আল্লাহ তাআলা বান্দার প্রতি দয়া ও ক্ষমাশীল। তিনি নিজ অনুগ্রহে সেই সব বান্দাকে সঠিক পথ দেখাবেন; যারা সঠিক পথ পাওয়ার চেষ্টা করে। নেক আমল করে। এ সব ব্যক্তিদের প্রচেষ্টার কারণে আল্লাহ তাআলা তাদের বিশেষ পুরস্কারও দেবেন। কুরআনুল কারিমে একাধিক বর্ণনায় তা ওঠে এসেছে-
وَ الَّذِیۡنَ جَاهَدُوۡا فِیۡنَا لَنَهۡدِیَنَّهُمۡ سُبُلَنَا ؕ وَ اِنَّ اللّٰهَ لَمَعَ الۡمُحۡسِنِیۡنَ যারা আমাকে পাওয়ার জন্য রাস্তা তালাশ করে; তারা যদি রাস্তা খুঁজে নাও পায়, আমি আল্লাহ স্বয়ং তাকে রাস্তা দেখিয়ে দেব। নিশ্চয়ই আল্লাহ (সঠিক পথের অনুসন্ধানকারী) সৎকর্মশীলদের সঙ্গে আছেন। (সুরা আনকাবুত : আয়াত ৬৯)
এ আয়াতে আল্লাহ তাআলা মানুষকে দ্বীনের পথে চলতে, নেক আমল করতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টার কথা বলেছেন। তারপরও যদি কেউ সঠিক পথের সন্ধান পেতে অক্ষম হয় তবে মহান আল্লাহ তাআলা তাদের প্রচেষ্টার কারণে দয়া করে সঠিক দেখাবেন। কেননা আল্লাহ তাআলার ঘোষণা তিনি নেক আমলকারীদের সঙ্গে আছেন।এ আয়াতের ব্যাখ্যায় হজরত ফুদাইল ইবন আয়াদ রাহিমাহুল্লাহ বলেন,যারা বিদ্যার্জনে মনোযোগী হয়, আমি তাদের জন্য আমলও সহজ করে দেই।আল্লাহ তাআলার ঘোষণা সত্য। যে বা যারা আল্লাহ পথে চলার, আল্লাহর রঙে নিজেদের রাঙানোর সর্বাত্মক প্রচেষ্টা করবে; আল্লাহ তাআলা তাদের সঠিক পথে পরিচালত করবেন। সঠিক পথ দেখাবেন। এটা মহান আল্লাহ তাআলার ওয়াদা।
যারা সঠিক পথ পেতে তার (সন্তুষ্টির পথে) দ্বীনের উপর আমল করতে কষ্ট, পরীক্ষা এবং সমস্যার সম্মুখীন হয়; আল্লাহ তাদের শুধু সঠিক পথই দেখাবেন না; দুনিয়া ও পরকালে অনেক নেয়ামতও দান করবেন। কুরআনুল কারিমের একাধিক আয়াতে এ সম্পর্কে সুস্পষ্ট ঘোষণাও এসেছে এভাবে-
মানুষকে আল্লাহ কি কারণে পথ দেখান
اِنَّ الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا وَ عَمِلُوا الصّٰلِحٰتِ یَهۡدِیۡهِمۡ رَبُّهُمۡ بِاِیۡمَانِهِمۡ ۚ تَجۡرِیۡ مِنۡ تَحۡتِهِمُ الۡاَنۡهٰرُ فِیۡ جَنّٰتِ النَّعِیۡمِ
নিশ্চয়ই যারা ঈমান এনেছে এবং ভাল কাজ করেছে, তাদের রাব্ব তাদেরকে লক্ষ্য স্থলে (জান্নাতে) পৌঁছে দিবেন তাদের ঈমানের কারণে, শান্তির উদ্যানসমূহে, তাদের (বাসস্থানের) তলদেশ দিয়ে নহরসমূহ বইতে থাকবে। (সুরা ইউনুছ : আয়াত ৯)
মানুষকে আল্লাহ কেন হেদায়াত দান করবেন?
وَ یَزِیۡدُ اللّٰهُ الَّذِیۡنَ اهۡتَدَوۡا هُدًی ؕ وَ الۡبٰقِیٰتُ الصّٰلِحٰتُ خَیۡرٌ عِنۡدَ رَبِّکَ ثَوَابًا وَّ خَیۡرٌ مَّرَدًّا
আর যারা সৎ পথে চলে আল্লাহ তাদেরকে অধিক হেদায়াত দান করেন এবং স্থায়ী সৎ কাজ তোমার রবের পুরস্কার প্রাপ্তির জন্য সাওয়াবের দিক দিয়ে শ্রেষ্ঠ এবং প্রতিদান হিসাবেও অতি উত্তম। (সুরা মারইয়াম : আয়াত ৭৬)
মানুষের জন্য কোন কাজ হেদায়াত স্বরূপ?
اَللّٰهُ نَزَّلَ اَحۡسَنَ الۡحَدِیۡثِ کِتٰبًا مُّتَشَابِهًا مَّثَانِیَ تَقۡشَعِرُّ مِنۡهُ جُلُوۡدُ الَّذِیۡنَ یَخۡشَوۡنَ رَبَّهُمۡ ۚ ثُمَّ تَلِیۡنُ جُلُوۡدُهُمۡ وَ قُلُوۡبُهُمۡ اِلٰی ذِکۡرِ اللّٰهِ ؕ ذٰلِکَ هُدَی اللّٰهِ یَهۡدِیۡ بِهٖ مَنۡ یَّشَآءُ ؕ وَ مَنۡ یُّضۡلِلِ اللّٰهُ فَمَا لَهٗ مِنۡ هَادٍ
আল্লাহ নাজিল করেছেন উত্তম বাণী; সাদৃশ্যপূর্ণ একটি কিতাব (আল কুরআন)। যা বারবার আবৃত্তি করা হয়। যারা তাদের রবকে ভয় করে, তাদের গা এতে শিহরিত হয়, তারপর তাদের দেহ ও মন আল্লাহর স্মরণে বিনম্র হয়ে যায়। এটা আল্লাহর হেদায়াত, তিনি যাকে চান তাকে এর দ্বারা সঠিক পথ দেখান। আর আল্লাহ যাকে পথভ্রষ্ট করেন, তার জন্য কোনো হেদায়াতকারী নেই। (সুরা যুমার : আয়াত ৩৯)
তাহলে আল্লাহ কোন মানুষকে হেদায়াত দেন?
الَّذِیۡنَ یَسۡتَمِعُوۡنَ الۡقَوۡلَ فَیَتَّبِعُوۡنَ اَحۡسَنَهٗ ؕ اُولٰٓئِکَ الَّذِیۡنَ هَدٰىهُمُ اللّٰهُ وَ اُولٰٓئِکَ هُمۡ اُولُوا الۡاَلۡبَابِ
যারা মনোযোগ সহকারে কথা শোনে অতঃপর তার মধ্যে যা উত্তম তা অনুসরণ করে তাদেরকেই আল্লাহ হিদায়াত দান করেন আর তারাই বুদ্ধিমান।
কুরআনুল কারিমের এ আয়াতটি মুমিন মুসলমানের জন্য কল্যাণ ও শান্তির সুসংবাদ দেয়-
وَ الَّذِیۡنَ جَاهَدُوۡا فِیۡنَا لَنَهۡدِیَنَّهُمۡ سُبُلَنَا ؕ وَ اِنَّ اللّٰهَ لَمَعَ الۡمُحۡسِنِیۡنَ <যারা আমাকে পাওয়ার জন্য রাস্তা তালাশ করে; তারা যদি রাস্তা খুঁজে নাও পায়, আমি আল্লাহ স্বয়ং তাকে রাস্তা দেখিয়ে দেব। নিশ্চয়ই আল্লাহ (সঠিক পথের অনুসন্ধানকারী) সৎকর্মশীলদের সঙ্গে আছেন। (সুরা আনকাবুত : আয়াত ৬৯)
সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, দুনিয়ার জীবনের প্রতিটি কাজ আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে করার চেষ্টা অব্যাহত রাখা। ফলে সঠিক পথ পেতে কষ্ট হলেও আল্লাহ মানুষকে সঠিক পথের সন্ধান দেবেন।আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে দুনিয়া ও পরকালে তার সন্তুষ্টি লাভে কুরআনের আয়াতের ওপর যথাযথ আমল করার তাওফিক দান করুন। নেক আমলে পুরো জীবন অতিবাহিত করার তাওফিক দান করুন। আমিন।