণ গতি কমে যাবে। ব্রেইন কেন যেন হালকা নিস্তেজ হয়ে পড়বে। ধূমপানের জন্য অন্তর কিলবিল করতে থাকবে। তবে তা কিছু দিনের মধ্যে ঠিক হয়ে যাবে।
ঙ. কখনো মনের ভেতর ধূমপানের ইচ্ছে জন্মিলে সাথে সাথে মিসওয়াক করুন অথবা চুইঙ্গাম খেতে থাকুন।
চ. চা ও কপি খুব কমই পান করুন, বরং এরই পরিবর্তে সাধ্যমত ফল-ফলাদি খেতে চেষ্টা করুন।
ছ. প্রতিদিন নাস্তার পর এক গ্লাস লেবু বা আঙ্গুরের শরবত পান করুন। তা হলে ধূমপানের চাহিদা একটু করে হলেও হ্রাস পাবে।
জ. যত্ন সহকারে নিয়মিত ফরয সালাতগুলো আদায় করুন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

“আর নামায কায়েম করো। কারণ, নামাযই তো তোমাকে অশ্লীল ও মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখবে। আল্লাহ তা‘আলার স্মরণই তো সর্বশ্রেষ্ঠ। তোমরা যাই করছো আল্লাহ তা‘আলা তা সবই জানেন”। [সুরা আল-‘আনকাবূত, আয়াত: ৪৫]
ঝ. বেশি বেশি সাওম পালন করার চেষ্টা করুন। কারণ, তা মনোবলকে শক্তিশালী করা ও কুপ্রবৃত্তি মোকাবিলায় বিশেষ সহযোগিতা করবে।
ঞ. বেশি বেশি কুরআন তিলাওয়াত করুন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

“নিশ্চয় এ কুরআন সঠিক পথ প্রদর্শন করে”। [সুরা আল-ইসরা, আয়াত: ৯]
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,

“হে মানব সকল! তোমাদের রবের পক্ষ থেকে তোমাদের নিকট উপদেশ, অন্তরের চিকিৎসা এবং মুমিনদের জন্য হিদায়াত ও রহমত এসেছে”। [সূরা ইউনুস, আয়াত: ৫৭]
চ. বেশি বেশি যিকির করুন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

“জেনে রাখো, একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার যিকির বা স্মরণেই মানব অন্তর প্রশান্তি লাভ করে”। [সূরা আর-রা‘দ, আয়াত: ২৮]
ছ. সর্বদা আল্লাহ তা‘আলার নিকট শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করুন। কারণ, শয়তানই তো গুনাহসমূহকে মানব সম্মুখে সুশোভিত করে দেখায়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,    

“আল্লাহর কসম! আমরা তোমার পূর্বেও বহু জাতির নিকট রাসূল প্রেরণ করেছি; কিন্তু শয়তান তাদের অশোভনীয় কর্মকান্ডকে তাদের নিকট সুশোভিত করে দেখিয়েছে। সুতরাং শয়তান তো আজ তাদের বন্ধু অভিভাবক এবং তাদেরই জন্য (কিয়ামতের দিন) যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি রয়েছে”। [সূরা আন-নাহল, আয়াত: ৬৩]
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,

“শয়তানের কুমন্ত্রণা যদি তোমাকে প্ররোচিত করে তা হলে তুমি আল্লাহ তা‘আলার আশ্রয় কামনা করো। তিনিই তো সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞ”।                                                                         [সূরা আল-আ‘রাফ, আয়াত: ২০০]
জ. নেককার লোকদের সাথে চলুন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

“তুমি সর্বদা নিজকে ওদের সংস্রবেই রাখবে যারা সকাল-সন্ধ্যায় নিজ প্রভুকে ডাকে একমাত্র তাঁরই সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে। কখনো তাদের থেকে নিজ দৃষ্টি ফিরিয়ে নিবে না পার্থিব জীবনের সৌন্দর্য কামনায়। তবে ওদের অনুসরণ কখনোই করো না যাদের অন্তর আমি আমার স্মরণ থেকে গাফিল করে দিয়েছি এবং যারা নিজ খেয়াল-খুশীর অনুসরণ করে নিজ কর্মকান্ডে সীমাতিক্রম করে”। [সূরা আল-কাহাফ, আয়াত: ২৮]
একবার দু’বার চেষ্টা করে ব্যর্থ হলেও কখনো নিরাশ হবেন না। কারণ, নিরাশ হওয়া কাফিরের পরিচয়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

“আল্লাহ তা‘আলার রহমত থেকে তোমরা কখনো নিরাশ হয়ো না। কারণ, একমাত্র কাফিররাই তো আল্লাহ তা‘আলার রহমত থেকে নিরাশ হয়ে থাকে”। [সূরা ইউসুফ, আয়াত: ৮৭]
আপনি দ্রুত ধূমপান ছাড়তে না পারলেও অন্ততপক্ষে তা কমাতে চেষ্টা করুন এবং তা প্রকাশ্য পান করবেন না তা হলে কোনো এক দিন আপনি তা সম্পূর্ণরূপে ছাড়তে পারবেন।