Islamic News BD - The Lesson of Peace
সমাজে কালো জাদুর বিস্তৃতি অস্তিত্ব
বুধবার, ২৩ জুলাই ২০২৫ ০০:১৬ পূর্বাহ্ন
Islamic News BD - The Lesson of Peace

Islamic News BD - The Lesson of Peace

আমাদের সমাজে কালো জাদুর বিস্তৃতি ব্যাপক। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে এর প্রকোপ অনেক বেশি। অতিপ্রাকৃত কোনো ঘটনা ঘটলেই, সেটা টেনে নেওয়া হয় জাদু কিংবা জ্বীনের কর্মকাণ্ডে। অথচ এর পেছনে কোনো যৌক্তিক বা বিজ্ঞানসম্মত ব্যাখ্যা আছে কি না, তা কেউ যাচাই করে দেখে না। এর ফলে কুসংস্কারের ভিত্তি শক্ত হয় এবং মানব মনে ভয়ের সঞ্চার হয়। এরই সুযোগ নেয় এক শ্রেণির প্রতারকচক্র। তারা কুফরি কালাম কিংবা তাবিজ-কবজের নাম দিয়ে লোকজনের অবচেতন মন নিয়ে খেলা করে এবং হাতিয়ে নেয় বিশাল অঙ্কের টাকা। 

এখনও এ দেশের বিভিন্ন অলিগলিতে, হাট-বাজারে, বাসে-ট্রেনে দেখা যায় নানা তান্ত্রিক কিংবা গুরুর পোস্টার। সেখানে দেওয়া থাকে বিভিন্ন চটকদার বিজ্ঞাপন। কিন্তু তাদের সঙ্গে সরাসরি দেখা করার কোনো সুযোগ থাকে না। ফোনের মাধ্যমে যোগাযোগ করে তারা সরলমনা মানুষের আবেগকে পুঁজি করে হাতিয়ে নেয় মোটা অঙ্কের টাকা। কিন্তু অর্থ ব্যয় করেও কোনো সফলতার মুখ দেখেন না অর্থব্যয়কারী। উল্টো তিনি এরূপ কুফরি বিশ্বাসের মাধ্যমে নিজের ঈমানকে ঝুঁকির মুখে ফেলেন।

ইসলাম জাদুর অস্তিত্ব অস্বীকার করেনি। বরং জাদু সত্য- রাসূল (সা.) এর নিজের জাদুগ্রস্ত হওয়াও তা প্রমাণ করে।

কুরআন ও হাদীসে জাদু বিষয়ে স্পষ্ট নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা'আলা বলেন, ‘তবু এ দু'জন হতে তারা এমন বিষয় শিখত, যা স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটাত।’ (সূরা বাকারা : ১০২) এই আয়াতের প্রেক্ষাপটে হারুত ও মারুত নামক দুই ফেরেশতার ঘটনা আলোচিত হয়, যারা মানুষের পরীক্ষার জন্য জাদু বিষয়ক জ্ঞান দিলেও শর্তসাপেক্ষে তা করেছিলেন- যাতে মানুষ বুঝতে পারে, এই জ্ঞান ক্ষতিকর এবং এর ব্যবহার নিষিদ্ধ।

আবার রাসুলুল্লাহ (সা.) এক হাদিসে বলেন, ‘সাতটি ধ্বংসাত্মক কাজ থেকে বেঁচে থাকো।’ সাহাবিগণ জিজ্ঞেস করলে তিনি জানান, এর মধ্যে দ্বিতীয়টি হচ্ছে- ‘জাদু করা’। জাদু কোনো সাধারণ বিষয় নয়; এটি মানুষকে কুফরীর চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারে। জাদু মূলত কুফরীর মাধ্যমে শয়তানের আস্থাভাজন হওয়া। এর প্রতিদানস্বরূপ শয়তান জাদুকরের কিছু ইচ্ছা পূরণ করে থাকে। শয়তানের উদ্দেশ্যই হলো- মানুষকে ইসলামের পথ থেকে বিচ্যুত করে কুফরীর দিকে ধাবিত করা। কেউ যদি তার এ আহ্বানে সাড়া দেয়, তবে শয়তানও তাকে কিছু প্রতিদান দেয়, যা সাময়িক লাভজনক মনে হলেও পরবর্তীতে তা সীমাহীন ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মানুষের মানসিক সমস্যা ও দুর্বলতার দায় চাপিয়ে দেওয়া হয় জাদুর ওপর। অথচ প্রয়োজনীয় চিকিৎসা ও সেবা-শুশ্রূষা পেলে সে সুস্থ হয়ে উঠতে পারে। কিন্তু তা না করে মানুষ বিভিন্ন প্রতারক তান্ত্রিক, ওঝার কাছে গিয়ে ধর্না দেয়। এর ফলে রোগ তো সারেই না, বরং দিনে দিনে বৃদ্ধি পেতে থাকে। তবে কেউ যদি প্রকৃত অর্থে জাদুগ্রস্ত হয়, তবে তার চিকিৎসাও কুরআন ও সুন্নাহতে স্পষ্টভাবে বর্ণিত আছে। তাই তান্ত্রিক ও ওঝার কাছে না গিয়ে একজন ভালো আলেমের শরণাপন্ন হওয়া উচিত। এতে যেমন রোগী সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, তেমনি ইমান নষ্ট হওয়ার আশঙ্কাও দূর হয়।