রাসূল সা: বলেন, যে ব্যক্তি কোনো উলঙ্গ মুসলমানকে কাপড় পরিধান করাবে আল্লাহ তাকে জান্নাতের সবুজ কাপড় পরিধান করাবেন। যেকোনো ক্ষুধার্ত মুসলমানকে আহার করাবে আল্লাহ তাকে জান্নাতের ফল আহার করাবেন। যেকোনো পিপাসার্ত মুসলমানকে পানি পান করাবে আল্লাহ তাকে ‘রহিকে মাখতুম’ পানি পান করাবেন। (রহিকে মাখতুম হলো মেশক আম্বর দ্বারা মোহরকৃত বিশুদ্ধ পানি, যা জান্নাতিদেরকে পান করতে দেয়া হবে)।
নামাজ, রোজা, হজ, জাকাত ইত্যাদি যেমন ইসলামী শরিয়তে ফরজ বিধান এবং ইবাদত তেমনি মানবসেবা করাও ফরজ বিধান ও ইবাদত। নামাজ, রোজা, হজ ও জাকাত ইত্যাদি আল্লাহর বিধান মানলে যেমন তা ইবাদত হবে, বিনিময়ে সওয়াব ও পুরস্কার পাওয়া যাবে, ঠিক তেমনিভাবে মানুষের সেবা করলে তাও ইবাদত হিসেবে গণ্য হবে এবং এর যথাযথ সওয়াব বা পুরস্কার পাওয়া যাবে।
বিষয়টি পরিষ্কারভাবে না বোঝার কারণে ইসলামের এই গুরুত্বপূর্ণ বিধান ও ইবাদত থেকে আমরা অনেকেই পিছিয়ে আছি। তাই আজকের লিখাই বিষয়টির গুরুত্ব ও ফজিলত সংক্ষিপ্তভাবে তুলে ধরার চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ।
মানবসেবা কী : যে মানুষের যা প্রয়োজন, মানুষের সেই প্রয়োজন পূরণ করাটাই মানবসেবা। আরো পরিষ্কারভাবে বোঝার জন্য কয়েকটি উদাহরণ দিচ্ছি, যেমন
১. ক্ষুধার্ত মানুষের খাবার প্রয়োজন তাকে খাবার দেয়াই মানবসেবা;
২. বস্ত্রহীন মানুষের বস্ত্র প্রয়োজন, তাকে বস্ত্র দেয়াই মানবসেবা;
৩. ঘরহীন মানুষের ঘরের প্রয়োজন, তাকে ঘর করে দেয়াই মানবসেবা;
৪. বন্যার্ত মানুষের ত্রাণ প্রয়োজন, তাদের ত্রাণ দেয়াই মানবসেবা;
৫. বিয়ের উপযুক্ত পাত্র-পাত্রীর প্রয়োজন উপযুক্ত পাত্র-পাত্রী, তাদের সে ব্যবস্থা করাই মানবসেবা;
৬. বিধবা নারীর ভরণ-পোষণের দায়িত্ব নেয়াও মানবসেবা; ৭. পথহারা মানুষকে পথের দিশা দেয়া প্রয়োজন, এটিও মানবসেবা।
এক কথায় মানুষের কল্যাণের চিন্তা করা, কাজ ও কথা বলাই মানবসেবা। এই বিষয়ে আল্লাহ তায়ালার ঘোষণা হচ্ছে আর তোমাদের আবির্ভাব করাই হয়েছে মানবজাতির কল্যাণের জন্য (সূরা আল ইমরান-১১০)। এই আয়াতে মানুষ শ্রেষ্ঠ হওয়ার মানদণ্ড সাব্যস্ত করা হয়েছে মানুষের কল্যাণে কাজ করাকে। হাদিস শরিফে এসেছে সব সৃষ্টি আল্লাহর পরিবার, সুতরাং সৃষ্টির মধ্যে আল্লাহর কাছে সেই সর্বাধিক প্রিয় যে আল্লাহর পরিবারের প্রতি দয়া করে তথা সেবা করে (শুআবুল ঈমান)।
মুসলিম শরিফের আরেক হাদিসে বলা হয়েছে তোমাদের কেউ পূর্ণাঙ্গ মুমিন হতে পারবে না যতক্ষণ পর্যন্ত সে নিজের জন্য যা ভালোবাসে তা অন্য মুসলমানের জন্য ভালো বাসবে। এই হাদিসের বর্ণনা থেকে বোঝা গেল, নিজের জন্য আমি যা ভালোবাসি আমার আরেক মুসলমান ভাইয়ের জন্য যদি সেরকমটা ভালো না বাসি, নিজের যে রকমটা চাই, অপরের জন্য যদি সেরকমটা না চাই তাহলে আমার ঈমান পূর্ণাঙ্গ হবে নামানুষ নিজের জন্য কী ভালোবাসে? মানুষ নিজের উন্নতি, ধন-সম্পদ বৃদ্ধি, সুখ-শান্তি, সন্তানদের সুপ্রতিষ্ঠিত হওয়াসহ সব কিছুই ভালো চায়। আমরা প্রত্যেকে নিজের জন্য এগুলো ভালোবাসি। অতএব অন্যের জন্যও এগুলো ভালোবাসতে হবে। আমি নিজের জন্য বিপদ-আপদ চাই না, অন্যের জন্যও অন্যায়ভাবে তা চাইতে পারব না। আমি আমার কল্যাণের যেমন চেষ্টা করি অন্যের জন্যও কল্যাণের চেষ্টা করতে হবে। এক কথায় সবাইকে নিজের মতো করে দেখতে হবে।ইসলামের দৃষ্টিতে এটি অনেক বড় বিষয়। এমনকি এটিকে ঈমানের অঙ্গ বলা হয়েছে। এমন হতে না পারলে আমরা মুমিন নই। মানবসেবার কথা এত শক্তভাবে আর কোনো ধর্মে বলা হয়নি। একমাত্র ইসলাম ধর্মেই মানবসেবার কথা বেশি বলা হয়েছে। আমরা মুসলমানরা পুরোপুরি করতে পারি না বা করি না। সেটি ভিন্ন কথা কিন্তু ইসলামে আছে, আমলে না থাকলে সেটা ইসলামের দোষ নয়, আমাদের দোষ। ইসলামে মানবসেবা যেমন গুরুত্বপূর্ণ বিধান ও ইবাদত তেমনি অনেক ফজিলতের কাজ।