Islamic News BD - The Lesson of Peace
সুস্থতার জন্য ঝাড়ফুঁক করা যাবে কি?
বৃহস্পতিবার, ০২ সেপ্টেম্বর ২০২১ ১৪:৫৭ অপরাহ্ন
Islamic News BD - The Lesson of Peace

Islamic News BD - The Lesson of Peace

রুকইয়াহ বা ঝাড়ফুঁক এক ধরনের ইসলামসম্মত আধ্যাত্মিক চিকিৎসা পদ্ধতি। তাই সুস্থতার জন্য কি শরীরে ঝাড়ফুঁক করা যাবে? ঝাড়ফুঁক কি হাদিস দ্বারা প্রমাণিত? এ সম্পর্কে ইসলামের নির্দেশনাই বা কী?

আরবি রুকইয়াহ (الرقية) শব্দের অর্থ হলো ঝাড়ফুঁক। ইসলামসম্মত একটি আধ্যাত্মিক চিকিৎসা পদ্ধতি। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অনেক হাদিস দ্বারা এই রুকইয়াহ বা ঝাড়ফুঁক প্রমাণিত। রুকইয়াহ সম্পর্কে হাদিসের বর্ণনা মতে ইসলামের সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা আছে। হাদিসে পাকে এসেছে-
হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, আমাদের মধ্যে কেউ যখন অসুস্থ হয়ে যেতো, তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অসুস্থ ব্যক্তির গায়ে (শরীরে) তাঁর ডান হাত বুলাতেন এবং বলতেন-
أَذْهِبِ الْبَأْسَ رَبَّ النَّاسِ ، وَاشْفِ أَنْتَ الشَّافِي لا شِفَاءَ إِلا شِفَاؤُكَ ، شِفَاءً لا يُغَادِرُ سَقَمًا উচ্চারণ : আজহিবিল বাসা রাব্বাননাসি; ওয়াশফি আংতাশ শাফি লা শিফাআ ইল্লা শিফাউকা; শিফাআন লা ইউগাদিরু সাক্বামা। অর্থ : হে মানুষের প্রতিপালক! এ রোগ দূর করে দিন এবং আরোগ্য দান করুন। আপনিই আরোগ্য দানকারী। আপনার আরোগ্য ব্যতিত কোনো আরোগ্য নেই। এমন আরোগ্য, যা বাকি রাখে না কোনো রোগ।(বুখারি, মিশকাত)

কোরআনুল কারিমের সুরা ফাতেহা, আয়াতুল কুরসি, সুরা নাস, ফালাক, সুরা ইখলাসসহ অনেক আয়াত আছে যেগুলো পড়ে শরীরে ঝাড়ফুঁক করলে বা পানি পড়ে পান করলে অনেক রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। আবার হাদিসে বর্ণিত অনেক দোয়ার দ্বারা রুকইয়াহ বা ঝাড়ফুঁক করা যায়।সুন্নাহ মতে রুকইয়াহ বা ঝাড়ফুঁক কোরআনের সুরা, আয়াত বা হাদিসে নির্দেশতি কিছু দোয়া পড়ে ঝাড়ফুঁক করা যায়। শারিরীক অসুস্থতা, বিভিন্ন ধরণের রোগ-ব্যাধি, সাপে কাটা, চোখের নজর, জিনের আসর বা জাদু-টোনায় রুকইয়াহ বা ঝাড়ফুঁক খুবই কার্যকরী।

ঝাড়ফুঁক কিভাবে করতে হবে? ঝাড়ফুঁক কিভাবে করতে হবে? পানিতে ফু দিয়ে তা খাওয়াতে হবে নাকি শরীরে ঝাড়ফুঁক দিতে হবে? এ সম্পর্কে বিখ্যাত ইসলামিক স্কলার শায়খ সালেহ আল-ফাউজানকে প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান-
সন্দেহ নেই যে, রুকইয়াহ একটি শরিয়ত সম্মত এবং সবচেয়ে উত্তম চিকিৎসা। কেননা আল্লাহ তাআলা মানুষের জন্য শিফা হিসেবে কোরআন নাজিল করেছেন। এটা মানুষের শরীরের জন্য শিফা, এটা মানুষের গুনাহ মোচনের জন্য অন্তর বা রূহের শিফা। আল্লাহ তাআলা বলেন-
وَنُنَزِّلُ مِنَ الْقُرْآنِ مَا هُوَ شِفَاء وَرَحْمَةٌ لِّلْمُؤْمِنِينَ وَلاَ يَزِيدُ الظَّالِمِينَ إَلاَّ خَسَارًا আমি কোরআনে এমন বিষয় নাজিল করি; যা রোগের সুচিকিৎসা এবং মুমিনের জন্য রহমত। গোনাহগারদের তো এতে শুধু ক্ষতিই বৃদ্ধি পায়। ((সুরা বনি-ইসরাঈল : আয়াত ৮২)
যাই হোক, রুকইয়াহ বা ঝাড়ফুঁকের জন্য রোগীর কাছে কোরআনের সুরা, আয়াত, দোয়া তেলাওয়াত করে সরাসরি শরীরে ফুঁ দেওয়া অথবা তিলাওয়াত করে পানিতে ফুঁ দেওয়া এবং সেই পানি রোগীকে পান করানো; সবই ইসলামে জায়েজ। তবে এ জন্য কিছু সতর্কতামূল শর্ত মেনে চলা জরুরি।

ঝাড়ফুঁকের শর্ত ১. যিনি রুকইয়াহ বা ঝাড়ফুঁক করবেন; তাঁর আকিদাহ যেন সঠিক হয়। রুকইয়াহ বা ঝাড়ফুঁককারী ব্যক্তির যেন কোনো শিরক, বিদআত, কুসংস্কার, ভ্রান্ত আকিদায় বিশ্বাসী না হয়। যদি এসব ঝাড়ফুঁককারীর আকিদায় এ ধরনের গোমরাহী থাকে তবে রুকইয়াহ বা ঝাড়ফুঁক কোনো উপকারে আসবে না। আর এমন ব্যক্তির থেকে ঝাড়ফুঁক নেওয়া বৈধ নয়।
২. রুকইয়াহ বা ঝাড়ফুঁক হতে হবে কোরআন-সুন্নাহ থেকে পাওয়া দোয়ার দ্বারা।
৩. অন্তরে এই বিশ্বাস রাখা যে, শিফা বা রোগ থেকে মুক্তি আল্লাহর পক্ষ থেকে আসে। যিনি রুকইয়াহ বা ঝাড়ফুক করেন তিনি শুধুমাত্র রোগ থেকে মুক্তির জন্য একটি উপকরণ মাত্র।
৪. রুকইয়াহ বা ঝাড়ফুঁ হবে আরবিতে। অন্য কোনো ভাষা, অস্পষ্ট বা দুর্বোধ্য ভাষায় রুকইয়াহ বা ঝাড়ফুঁক গ্রহণযোগ্য নয়। বিশেষ করে রুকইয়াহ বা ঝাড়ফুঁকে কোনোভাবেই শয়তানের নাম নেওয়া বা কোনো জিনকে আহ্বান করা যাবে না। কারণ এটি শিরক।সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, যেসব সুরা, আয়াত বা দোয়া দ্বারা রুকইয়াহ তথা ঝাড়ফুঁক করা দিকনির্দেশনা এসেছে; তা দ্বারা রোগীর শরীরে ঝাড়ফুঁক কিংবা পানি পড়া ব্যবহার করা যাবে। আর তাতে মিলবে শিফা। ইন শা আল্লাহ।আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে বৈধ পন্থায় ইসলামের এ আধ্যাত্মিক চিকিৎসা গ্রহণ করার মাধ্যমে সুন্নাতের ওপর আমল করার তাওফিক দান করুন। কোরআন-সুন্নাহর দিকনির্দেশনা মোতাবেক জীবন পরিচালনা করার তাওফিক দান করুন। আমিন।