মাদায়েন ছিল ব্যবসা-বাণিজ্যের উর্বর জায়গা। মাদায়েন শহরের অবস্থান ছিল আরবের উপদ্বীপে। পরে মাদায়েনবাসী কওমে শোয়াইব বা শোয়াইবের জাতি নামে পরিচিতি পায়। ইতিহাসে তারা কওমে শোয়াইব নামেই পরিচিত। বর্তমান সিরিয়ার মুয়ান বা মায়ান নামক স্থানে কওমে শোয়াইবের বসবাস ছিল বলে ধারণা করা হয়। ইতিহাসবিদেরা বলেন, শোয়াইব (আ.) ছিলেন ইবরাহিম (আ.)-এর পুত্র মাদায়িনের বংশধর। কেউ বলেন, শোয়াইব (আ.) ছিলেন হজরত সালেহ (আ.)-এর বংশধর। (তাফসিরে কোরআনুল আজিম, ইমাদুদ্দিন বিন কাসির, ৭/২৪৮)
শোয়াইব (আ.)-এর দুই মেয়ে চারণভূমিতে পশু চরাতেন। বাড়ি ফেরার আগে কুয়া থেকে পশুগুলোকে পানি খাওয়াতেন। প্রতিদিনই বাড়ি ফিরতে বেলা হয়ে আসত। একদিন বেশ আগে ফিরলেন তাঁরা। বাবা রীতিমতো বিস্মিত। জানলেন, এক অপরিচিত যুবক পানি তুলতে তাদের সাহায্য করেছেন। যুবককে বাড়ি নিয়ে যেতে এক মেয়েকে পাঠালেন। (তাফসিরে মারেফুল কোরআন, মুফতি মুহাম্মাদ শফি, অনুবাদ: মাওলানা মুহীউদ্দীন খান, পৃ ১,০১০)
যুবক দাওয়াত কবুল করে পথ চললেন। মেয়ের কাছ থেকে পথ চিনে নিয়ে তাঁকে পেছনে চলতে বললেন। মেয়ের প্রতি দৃষ্টিপাত এড়াতে এ কৌশল নিয়েছিলেন তিনি। পরে এ ব্যাপার নিয়ে পিতার কাছে প্রশংসা করেছিলেন মেয়েটি। (তাফসিরে মারেফুল কোরআন, মুফতি মুহাম্মাদ শফি, অনুবাদ: মাওলানা মহিউদ্দীন খান, পৃ ১,০১০)
যুবক বাড়ি এলেন। ওই যুবক ছিলেন বনি ইসরায়েল জাতির প্রতি প্রেরিত আল্লাহর বিশেষ নবী মুসা (আ.)। আতিথেয়তা গ্রহণ করলেন। খাবার শেষে ‘মেয়ে দুটির একজন বলল, বাবা, পারিশ্রমিকের বিনিময়ে তাকে নিযুক্ত করুন, আপনি যাদের মজুর নিযুক্ত করবেন, তাদের মধ্যে উত্তম যে শক্তিশালী, বিশ্বস্ত।’ (সুরা কাসাস, আয়াত: ২৬)
তারপর শোয়াইব (আ.) প্রস্তাব দিলেন, ‘আমার এ দুই মেয়ের একজনকে তোমার কাছে বিয়ে দিতে চাই। এ শর্তে যে তোমাকে আমার এখানে আট বছর চাকরি করতে হবে। আর যদি ১০ বছর পূর্ণ করো, তাহলে তা তোমার ইচ্ছা।...মুসা (আ.) জবাবে বললেন, আপনার ও আমার মধ্যে এই চুক্তিই রইল।’ (সুরা কাসাস, আয়াত: ২৭-২৮) এই প্রস্তাবের জন্য যুবক একবারেই অপ্রস্তুত ছিলেন।
মুসা (আ.) জন্মেছেন মিসরে। তখন মিসরের ফেরাউন বা বাদশাহ ছিল কাবুস। দ্বিতীয় রামেসিস হিসেবে লোকে জানে তাকে। মুসা (আ.) তখন বাজারে গিয়ে দুই ব্যক্তি ঝগড়া মিটাতে গিয়ে সেই ফেরআউনের এক অনুসারীকে চড় দিয়েছিলেন। লোকটি মারা যায়। মুসাকেও (আ.) হত্যা করার ফরমান জারি হয়, তাই তিনি শহর ছেড়ে মাদায়েন চলে গিয়েছিলেন। কেননা, তার এক সঙ্গী বলেছিল, সেখানে এক বুজুর্গ ও সৎ ব্যক্তি আছেন, তার কাছে থাকতে পারবেন। (কাসাসুল কোরআন, ৪/১৫)
মুসা (আ.) দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে এই মাদায়েন শহরে পৌঁছেছেন। সেখানে পানি পান করতে গিয়ে তাঁর কাঙ্ক্ষিত বুজুর্গ, মানে শোয়াইব (আ.)-এর মেয়েদের সঙ্গেই দেখা হয় তাঁর; যার কাছে আশ্রয় নিতে তিনি মিসর থেকে ছুটে এসেছেন। সুতরাং শর্ত না মেনে মুসা (আ.)-এর যাবার কোনও উপায় ছিল না। উপরন্তু আল্লাহ তাকে নবুওয়াত দেবেন বলে একজন নবীর সান্নিধ্যে প্রশিক্ষণ দেওয়ার প্রয়োজন ছিল।
মুসা (আ.) শোয়াইব (আ.)-এর দেওয়া শর্ত পূরণ করেছিলেন। বিয়ে করেছিলেন শোয়াইব (আ.)-এর মেয়েকে। শ্বশুরের পক্ষ থেকে উপহার পেয়েছিলেন একটি লাঠি। যেটা তাঁর বহু কাজে দিয়েছিল।