ইসলাম একটি শান্তি ও পূর্ণাঙ্গ ধর্ম। ইসলাম ধর্মে প্রতিটি মানুষের জন্ম থেকে মৃত্যু, তার আগে ও পরের সমস্ত বিধান পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। যে ব্যক্তি ইসলাম ধর্মের সব বিধান মেনে চলবে, তাকে খাঁটি মুসলমান বলা হয়। আর একজন খাঁটি মুসলমানের দুনিয়া এবং আখেরাতের সার্বিক সফলতা, ইসলামের বিধান পালনের মধ্যেই নিহিত রয়েছে। একটি নবজাতকের জন্ম, মানুষের সর্বোচ্চ চাওয়াপাওয়া, সুখশন্তি, আনন্দ ও ভবিষ্যৎ বংশধারা রক্ষার নিশ্চয়তা বহন করে। আল্লাহতায়ালার প্রদত্ত নেয়ামত এর মধ্যে এটি অন্যতম। যেন মা-বাবার ছোট্ট কুঠিরে দীপ্তিময় সূর্যের আগমন। সেই ছোট্ট শিশুর হাসিমুখী কচি, নিষ্পাপ ফুলের মতো পবিত্র চেহারায় খুঁজে পায় মা-বাবার যুগল চেহারার আকৃতি। অপেক্ষায় থাকে, কখন ডাকবে মা-বাবা বলে। তাই নবজাতকের জন্মের পর মা-বাবার জন্য কর্তব্য হলো, নবজাতকের সুন্দর একটি ইসলামিক নাম রাখা। জন্মের সপ্তম দিনে আকিকা করা। ছেলে হলে দুটি আর মেয়ে সন্তান হলে একটি কোরবানিতে জবেহযোগ্য পশু দ্বারা আকিকা করা। আকিকা করা মুসলিম নবজাতকের জন্য সুন্নত। কেননা আকিকার দ্বারা নবজাতকের হক আদায় করা হয়, আল্লাহপাকের শুকরিয়া আদায় করা হয় এবং আল্লাহতায়ালা তার নানাবিধ বালামুসিবত, বিপদ-আপদ থেকে তাকে রক্ষা করেন। জীবের বিনিময়ে জীবনের নিরাপত্তা দান করেন। ইসলাম-পূর্ববর্তী যুগেও আকিকার প্রচলন ছিল, যদিও তার ধরন প্রকৃতি ছিল ভিন্ন রকম। এখনো ইহুদিদের মধ্যে আকিকার প্রচলন রয়েছে। আম্মাজান হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, ইহুদিরা ছেলে সন্তানের জন্য আকিকা করে, মেয়ে সন্তানের জন্য কোনো আকিকা করে না। তোমরা ছেলে সন্তানের জন্য দুটি ছাগল, আর মেয়ে সন্তানের জন্য একটি ছাগল দ্বারা আকিকা করবে। হজরত আবু বুরাইদাহ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আইয়ামে জাহেলিয়াতে আমাদের কারও ছেলে সন্তান হলে আমরা একটি ছাগল জবাই করতাম। হজরত আলী (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাসানের জন্য একটি ছাগল দ্বারা আকিকা করেছিলেন। উক্ত হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হয় মুসলিম নবজাতকের জন্য আকিকা করা সুন্নত। যদিও সমস্ত ইমামের ঐকমত্য, আকিকা একটি মুস্তাহাব আমল। নবজাতক সন্তানের পিতার পক্ষে আল্লাহর শুকরিয়া আদায়পূর্বক কৃতজ্ঞতার নিদর্শনস্বরূপ আকিকা করা মুস্তাহাব। সম্ভব হলে নবজাতকের জন্মের সপ্তম দিনে আকিকা করা উত্তম, কেননা রসুলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও সপ্তম দিনে আকিকা করতেন। সপ্তম দিনে সম্ভব না হলে, চতুর্দশতম দিনে আকিকা করবে। তাও সম্ভব না হলে একবিংশতম দিনে, তাও সম্ভব না হলে যে কোনো দিন সম্ভব হয় করবে। অবশ্য এ ক্ষেত্রে জন্মের সপ্তম দিনের প্রতি লক্ষ্য রাখা উত্তম। যেমন সোমবারে জন্ম হলে যে কোনো রবিবার আকিকা করবে। বুধবারে জন্ম হলে যে কোনো মঙ্গলবার আকিকা করবে। শনিবারে জন্ম হলে যে কোনো শুক্রবার আকিকা করবে। হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ (সা.) তাদের নবজাতক সন্তানের জন্য দুটি সমবয়সি ছাগল আর মেয়ে সন্তানের জন্য একটি ছাগল আকিকা করার নির্দেশ করেছেন। অর্থাৎ নবজাতক সন্তান ছেলে হলে, দুটি ছাগল ভেড়া অথবা গরু-মহিষের দুই অংশ আকিকা করবে। আর সন্তান মেয়ে হলে একটি ছাগল ভেড়া অথবা গরু-মহিষের একাংশ আকিকা করবে। আকিকা অনেকটা কোরবানির ন্যায়, তাই কোরবানিতে যেসব পশু জবেহ করা যায়, আকিকাতেও সেভাবে সেই প্রকারের পশু আকিকা করা যায় এবং তার বয়স এবং গোশত বণ্টন একই রকম থাকবে। অর্থাৎ তিন ভাগে বণ্টন করে দেওয়া সুন্নত। এবং নিজ পরিবারের মা-বাবা, দাদা-দাদি, নানা-নানিসহ সবাই ভক্ষণ করতে পারবে। সন্তানের মা-বাবা গরিব হলে অন্য কারও পক্ষ থেকে সেই সন্তানের আকিকা প্রদান করা জায়েজ। বরং তা বহুৎ বড় একটি সৎকাজ ও নেক কাজের সহায়তাকারী বলে গণ্য হবে। নবীজি ইরশাদ করেন প্রতিটি নবজাতক নিজ আকিকার সঙ্গে বন্ধক থাকে। যদি নবজাতক সন্তান পৃথিবীতে আসার পর কান্না করে এবং খাবার গ্রহণ করে অতঃপর তার ইন্তেকাল হয়ে যায়, তাহলে সেই নবজাতকের জন্য গোসল দেওয়া, জানাজা দেওয়া, দাফন করা এবং সুন্দর নাম রেখে আকিকা দেওয়া মুস্তাহাব। যদি মায়ের পেটে তার মৃত্যু হয়, তাহলে নাম রাখবে না ও আকিকা দেবে না। বরং কাপড়ে পেঁচিয়ে, জানাজাবিহীন দাফন করে দেবে। মুসলিম নবজাতকের জন্য আকিকা করা, জবেহকৃত পশুর গোশত কাঁচা বা রান্না করে বিতরণ করা, শিশুর মাথা মুণ্ডন করে চুলের ওজনের সমপরিমাণ স্বর্ণ-রৌপ্য বা তৎমূল্য দান করা এবং সুন্দর ইসলামিক নাম রাখা সুন্নতও মুস্তাহাব। কিন্তু এ-সম্পর্কিত আমাদের সমাজে অনেক বিজাতীয় কৃষ্টি-কালচার, অনৈসলামিক কর্মকাণ্ড ও কুসংস্কার বিদ্যমান রয়েছে। যা সম্পূর্ণরূপে বর্জনীয়। যেমন আকিকার গোশত সন্তানের বাবা-মা, দাদা-দাদি, নানা-নানি খেতে পারবে না। মাথা মুণ্ডন করার সময়ই আকিকার পশু জবাই করতে হবে।