Islamic News BD - The Lesson of Peace
বান্দাহ কি জানে, তার একজন ক্ষমাকারী রব আছেন?
শনিবার, ২৮ আগস্ট ২০২১ ১৫:২৩ অপরাহ্ন
Islamic News BD - The Lesson of Peace

Islamic News BD - The Lesson of Peace

মানুষের সবচেয়ে আপন কে? কে মানুষকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসেন? কে মানুষকে হাজারো অন্যায়ের পরও দয়া করেন? এর একটিই উত্তর- তিনি হলেন মহান রব। যিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন। যিনি মানুষকে বিভিন্ন উপায়ে ক্ষমা করেন। মানুষকে তিনি ক্ষমা করবেন, এটি তার ওয়াদা। কারণ তিনি কোরআনুল কারিমের বিভিন্ন জায়গায় বারবার নিজেকে ক্ষমাকারী হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন-

তিনি তাদের জন্য বড়ই দয়াবান এবং মহা ক্ষমাশীল যারা তওবা করে। (সুরা নুহ : আয়াত ১০)

বার বার অন্যায় করে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া এবং ক্ষমা পাওয়া প্রসঙ্গে উম্মতের দরদী নবি মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও এমনই একটি আশার বাণী হাদিসে পাকে তুলে ধরেছেন এভাবে-

বান্দাহ কি জানে, তার একজন ক্ষমাকারী রব আছেন; যিনি ক্ষমা করেন এবং শাস্তিও দেন!হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, আমি নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে এ কথা বলতে শুনেছি, এক বান্দা গোনাহ করলো। তারপর সে বললো, হে আমার রব! আমি তো গোনাহ করে ফেলেছি। তাই আমার গোনাহ ক্ষমা করে দাও। (তখন) তার প্রতিপালক বললেন-

আমার বান্দা কি একথা জেনেছে যে, তার রয়েছে একজন রব; যিনি গোনাহ ক্ষমা করেন এবং এর কারণে শাস্তিও দেন। আমার বান্দাকে আমি মাফ করে দিলাম। তারপর সে আল্লাহর ইচ্ছে অনুযায়ী কিছুকাল অবস্থান করল এবং সে আবার গোনাহতে জড়িয়ে গেল।

বান্দা আবার বললো, হে আমার প্রতিপালক! আমি তো আবার গোনাহ করে বসেছি। আমার এ গোনাহ তুমি মাফ করে দাও। তখন আল্লাহ বললেন-

আমার বান্দা কি জেনেছে যে, তার আছে একজন রব; যিনি গোনাহ ক্ষমা করেন এবং এর কারণে শাস্তিও দেন। এরপর সে বান্দা আল্লাহর ইচ্ছানুযায়ী কিছুকাল সে অবস্থায় থাকল। আবারও সে গোনাহতে জড়িয়ে গেল।

সে (বান্দাহ আবারও) বললো, হে আমার রব! আমি তো আরো একটি গোনাহ করে ফেলেছি। আমার এ গোনাহ মাফ করে দাও। তখন আল্লাহ বললেন-

আমার বান্দা কি জেনেছে যে, তার একজন রব আছেন; যিনি গোনাহ মাফ করেন এবং এর কারণে শাস্তিও দেন। আমি আমার এ বান্দাকে মাফ করে দিলাম। এরকম তিনবার বললেন। (বুখারি)

বান্দার প্রতি আল্লাহর ক্ষমার দৃষ্টান্ত ওঠে এসেছে এ হাদিসে। সুতরাং মানুষের উচিত, যে কোনো গোনাহ করার সঙ্গে সঙ্গে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া এবং তাহওবাহ ইসতেগফার করা। যারাই আল্লাহর কাছে গোনাহের অপরাধ থেকে ক্ষমা চায় এবং তাওবাহ করে আল্লাহ তাআলা সঙ্গে সঙ্গে তাদের ক্ষমা করে দেন।

গোনাহ হয়ে গেলেই এভাবে ক্ষমা চাওয়া- أتُوبُ إلى اللَّهِ ممَّا أذْنَبْتُ উচ্চারণ : আতুবু ইলাল্লাহি মিম্মা আজনাবতু।

অর্থ : আমি যে গোনাহ করেছি, তা থেকে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি। বেশি তাওবাহ-ইসতেগফার করা- ১.أَستَغْفِرُ اللهَ উচ্চারণ : আস্তাগফিরুল্লাহ।

অর্থ : আমি আল্লাহর ক্ষমা প্রার্থনা করছি।

নিয়ম :প্রতি ওয়াক্ত ফরজ নামাজের সালাম ফেরানোর পর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ ইসতেগফারটি ৩ বার পড়তেন। (মিশকাত)

<২.أَسْتَغْفِرُ اللهَ وَأَتُوْبُ إِلَيْهِ <উচ্চারণ : আস্তাগফিরুল্লাহা ওয়া আতুবু ইলাইহি।

অর্থ : আমি আল্লাহর ক্ষমা প্রার্থনা করছি এবং তাঁর দিকেই ফিরে আসছি।

নিয়ম :এ ইসতেগফারটি প্রতিদিন ৭০/১০০ বার পড়া। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রতিদিন ৭০ বারের অধিক তাওবাহ ও ইসতেগফার করতেন। (বুখারি)

৩.رَبِّ اغْفِرْ لِيْ وَتُبْ عَلَيَّ إِنَّكَ (أنْتَ) التَّوَّابُ الرَّحِيْمُ উচ্চারণ :রাব্বিগ্ ফিরলি ওয়া তুব আলাইয়্যা ইন্নাকা (আংতাত) তাওয়্যাবুর রাহিম।

অর্থ : হে আমার প্রভু! আপনি আমাকে ক্ষমা করুন এবং আমার তাওবাহ কবুল করুন। নিশ্চয় আপনি মহান তাওবা কবুলকারী করুণাময়। নিয়ম :রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মসজিদে বসে এক বৈঠকেই এই দোয়া ১০০ বার পড়েছেন। (আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ, তিরমিজি, মিশকাত)

৪.أَسْتَغْفِرُ اللَّهَ الَّذِي لاَ إِلَهَ إِلاَّ هُوَ الْحَىُّ الْقَيُّومُ وَأَتُوبُ إِلَيْهِ উচ্চারণ :আস্তাগফিরুল্লা হাল্লাজি লা ইলাহা ইল্লা হুওয়াল হাইয়্যুল কইয়্যুমু ওয়া আতুবু ইলায়হি।

অর্থ : আমি ওই আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই, যিনি ছাড়া প্রকৃতপক্ষে কোনো মাবুদ নেই, তিনি চিরঞ্জীব, চিরস্থায়ী এবং তাঁর কাছেই (তাওবাহ করে) ফিরে আসি। নিয়ম :দিনের যে কোনো ইবাদত-বন্দেগি তথা ক্ষমা প্রার্থনার সময় এভাবে তাওবাহ-ইসতেগফার করা। হাদিসে এসেছে- এভাবে তাওবাহ-ইসতেগফার করলে আল্লাহ তাআলা তাকে ক্ষমা করে দেবেন, যদিও সে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পলায়নকারী হয়। (আবু দাউদ, তিরমিজি, মিশকাত)

৫. সাইয়েদুল ইসতেগফার পড়া اللَّهُمَّ أَنْتَ رَبِّي لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ خَلَقْتَنِي وَأَنَا عَبْدُكَ وَأَنَا عَلَى عَهْدِكَ وَوَعْدِكَ مَا اسْتَطَعْتُ أَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا صَنَعْتُ أَبُوءُ لَكَ بِنِعْمَتِكَ عَلَيَّ وَأَبُوءُ لَكَ بِذَنْبِي فَاغْفِرْ لِي فَإِنَّهُ لَا يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلَّا أَنْتَ উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা আংতা রাব্বি লা ইলাহা ইল্লা আংতা খালাক্কতানি ওয়া আনা আবদুকা ওয়া আনা আলা আহ্দিকা ওয়া ওয়াদিকা মাসতাতাতু আউজুবিকা মিন শাররি মা সানাতু আবুউলাকা বিনিমাতিকা আলাইয়্যা ওয়া আবুউলাকা বিজাম্বি ফাগ্ফিরলি ফা-ইন্নাহু লা ইয়াগফিরুজ জুনুবা ইল্লা আংতা।

অর্থ : হে আল্লাহ! তুমিই আমার প্রতিপালক। তুমি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই। তুমিই আমাকে সৃষ্টি করেছ। আমি তোমারই বান্দা আমি যথাসাধ্য তোমার সঙ্গে প্রতিজ্ঞা ও অঙ্গীকারের উপর আছি। আমি আমার সব কৃতকর্মের কুফল থেকে তোমার কাছে আশ্রয় চাই। তুমি আমার প্রতি তোমার যে নেয়ামত দিয়েছ তা স্বীকার করছি। আর আমার কৃত গোনাহের কথাও স্বীকার করছি। তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও। কারন তুমি ছাড়া কেউ গোনাহ ক্ষমা করতে পারবে না। নিয়ম :সকালে ও সন্ধ্যায় এ ইসতেগফার করা। ফজর ও মাগরিবের নামাজের পর এ ইসতেগফার পড়তে ভুল না করা। কেননা হাদিসে এসেছে- যে ব্যক্তি এ ইসতেগফার সকালে পড়ে আর সন্ধ্যার আগে মারা যায় কিংবা সন্ধ্যায় পড়ে সকাল হওয়ার আগে মারা যায়, তবে সে জান্নাতে যাবে।(বুখারি)