Islamic News BD - The Lesson of Peace
সর্বাবস্থায় আল্লাহর ওপর ভরসা
মঙ্গলবার, ২৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫ ২৩:২৮ অপরাহ্ন
Islamic News BD - The Lesson of Peace

Islamic News BD - The Lesson of Peace

দুঃখের দিনে হতাশ না হয়ে আল্লাহর ওপর ভরসা করা এবং সুখের দিনেও অতিরিক্ত উল্লাসে আল্লাহকে ভুলে না গিয়ে তাঁকে স্মরণ করা মুমিনের ভূষণ। কোনো অবস্থায়ই নৈরাশ কিংবা অহংকারী হয়ে ওঠা উচিত নয়। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তা এই জন্য যে তোমরা যা হারিয়েছ, তার জন্য যাতে দুঃখিত না হও এবং যা আল্লাহ তোমাদের দান করেছেন তার জন্য উল্লসিত না হও। আল্লাহ এমন কোনো ব্যক্তিকে পছন্দ করেন না, যে দর্প দেখায় ও বড়ত্ব প্রকাশ করে।’ (সুরা : হাদিদ, আয়াত : ২৩)
প্রত্যেক মুমিনের জন্যই এ বিশ্বাস জরুরি যে দুনিয়ায় যা কিছু ঘটে, লাওহে মাহফুজে লিখিত সেই তাকদির অনুযায়ীই তা ঘটে। এ বিশ্বাস যে পোষণ করে সে কোনো রকমের অপ্রীতিকর ঘটনায় এতটা দুঃখিত হয় না যে সেই দুঃখ তার স্থায়ী অশান্তি ও পেরেশানির কারণ হয়ে যাবে। বরং সে এই ভেবে সান্ত্বনা লাভ করে যে তাকদিরে যা লেখা ছিল তা-ই হয়েছে। আর এটা তো শুধু দুনিয়ারই কষ্ট।

আখিরাতের নিয়ামতের সামনে দুনিয়ার দুঃখ-কষ্ট কোনো গ্রাহ্য করার বিষয় নয়। এমনিভাবে যদি তার কোনো খুশির ঘটনা ঘটে, তবে সে উল্লসিত হয় না ও বড়ত্ব দেখায় না। কেননা সে জানে এ ঘটনা আল্লাহ তাআলার নির্ধারিত তাকদির অনুযায়ী ও তাঁর সৃজনেই ঘটেছে। এর জন্য অহমিকা না দেখিয়ে আল্লাহ তাআলার শোকর আদায় করাই কর্তব্য।

অন্যথায় আল্লাহর অসন্তুষ্টির কারণে খুশির ঘটনাও কখনো কখনো স্থায়ী দুঃখের দিকে টেনে নিয়ে যেতে পারে।
কেননা আল্লাহ সম্পদ দিয়ে মানুষকে মাঝেমধ্যে পরীক্ষা করেন, যদি সে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়, তখন তার দুনিয়া-আখিরাত আলোকিত করে দেন। আর যদি কেউ পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়, তবে তার দুনিয়া-আখিরাত উভয়টিই বরবাদ হয়ে যায়।

যেমন—আল্লাহর নবী আইয়ুব (আ.)-এর রোগ ও তাতে তাঁর ধৈর্য ধারণ করার কাহিনি একটি প্রসিদ্ধ বিষয়। আল্লাহ তাআলা তাঁর সন্তান-সন্ততি, ধন-সম্পদ ধ্বংস করে এবং রোগ দ্বারা তাঁকে পরীক্ষা করেছিলেন।

কিন্তু তিনি সেই পরীক্ষায় মহান আল্লাহর ওপর এমনভাবে পূর্ণ আস্থা ও ভরসা রেখেছিলেন যে আল্লাহ তাআলা তাঁর ওপর খুশি হয়ে তাঁর ওপর সন্তুষ্ট হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয় আমি তাকে ধৈর্যশীল পেয়েছি। সে কতই না উত্তম বান্দা! নিশ্চয়ই সে ছিল আমার অভিমুখী।’ (সুরা : সোয়াদ, আয়াত : ৪৪)
অন্যদিকে হজরত সুলাইমান (আ.)-কে মহান আল্লাহ অঢেল সম্পদ ও প্রবল ক্ষমতা দিয়েছিলেন। তিনি তাতে উল্লসিত না হয়ে বরং আল্লাহর শুকরিয়া জ্ঞাপন করেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, সুলাইমান বলল, ‘এটি আমার রবের অনুগ্রহ, যাতে তিনি আমাকে পরীক্ষা করেন যে আমি কি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি, নাকি অকৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি। আর যে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে সে তো তার নিজের কল্যাণেই তা করে, আর যে কেউ অকৃতজ্ঞ হবে, তবে নিশ্চয় আমার রব অভাবমুক্ত, অধিক দাতা’। 
(সুরা : নামাল, আয়াত : ৩৮-৪০)

শুধু নবীরাই নন, মহান আল্লাহ মাঝেমধ্যে তাঁর সাধারণ বান্দাকেও সম্পদ দিয়ে বা ছিনিয়ে নিয়ে পরীক্ষা করেন। কখন তার মনের অবস্থা কেমন হয়, সে সব অবস্থায় মহান আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা রাখে কি না, তা যাচাই করেন।

বুখারি শরিফের ৩৪৬৪ নম্বর হাদিসে উল্লিখিত বনি ইসরাঈলের সেই তিন ব্যক্তির কথা অনেকেরই জানা। যেখানে মহান আল্লাহ একজন শ্বেতরোগী, একজন টাকওয়ালা ও একজন অন্ধকে পরীক্ষা করার জন্য ফেরেশতার মাধ্যমে রোগমুক্তি দিয়েছিলেন এবং অঢেল সম্পদের মালিক বানিয়েছিলেন। কিছুদিন পর তাদের কাছে আবারও ছদ্মবেশে ফেরেশতা পাঠিয়ে তাদের পরীক্ষা করেন, সে পরীক্ষায় অন্ধত্ব থেকে মুক্তি পাওয়া ব্যক্তিটি ছাড়া বাকি দুজনই অকৃতকার্য হয়। ফলে মহান আল্লাহ ফেরেশতাদের মাধ্যমে ওই অন্ধ ব্যক্তিটিকে তাঁর সন্তুষ্টির সুসংবাদ দিয়ে দেন এবং বাকি দুজনের জন্য ফেরেশতারা আবার অতীতের জীর্নশীর্ণ অবস্থায় ফেরত যাওয়ার বদদোয়া করে দেন।