Islamic News BD - The Lesson of Peace
স্মরণ শক্তি বাড়ানোর সহজ দোয়া ও আমল
মঙ্গলবার, ২৪ আগস্ট ২০২১ ১৭:১১ অপরাহ্ন
Islamic News BD - The Lesson of Peace

Islamic News BD - The Lesson of Peace

স্মৃতিশক্তি মানুষের অমূল্য সম্পদ। সঠিক ব্যবহারে মানুষের স্মৃতিশক্তি অটুট থাকে এবং ধীরে ধীরে তা বাড়তে থাকে। আল্লাহ তাআলা মানুষকে স্মৃতিশক্তি বাড়াতে দোয়া, জিকির বেশ কিছু কাজের প্রতি উৎসাহ দিয়েছেন। কুরআন-সুন্নাহর আলোকে স্মৃতিশক্তি বাড়ানোর ১০টি সহজ উপায় তুলে ধরা হলো। যে উপায়গুলো শুধু স্মৃতিশক্তি বাড়িয়ে দেবে এমনই নয় বরং তা মানুষের শারীরিক ও মানসিক সুস্থতায় যথাযথ কার্যকরী। তাহলো-

১. দোয়া ও জিকির আল্লাহর সাহায্য ছাড়া কোনো কাজেই সফলতা অর্জন করা সম্ভব নয়। এজন্য মুমিন মুসলমানের উচিত সর্বদা আল্লাহর কাছে দোয়া ও জিকির করা যাতে তিনি সবার স্মৃতিশক্তি বাড়িয়ে দেন এবং কল্যাণকর জ্ঞান দান করেন। এক্ষেত্রে কুরআনুল কারিমের এ দোয়াটি বেশি বেশি পাঠ করা-
>رَّبِّ زِدْنِي عِلْمًا উচ্চারণ : রাব্বি যিদনি ইলমা> অর্থ : হে আমার পালনকর্তা! আমার জ্ঞান বাড়িয়ে দিন। (সুরা ত্বহা : আয়াত ১১৪)

২. গোনাহ থেকে বিরত থাকা

আলো ও অন্ধকার এক সঙ্গে থাকতে পারে না। জ্ঞান হলো আলো আর গোনাহ হলো অন্ধকার। তাই জ্ঞানের আলোয় আলোকিত হতে হলে অবশ্যই গোনাহ থেকে দূরে থাকতে হবে। তবেই মানুষের স্মরণ শক্তি লোপ পাবে না। তা দিন দিন বাড়বে।
প্রতিনিয়ত পাপ করে যাওয়ার একটি প্রভাব হচ্ছে স্মৃতিশক্তি দুর্বল হয়ে যাওয়া। পাপের অন্ধকার ও জ্ঞানের আলো কখনো একসঙ্গে থাকতে পারে না। ইমাম শাফেঈ রাহিমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন-
আমি (আমার শাইখ) ওয়াকিকে আমার খারাপ স্মৃতিশক্তির ব্যাপারে অভিযোগ করেছিলাম এবং তিনি শিখিয়েছিলেন আমি যেন পাপকাজ থেকে নিজেকে দূরে রাখি। তিনি বলেন- আল্লাহর জ্ঞান হলো একটি আলো এবং আল্লাহর আলো কোনো পাপচারীকে দান করা হয় না। হজরত ইয়াহইয়া বিন ইয়াহইয়া বলেন, এক ব্যক্তি মালিক ইবনে আনাসকে প্রশ্ন করেছিলেন, ;হে আল্লাহর বান্দা! আমার স্মৃতিশক্তিকে শক্তিশালী করে দিতে পারে এমন কোনো কিছু কি আছে? তিনি বলেন, যদি কোনো কিছু স্মৃতিকে শক্তিশালী করতে পারে তা হলো পাপ করা ছেড়ে দেয়া। (আল-খাতিব আল-জামি)

সুতরাং যখন কোনো মানুষ পাপ করে এটা তাকে উদ্বেগ ও দুঃখের দিকে ধাবিত করে। সে তার কৃতকর্মের ব্যাপারে ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়ে। ফলে ভোঁতা হয়ে যায় তার অনুভূতি এবং জ্ঞান অর্জনের মতো কল্যাণকর আমল থেকে সে দূরে সরে পড়ে। তাই আমাদের উচিত পাপ থেকে দূরে থাকার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করা।

৩. ইখলাস বা আন্তরিক সফলতা অর্জনে যেমন ইখলাস বা আন্তরিকতার বিকল্প নেই। তেমনি স্মৃতিশক্তি ভালো রাখতেও ইখলাসের গুরুত্ব সবচেয়ে বেশি। আর ইখলাসের মূল উপাদানই হচ্ছে বিশুদ্ধ নিয়ত। আল্লাহ তাআলা বলেন-
তাদেরকে এছাড়া কোরো নির্দেশ করা হয়নি যে, তারা খাঁটি মনে একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর ইবাদত করবে, নামাজ কায়েম করবে এবং জাকাত দেবে। এটাই সঠিক ধর্ম। (সুরা আল-বায়্যিনাহ : আয়াত ৫)

এ জন্যই স্মরণশক্তি ধরে রাখা কিংবা বাড়ানোর মূলমন্ত্রও কাজের প্রতি নিয়তের বিশুদ্ধতা, ইখলাস তথা যথাযথ আন্তরিকতা রাখা। এ সম্পর্কে বিশ্বনবি বলেন, ব্যক্তির সব আমলই নিয়তের উপর নির্ভরশীল। অর্থাৎ যার নিয়ত যত পরিশুদ্ধ ও ইখলাসপূর্ণ হবে তার কাজ তত মজুবত হবে।

ইসলামিক স্কলার খুররাম মুরাদ বলেন, উদ্দেশ্য বা নিয়ত হল আমাদের আত্মার মত অথবা বীজের ভিতরে থাকা প্রাণশক্তির মত। বেশীরভাগ বীজই দেখতে মোটামুটি একইরকম, কিন্তু লাগানোর পর বীজগুলো যখন চারাগাছ হয়ে বেড়ে উঠে আর ফল দেয়া শুরু করে তখন মানুষের কাছে বীজের আসল পার্থক্যটা পরিস্কার হয়ে যায়। একইভাবে নিয়ত যত বিশুদ্ধ হবে আমাদের কাজের ফলও তত ভালো হবে। সুতরাং মুমিন মুসলমানের নিয়ত এমন হতে হবে যে, আল্লাহ আমাদের স্মৃতিশক্তি যেনো একমাত্র ইসলামের কল্যাণের জন্যই বাড়িয়ে দেন।

৪. স্মরণ রাখার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা

সবার মুখস্থ করার পদ্ধতি বা স্মৃরণ রাখার শক্তি এক নয়। কারো শুয়ে পড়লে তাড়াতাড়ি মুখস্থ হয়, কারো আবার হেঁটে হেঁটে পড়লে তাড়াতাড়ি মুখস্থ হয়। কেউ নীরবে পড়তে ভালোবাসে, কেউবা আবার আওয়াজ করে পড়ে। কারো ক্ষেত্রে ভোরে তাড়াতাড়ি মুখস্থ হয়, কেউবা আবার গভীর রাতে ভালো মুখস্থ করতে পারে। তাই আমাদের প্রত্যেকের উচিত নিজ নিজ উপযুক্ত সময় ও পারিপার্শ্বিক পরিবেশ ঠিক করে তার যথাযথ ব্যবহার করা। আর কুরআন মুখস্থ করার সময় একটি নির্দিষ্ট মুসহাফ (কুরআনের আরবি কপি) ব্যবহার করা। কারণ বিভিন্ন ধরনের মুসহাফে পৃষ্ঠা ও আয়াতের বিন্যাস বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে। একটি নির্দিষ্ট মুসহাফ নিয়মিত ব্যবহারের ফলে মস্তিষ্কের মধ্যে তার একটি ছাপ পড়ে যায় এবং মুখস্থকৃত অংশটি অন্তরে গভীরভাবে গেঁথে যায়।

৫. নিয়মিত আমল করা

স্মৃতিতে থাকা বিষয়গুলোর উপর আমল করা। পড়ার জিনিস হলে তা বার বার পড়া। কাজের বিষয় হলে সংশ্লিষ্ট কাজে নিয়োজিত থাকা। কাজের বিষয়ে যতবেশি আমল বা বাস্তব প্রয়োগ হবে স্মৃতিশক্তি তত ঠিক থাকবে। এমনকি স্মৃতিশক্তি বেড়ে যাবে। মস্তিষ্কে বিষয়গুলো স্থায়ীভাবে জমে যাবে।

৬. অন্যকে শেখানোর দায়িত্ব পালন করা

স্মৃতিশক্তি ঠিক রাখার অন্যতম মাধ্যম নিজের শেখা জিনিসগুলো অন্যকে শেখানো। অন্যকে শেখানোর মাধ্যমে নিজের স্মৃতিশক্তি ঠিক থাকবে। একই বিষয় বারবার করলে তা স্মৃতিতে থাকবে অমলিন ও স্থায়ী। তাই জানা জিনিসগুলো বারবার