আল্লাহ রাব্বুল আলামিন গাফুরুর রাহিম অর্থাৎ ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু। মানুষ শয়তানের ধোঁকায় পড়ে অনেক গুনাহ করে ফেলার পরও যদি যথাযথভাবে লজ্জিত হয়, গুনাহ ছেড়ে দেয় এবং তওবা করে, তাহলে তিনি তাকে ক্ষমা করে দেন। তাই অনেক গুনাহ করে ফেললেও আল্লাহ তাআলার রহমত থেকে নিরাশ হওয়া যাবে না। তার রহমত ও ক্ষমাশীলতার ওপর ভরসা রাখতে হবে। আল্লাহ তাআলা বলেন,
قُلْ يٰعِبَادِيَ الَّذِيْنَ اَسْرَفُوْا عَلٰۤي اَنْفُسِهِمْ لَا تَقْنَطُوْا مِنْ رَّحْمَةِ اللهِ اِنَّ اللهَ يَغْفِرُ الذُّنُوْبَ جَمِيْعًا اِنَّهٗ هُوَ الْغَفُوْرُ الرَّحِيْمُ. বলো, হে আমার বান্দাগণ, যারা নিজদের উপর বাড়াবাড়ি করেছ তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। অবশ্যই আল্লাহ সব পাপ ক্ষমা করে দেবেন। নিশ্চয় তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। (সুরা জুমার: ৫৩)
وَ مَنْ يَّعْمَلْ سُوْٓءًا اَوْ يَظْلِمْ نَفْسَهٗ ثُمَّ يَسْتَغْفِرِ اللهَ يَجِدِ اللهَ غَفُوْرًا رَّحِيْمًا. যে ব্যক্তি মন্দ কাজ করবে কিংবা নিজের ওপর জুলুম করবে তারপর আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইবে, সে আল্লাহকে পাবে ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। (সুরা নিসা: ১১০)
গুনাহ হয়ে গেলে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে। গুনাহের বদলে আখেরাতের তো নয়ই, দুনিয়ার শাস্তিও প্রার্থনা করা যাবে না। আখেরাতের বদলে দুনিয়ায় শাস্তি দিয়ে দিন এ রকম কামনা বা প্রার্থনা করতেও নবিজি (সা.) নিষেধ করেছেন। এ রকম প্রার্থনা বিপদের কারণ হতে পারে।
হজরত আনাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) একজন অসুস্থ সাহাবিকে দেখতে গেলেন। তিনি রোগে ভুগে এত দুর্বল হয়ে পড়েছিলেন যে তাকে পাখির ছানার মতো লাগছিলো।
আল্লাহর রাসুল (সা.) তাকে বললেন, আপনি কি কোনো বিষয়ে প্রার্থনা করছিলেন অথবা আল্লাহর কাছে বিশেষভাবে কিছু চেয়েছিলেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ। আমি বলেছিলাম, হে আল্লাহ! আপনি পরকালে আমাকে যে সাজা দেবেন তা দুনিয়াতেই দিয়ে দিন।
এ কথা শুনে আল্লাহর রাসুল (সা.) বললেন, সুবহানাল্লাহ, আপনার কি তা বহন করার সামর্থ্য আছে! অথবা তিনি বললেন, আপনি তো তা সহ্য করতে পরবেন না।
رَبَّنَا آتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَفِي الآخِرَةِ حَسَنَةً وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ উচ্চারণ: রাব্বানা আতিনা ফিদ-দুনিয়া হাসানাহ ওয়া ফিল-আখিরাতি হাসানাহ ওয়া কিনা আজাবান-নার
অর্থ: হে আমাদের রব, আমাদের দুনিয়াতে কল্যাণ দিন, আখেরাতেও কল্যাণ দিন এবং আগুনের আজাব থেকে রক্ষা করুন।
তারপর নবিজি (সা.) তিনি তার জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করেন এবং আর আল্লাহ তাকে সুস্থ করে দেন। (সহিহ মুসলিম: ৬৭২৮)
একজন মুসলমানের যেমন দুনিয়াদার হওয়ার সুযোগ নেই, শুধু দুনিয়ার জীবন-সর্বস্ব চিন্তা ভাবনা, কাজকর্ম করার সুযোগ নেই, দুনিয়াবিরাগী হওয়ার শিক্ষাও ইসলাম দেয় না। ইসলাম আখেরাতের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করতে বলে, পাথেয় সংগ্রহ করতে বলে দুনিয়ায় উত্তমরূপে জীবন যাপনের মাধ্যমে।
তাই দোয়া করার সময়ও আখেরাতের কল্যাণের পাশাপাশি দুনিয়ার কল্যাণও প্রার্থনা করা উচিত। এটাই সুন্নত ও নবিজির (সা.) শিক্ষা। আল্লাহর কাছে আখেরাতের বদলে দুনিয়ার শাস্তি বা দুনিয়ার অকল্যাণ প্রার্থনা করা ইসলামের শিক্ষা নয়।
আয়েশা (রা.) বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) জাওয়ামে অর্থাৎ দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণ বা সব মুসলমানদের কল্যাণ প্রার্থনা অন্তর্ভুক্ত থাকে এমন দোয়া পছন্দ করতেন এবং এ রকম দোয়া ছাড়া অন্যান্য দোয়া পরিহার করতেন। (সুনানে আবু দাউদ: ১৪৮২)