আমাদের দেশে অনেক অঞ্চলে সাধারণ মানুষ মনে করেন কবরে মৃত ব্যক্তিকে যেহেতু প্রশ্নোত্তরের জন্য বসানো হবে, তাই কবরে মৃত ব্যক্তির উঠে বসার মতো জায়গা রাখা জরুরি। এই ধারণা থেকে তারা কবর গভীর করে খনন করেন এবং লাশ রেখে প্রায় দুই হাত উঁচুতে বাঁশ ও মাটি দেন যেন মৃত ব্যক্তি ভালোভাবে বসতে পারে।ইসলামি বিশ্বাস অনুযায়ী কবরে প্রশ্নোত্তরের বিষয়টি সঠিক হলেও কবরে মৃতের বসার জায়গা রাখার চেষ্টা করা অপ্রয়োজনীয় ও অনর্থক। কারণ মৃত ব্যক্তিকে বসানো, প্রশ্নোত্তর এসব এই জগতে নয়, বরং বরজখ নামক এক অদৃশ্য জগতে হবে। কাফন-দাফনের বিধানাবলির সাথে এর কোনো সম্পর্ক নেই।বরজখে মৃত ব্যক্তি কীভাবে বসবে, ফেরেশতারা কোথায় থাকবে ইত্যাদি বিষয় নিয়ে আমাদের ভাবার প্রয়োজন নেই। আল্লাহর হুকুম ও কুদরতেই এসব কিছু হবে। সুতরাং কবরে লাশ রাখার পর বেশি ফাঁকা না রেখে বাঁশগুলো লাশের কাছাকাছি রাখাই নিয়ম।কবরের গভীরতা এই পরিমাণ হওয়া উচিত যেন লাশের দুর্গন্ধ না ছড়ায় এবং হিংস্র পশুর আক্রমণ থেকেও লাশ রক্ষা পায়। তাই কবর অন্তত কোমর পরিমাণ গভীর করা উচিত। সম্ভব হলে পূর্ণ দেহ পরিমাণ গভীর করা উত্তম। হজরত ওমর (রা.) ইন্তেকালের আগে তার কবর একজন মানুষের দেহের দৈর্ঘ্য পরিমাণ গভীর করার অসিয়ত করেছিলেন। (মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা: )
দাফন সংশ্লিষ্ট ৩টি আমল
মৃত ব্যক্তিকে কবরে ডান কাতে কিবলামুখী করে শোয়ানো সুন্নত। অর্থাৎ মৃতের বুক ও চেহারাসহ পুরো শরীরই কিবলামুখী করে শোয়াতে হবে। কবর এমনভাবে খনন করতে যেন মৃতের শরীর কিবলামুখী হয়ে থাকে। আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, কাবা জীবিত ও মৃত অবস্থায় মুসলমানদের কিবলা। (সুনানে আবু দাউদ: ২৮৬৫)
আমাদের দেশে অজ্ঞতাবশত অনেকে মৃতব্যক্তিকে কবরে চিত করে শোয়ানোর পর চেহারা কেবলামুখী করে দেওয়া যথেষ্ট মনে করেন। এটা ঠিক নয়। বরং মৃতকে পরিপূর্ণভাবে কিবলামুখী করে শোয়াতে হবে।মৃত ব্যক্তিকে কবরে শোওয়ানোর পর উপস্থিত ব্যক্তিদের জন্য মৃত ব্যক্তির মাথার দিক থেকে উভয় হাত দিয়ে তিনবার মাটি দেওয়া মুস্তাহাব। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এক জানাজার নামায আদায় করেন। এরপর মৃতের কবরের কাছে আসেন এবং তার মাথার দিকে তিনবার মাটি দেন। (সুনানে ইবনে মাজাহ: ১৫৬৫) মৃত ব্যক্তিকে দাফন করার তার কবরের পাশে কিছুক্ষণ অবস্থান করে তার জন্য রহমত ও মাগফেরাত প্রার্থনা করা, ফেরেশতাদের প্রশ্নের জবাবে তার ইমানি দৃঢ়তা প্রার্থনা করাও মুস্তাহাব। রাসুল (সা.) এ রকম আমল করেছেন বলে বর্ণিত রয়েছে। ওসমান ইবনে আফফান (রা.) থেকে বর্ণিত রয়েছে, আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মৃত ব্যক্তিকে দাফন করার পর সেখানে অবস্থান করতেন এবং বলতেন, তোমরা তোমাদের ভাইয়ের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা কর। তার জন্য দৃঢ়তার দোয়া করো। এখনই তাকে জিজ্ঞাসা করা হবে। (সুনানে আবু দাউদ: ৩২১৩)