সুরা কাফিরূন পবিত্র নগরী মক্কায় কাফের মুশরিকদের কিছু প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে নাজিল হওয়া সুরা। ৬ আয়াত বিশিষ্ট কোরআনের ১০৯নং এ সুরাটির বিষয়বস্তু যেমন ইসলাম ও মুসলমানদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ তেমনি এর আমল এবং উপকারিতাও অনেক বেশি। হাদিসের বর্ণনা থেকেই তা প্রমাণিত। হাদিসে বর্ণিত এর গুরুত্ব ও উপকারিতাগুলো কী?
এক সাহাবি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে আরজ করলেন, আমাকে ঘুমের আগে পড়ার জন্য কোনো দোয়া বলে দিন। তখন তিনি সুরা কাফিরূন পড়তে আদেশ দেন এবং বললেন এটা শিরক থেকে মুক্তিপত্র। (আবু দাউদ : ৫০৫৫; তাফসিরে ইবনে কাসির)
অর্থ ও উচ্চারণসহ সুরা কাফিরূন
بِسْمِ اللّهِ الرَّحْمـَنِ الرَّحِيمِ বিসমিল্লাহির রহমানির রাহিম
শুরু করছি আল্লাহর নামে যিনি পরম করুণাময়, অতি দয়ালু।
قُلْ يَا أَيُّهَا الْكَافِرُونَ কুল ইয়া আইউহাল কাফিরূন
বলুন, হে অবিশ্বাসী সম্প্রদায়,
لَا أَعْبُدُ مَا تَعْبُدُونَ লা আবুদু মাতাবুদুন
আমি ইবাদত করিনা, তোমরা যার ইবাদত কর।
وَلَا أَنتُمْ عَابِدُونَ مَا أَعْبُدُ ওয়ালা আনতুম আবিদুনা মা আবুদ
এবং তোমরাও ইবাদতকারী নও, যার ইবাদত আমি করি।
وَلَا أَنَا عَابِدٌ مَّا عَبَدتُّمْ ওয়া লা আনা আবিদুনা মা আবাদতুম
এবং আমি ইবাদতকারী নই, যার ইবাদত তোমরা কর।
وَلَا أَنتُمْ عَابِدُونَ مَا أَعْبُدُ ওয়ালা আনতুম আবিদুনা মাআবুদ
তোমরা ইবাদতকারী নও, যার ইবাদত আমি করি।
لَكُمْ دِينُكُمْ وَلِيَ دِينِ লাকুম দীনুকুম ওয়ালীয়া দ্বীন তোমাদের কর্ম ও কর্মফল তোমাদের জন্য এবং আমার কর্ম ও কর্মফল আমার জন্য। (মাখরাজসহ বিশুদ্ধ উচ্চারণে সুরাটি শিখে নেওয়া জরুরি )
সুরা কাফিরূন-এর ফজিলত ১. হজরত জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তোওয়াফের পর দুই রাকাত নামাজে ‘কুল ইয়া আইয়ুহাল কাফিরূন ও কুল হুয়াল্লাহু আহাদ’ পড়তেন। (মুসলিম : ১২১৮)
২. রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যখন শয্যা গ্রহণ করবে তখন কুল ইয়া আইয়ুহাল কাফিরূন শেষ পর্যন্ত পড়বে। কেননা উহার মধ্যে শিরক থেকে মুক্ত হওয়ার ঘোষণা রয়েছে (তাবারানি)
৩. হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ কুল ইয়া আইয়ুহাল কাফিরূন ও কুল হওয়াল্লাহু আহাদ সুরা দুইটি দিয়ে ফজরের সুন্নাত নামাজ আদায় করেছেন। (মুসলিম : ৭২৬)
৪. হজরত ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ফজরের আগের দুই রাকাত এবং মাগরিবের পরের দুই রাকাতে এ দুই সুরা পড়তে বিশবারেরও বেশি বা দশবারেরও বেশি শুনেছি।(মুসনাদে আহামদ, ২/২৪) অন্য বর্ণনায় ৪০ বারেরও বেশি অথবা ২৫ বারেরওবেশি শুনেছি। (মুসনাদে আহামদ, ২/৯৫)
৫. হজরত ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে এক পর্যবেক্ষণ করে দেখেছি তিনি ফজরের আগের দুই রাকাতে কুল ইয়া আইয়ুহাল কাফিরূন ও কুল হুয়াল্লাহু আহাদ এ দুই সুরা পড়তেন। (তিরমিজি : ৪১৭; ইবনে মাজাহ : ১১৪৯; মুসনাদে আহমাদ : ২/৯৪)
৬. এক সাহাবি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে আরজ করলেন, আমাকে ঘুমের আগে পড়ার জন্য কোনো দোয়া বলে দিন। তখন তিনি সুরা কাফিরূন পড়তে আদেশ দেন এবং বললেন এটা শিরক থেকে মুক্তিপত্র। (আবু দাউদ : ৫০৫৫)
৭. রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, কুল ইয়া আইয়ুহাল কাফিরূন কুরআনের এক চতুর্থাংশ। (তিরমিজি : ২৮৯৩, ২৮৯৫)
সুরা নাজিলের প্রেক্ষাপট রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহ তাআলার একত্ববাদ তথা তাওহিদের বাণী প্রচার করেন। এই বাণী প্রচারে দাওয়াত দেওয়ার সময় মক্কার কুরাইশরা বিভিন্নভাবে তা প্রচারে বাধা সৃষ্টি করে। বিভিন্ন প্রচেষ্টা ও পরিকল্পনায় যখন তারা ব্যর্থ, তখন তারা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে একটি প্রস্তাব দেয়; যা ছিল ইসলাম ও মুসলমানের জন্য পুরোপুরি অনৈতিক।
তারা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে তাওহিদের দাওয়াত ও কুফরির মধ্যে একটি আপোসের প্রস্তাব দেয়। অনৈতিক এ প্রস্তাবটি ছিল এমন-
এক বছর তারা এবং সবাই তাদের মূর্তি পূজা করবে এবং আর এক বছর তারা এবং সবাই আল্লাহর ইবাদত করবে। (নাউজুবিল্লাহ)
এই অনৈতিক ও হাস্যকর প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে মহান আল্লাহ তাআলা প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে পবিত্র এই সুরাটি নাজিল করেন এবং আল্লাহ তাআলা নির্দেশ দেন- রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যেন তাদের প্রস্তাব আকিদা ও ধর্ম থেকে সম্পূর্ণভাবে নিজেকে মুক্ত ঘোষণা করেন। আর এ সুরাটি অবতীর্ণ হওয়ার পর পরই মক্কার কিছু মুশরিক ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন এবং তারা আল্লাহর একত্ববাদকে সাদরে গ্রহণ করেছিলেন।
আমল, বৈশিষ্ট্য ও ফজিলতের দিক থেকে সুরাটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ। শিরক মুক্ত ঈমান নিয়ে বেঁচে থাকার এবং মৃত্যুবরণ করার এক কার্যকরী টনিক। এ কারণেই রাতে ঘুমানোর আগে শিরকমুক্ত বিশ্বাস নিয়ে ঘুমাতে যাওয়ার জন্য এ সুরাটি পড়ার নির্দেশ দিয়েছেন বিশ্বনবি।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে সুরা কাফিরূনের যথাযথ আমল করার তাওফিক দান করুন। হাদিসের আমলে জীবন সাজানোর তাওফিক দান করুন। আমিন।