Islamic News BD - The Lesson of Peace
কোরআনের উপমায় স্বামী-স্ত্রী কেন পরস্পরের পোশাক?
সোমবার, ১০ নভেম্বর ২০২৫ ১৫:৩৬ অপরাহ্ন
Islamic News BD - The Lesson of Peace

Islamic News BD - The Lesson of Peace

আপনি যদি বলেন মাত্র একটি শব্দে পারিবারিক জীবনে ভালো থাকার ও সুখী হওয়ার উপায় বলে দিন। আমি আপনাকে সুরা বাকারার ১৮৭ নং আয়াত পড়তে বলবো। এ আয়াতে আল্লাহ তাআলা স্বামী ও স্ত্রীকে পরস্পরের পোশাক বলেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, তারা তোমাদের জন্য পোশাক আর তোমারও তাদের জন্য পোশাক। (সুরা বাকারা: ১৮৭)

ভেবে দেখুন, আল্লাহ তাআলা পোশাকের উপমা দিয়ে কী বোঝাতে চেয়েছেন? স্বামী যদি পোশাক হয় তাহলে স্ত্রী হবে পোশাক পরিধানকারী আর স্ত্রী যদি পোশাক হয় তাহলে স্বামী হবে পোশাক পরিধানকারী। পোশাকের সাথে পোশাক পরিধানকারী ব্যক্তির সম্পর্ক ও আচরণ খেয়াল করলে স্বামী-স্ত্রীর পরস্পরের সম্পর্ক কেমন হওয়া উচিত তা আমরা বুঝতে পারবো।

১. কোনো সুস্থ মস্তিষ্কের বিবেকবান মানুষ ইচ্ছাকৃত তার পরিধেয় পোশাক ময়লা করে না বরং যথাসাধ্য চেষ্টা করে ময়লা থেকে কাপড় বাঁচিয়ে চলতে। তেমনই একজন বিবেকবান স্বামী তার স্ত্রীকে এবং বিবেকবান স্ত্রী তার স্বামীকে জনসমক্ষে কোনো দোষ বা অপবাদ দিয়ে অসম্মান করতে পারে না, ছোট করতে পারে না। একে অপরকে কোনো গুনাহে জড়িত হতে দিতে পারে না। বরং সব সময় একে অপরকে অন্যদের চোখে উত্তম হিসেবে দেখানো উচিত, গুনাহ থেকে যথাসাধ্য বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করা উচিত।

২. অসতর্কতায় কখনো কারো পোশাকে ময়লা লেগে গেলে সে তা দ্রুত পরিষ্কার করার চেষ্টা করে। ময়লা পোশাক গায়ে দিয়ে আমরা ঘুরে বেড়ায় না। তেমনই কখনো স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে মনোমালিন্য হলে দ্রুত সমাধানের চেষ্টা করা উচিত। মনোমালিন্য বেশি দিন জিইয়ে না রাখা উচিত।

৩. যদি কখনো পাবলিক ফাংশানে পোশাকে ময়লা লেগে যায় আর তা পুরোপুরি পরিষ্কার করার মত সুযোগ না পাওয়া যায়, তাহলে সেই ময়লা আমরা যথাসাধ্য আড়াল করে রাখার চেষ্টা করি। কাউকে বুঝতে না দিয়ে অনুষ্ঠান শেষ করার চেষ্টা করি। একইভাবে স্বামী-স্ত্রীর মনোমালিন্য জনসমক্ষে প্রকাশ না করে লুকিয়ে রাখার চেষ্টা করা উচিত। পরবর্তীতে সময়-সুযোগ অনুযায়ী নিজেদের মধ্যে সমাধান করে নেওয়ার চেষ্টা করা উচিত।

৪. পোশাকের ময়লা জনসমক্ষে প্রকাশ পেলে পোশাক পরিধানকারী নিজেই লজ্জিত হয়। একইভাবে স্বামী কিংবা স্ত্রীর কোনো দোষ প্রকাশ পেলে তার জীবনসঙ্গীও তার সঙ্গে অসম্মানিত ও লজ্জিত হয়।

৫. মানুষের পোশাক সমাজে তার সৌন্দর্য, রুচিবোধ ও শালীনতা প্রকাশ করে থাকে। একইভাবে স্বামী-স্ত্রীর কাজ ও আচরণ সমাজে তার জীবনসঙ্গীর সৌন্দর্য, রুচিবোধ ও দ্বীনদারি প্রকাশ করে থাকে।

৬. পোশাক কাছে থাকে, শরীরের সঙ্গে লেগে থাকে। স্বামী-স্ত্রীরও যতটা সম্ভব কাছাকাছি থাকার চেষ্টা করা উচিত। একসঙ্গে জীবন যাপন করা উচিত।

৭. পোশাক যেমন আমাদের দোষ-ত্রুটি ঢেকে রাখে, শরীরের গোপনীয় স্থান ঢেকে রাখে, বৈবাহিক জীবনেও পরস্পরের দোষ ত্রুটি ঢেকে রাখার উচিত। পোশাক যদি শরীরের গোপনীয় অংশ ঢেকে রাখতে সক্ষম না হয়, আরামের বদলে শরীরকে আরও কষ্ট দেয়, তাহলে কেউ তা আর ব্যবহার করে না। ছেড়া কাপড় এক সময় পোশাক থেকে ন্যাকড়ায় পরিণত হয়। সম্মানের সঙ্গে গায়ে জড়ানোর বদলে তা দিয়ে মানুষ ধুলোবালি পরিস্কার করে। একইভাবে স্বামী-স্ত্রী একে অপরের দোষ ত্রুটি গোপন না রাখলে এক সময় সংসার নষ্ট হয়ে যায়। উভয়েই মানুষের হাস্যরসের খোরাক হয়।

৮. পোশাক ময়লা হলে আমরা ফেলে দিই না, বরং ধুয়ে আবার পরি। একইভাবে দাম্পত্য জীবনে মনোমালিন্য হলেই বিবাহবিচ্ছেদের কথা ভাবা যাবে না, বরং নিজেদের মধ্যে কথাবার্তা বলে আপস-সমঝোতা করে নেওয়ার চেষ্টা করতে হবে।

৯. পোশাক পরিস্কার রাখার যত চেষ্টাই করা হোক, ধীরে ধীরে ময়লা হবেই। বৈবাহিক জীবনেও কিছু কিছু মনোমালিন্য হবেই। এটা স্বাভাবিকভাবে নিতে হবে। দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ মানুষ মুহাম্মাদের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) পারিবারিক জীবনেও মনোমালিন্য হয়েছে। তিনি তা দূর করে স্ত্রীদের সঙ্গে আবার মিলিত হয়েছেন। সুতরাং আমাদের পারিবারিক জীবনেও আনন্দের সঙ্গে কিছু বেদনা আসতে পারে। আমাদের দায়িত্ব সব কিছু মিলিয়ে যথা সম্ভব ভালো থাকার চেষ্টা করা, মনোমালিন্য হলে হতাশ না হয়ে তা দূর করার চেষ্টা করা।