ইসলাম মানবতা ও শান্তির ধর্ম। পৃথিবীতে অন্যকোন ধর্ম মানুষকে এতগুলো নীতি আদর্শের শিক্ষা দেয়নি। ইসলাম মানুষকে দিয়েছে মানুষের মর্যাদা এবং সুষ্ঠ সুন্দরভাবে বেঁচে থাকার অধিকার। ইসলাম মানুষকে বিপদ ও অশান্তি থেকে মুক্তির পথ প্রদর্শন করে। ইসলাম পার্থিব শান্তি ও কল্যাণের পথও নির্দেশ করে। ইসলাম ঐ অদ্বিতীয় ধর্ম যাতে মানবজীবনের সকল ক্ষেত্রের স্বার্থরক্ষা এবং মানবজাতির সকল শ্রেণির যথার্থ শান্তি ও কল্যাণের পথনির্দেশ রয়েছে। ইসলামের শিক্ষা ও বিধানের অনুসরণেই রয়েছে মানুষের ব্যক্তিজীবন, পারিবারিক জীবন এবং সামাজিক জীবন ও রাষ্ট্রীয় জীবনের শান্তি, স্বস্তি, নিরাপত্তা ও প্রশান্তির নিশ্চয়তা।
ইসলাম শান্তির ধর্ম যা আখিরাতের নাজাত ও শান্তির পথ প্রদর্শন করে। ইসলামের শিক্ষা অনুযায়ী আপন আকিদা-বিশ্বাস দুরস্ত করা, আল্লাহর হক ও বান্দার হক সম্পর্কে জানা ও তা আদায় করা, সব রকমের গোনাহ ও পাপাচার থেকে থেকে বিরত থাকা। ইসলামের মর্মবানী অনুধাবনের মাধ্যমে আল্লাহর প্রতি আস্থা ও সমর্পণ, খোদাভীতি ও আখিরাতের জবাবদিহিতা এবং মৃত্যু পর্যন্ত ইসলাম-নির্দেশিত পথে থেকে আখিরাতের চিরস্থায়ী শান্তির উপযুক্ত হওয়া।
ইসলাম আল্লাহ প্রেরিত সর্বশেষ ধর্ম। যা মানবতার সর্বশেষ আশ্রয়। শয়তানের ধোঁকায় পড়ে মানবতা যখন নিষ্পেষিত, মানুষের জান-মাল ও ইজ্জত- আব্রু যখন লুণ্ঠিত হচ্ছিল, আরবের মরু বিয়াবান যখন অশান্তির আগুনে জ্বলছিল, শোষক পূঁজিপতিদের হাতে যখন দীন-হীন মানুষ গরু-ছাগলের মত বিক্রি হচ্ছিল, তখন সেখানে আল্লাহর পক্ষ থেকে অহি-র বিধান নিয়ে আগমন করেন বিশ্ব শান্তির অগ্রদূত বিশ্বনবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সাল্লালল-হু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)। যাতে ভূলুণ্ঠিত মানবতা পুনরায় উন্নীত হয়। শয়তানের ধোঁকা থেকে মানুষ মুক্ত হয়। পৃথিবী আবার শান্তিময় হয়। প্রজ্ঞাপূর্ণ দাওয়াত, বিজ্ঞানপূর্ণ যুক্তি, বাস্তবসম্মত উপদেশ, সর্বোচ্চ মানবিক আচরণ সবকিছুর সর্বোত্তম নমুনা হিসাবে এসেছিলেন শেষ নবী মুহাম্মাদ (সা.)। তাঁর কথা, কর্ম ও আচরণ সবই ছিল মানবতার পক্ষে ও পশুত্বের বিপক্ষে।
যুগে যুগে সকল নবী-রাসূলগণের প্রেরন করার মূল উদ্দেশ্য ছিল দাওয়াত ও মানুষের কল্যান। প্রথম মানব হযরত আদম আ. থেকে অসংখ্য পয়গম্বরের মাধ্যমে আল্লাহর যে বাণী মানবজমিনে বপিত, অঙ্কুরিত ও বিকশিত হয়ে এসেছিল কালক্রমে তারই পরিপূর্ণ ও কালজয়ী রূপ নিয়ে দুনিয়াতে এসেছিল এই ইসলাম। শেষ নবী ও বিশ্বনবী আরবের হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। নবী মুহাম্মদ (সা.) কে সকল মানব জাতির জন্য রহমতস্বরুপ প্রেরন করেছেন। মানুষের মুক্তি ও হেদায়েতের জন্য ওনার কাছে দীর্ঘ ২৩ বছরে নাযিল করেছেন মহা গ্রন্থ আল কুরআন। এই কোরআন ইসলামকে, ইসলামের নবীকে ও মুসলিম উম্মাহকে এমন এক অনন্য বিশিষ্টতায় সমুজ্জল করেছে যার কোনো তুলনা হয় না।
ইসলামে অন্যায় অনাচার, অশ্লীলতা, জুলুম-অবিচার হিংস্রতা ইত্যাদিকে নিষিদ্ধ করেছেন। ইসলাম মানুষকে সর্বোচ্চ স্বাধীনতা প্রদান করেছেন। ইসলামের সাথে কোন ধর্মের সংঘাত নেই। ইসলামের সংঘাত মিথ্যার বিরুদ্ধে, অন্যায়ের বিরুদ্ধে, অসত্যের বিরুদ্ধে, অমানবিকতার বিরুদ্ধে, অশান্তির বিরুদ্ধে। ইসলাম মানুষের সর্বোচ্ছ অধিকার নিশ্চিত করেছেন। ব্যক্তিজীবন, সমাজজীবন, রাস্ট্রীয় জীবন কিভাবে পরিচালিত করতে হবে তার যথাযত শিক্ষা দিয়েছেন। ইসলাম ধর্মে মানুষের দাসত্বের বদলে আল্লাহর দাসত্ব প্রতিষ্ঠিত করেছেন। সমস্ত মানুষ সবাই এক আদমের সন্তান হিসাবে পরস্পরের সহযোগী ভাই ভাই। এ সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে আল্লাহপাক বলেন, ‘আর (অহঙ্কারবশত) মানুষকে অবজ্ঞা করো না এবং ঔদ্ধত্যের সাথে পৃথিবীতে চলাফেরা করো না। আল্লাহ কোনো অহঙ্কারী ও দাম্ভিককে পছন্দ করেন না। (সূরা-লুকমান : ১৮)।
ইসলামের আকিদা-প্রসঙ্গ হোক বা ইবাদত, লেনদেন হোক বা সামাজিকতা, স্বভাব-চরিত্র হোক বা আচার-আচরণ, সৎকাজের আদেশ হোক বা অসৎকাজের নিষেধ এককথায় মানবজীবনের সব বিষয়ে ইসলামের যে বিশ্বাস ও বিধান তা গ্রহণ ও অনুসরণের মূল প্রেরণা আল্লাহর সন্তুষ্টি ও আখিরাতের নাজাত। এ কারণে ইসলামের করণীয়-বর্জনীয় সব বিষয়ের সাথে যে পরিভাষাগুলো জড়িত তা হচ্ছে সওয়াব ও গুনাহ, জান্নাত ও জাহান্নাম, আল্লাহর সন্তুষ্টি ও অসন্তুষ্টি। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে বলেন, তোমাদের কাছে আল্লাহর নিকট থেকে এসেছে এক জ্যোতি ও স্পষ্ট কিতাব। যারা আল্লাহর সন্তুষ্টি পেতে চায় এ দ্বারা তিনি তাদের শান্তির পথে পরিচালিত করেন এবং অন্ধকারসমূহ থেকে আলোর দিকে বের করে আনেন নিজ ইচ্ছায়। আর তাদের পথ দেখান সরল পথ। (সূরা মাইদা (৫) : ১৫-১৬)।