Islamic News BD - The Lesson of Peace
সবচেয়ে প্রিয় বস্তু ব্যয় সম্পর্কে আল্লাহ কী নির্দেশ দিয়েছেন?
রবিবার, ১৯ ডিসেম্বর ২০২১ ১৭:০৫ অপরাহ্ন
Islamic News BD - The Lesson of Peace

Islamic News BD - The Lesson of Peace

কোরআন আল্লাহর কিতাব। মানুষের জীবন বিধান ও পথনির্দেশ। নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি নাজিল হওয়া এ মহাগ্রন্থের প্রথম অনুসারী ও সম্বোধিত ব্যক্তিরা হলেন সাহাবায়ে কেরাম। কোরআনের বিধান ও নির্দেশ পালনে তারা সবসময় তৈরি থাকতো। এমনই একটি নির্দেশ হলো- সবচেয়ে প্রিয় বস্তু আল্লাহর পথে ব্যয়। আল্লাহর রাস্তায় সবচেয়ে প্রিয় বস্তু ব্যয় করায় কী ফল রয়েছে, তা ওঠে এসেছে কোরআনের এ বর্ণনায়। আল্লাহ তাআলা বলেন-

لَنۡ تَنَالُوا الۡبِرَّ حَتّٰی تُنۡفِقُوۡا مِمَّا تُحِبُّوۡنَ وَ مَا تُنۡفِقُوۡا مِنۡ شَیۡءٍ فَاِنَّ اللّٰهَ بِهٖ عَلِیۡمٌ তোমরা কখনও সওয়াব বা পুণ্য অর্জন করতে পারবে না যতক্ষণ না তোমাদের প্রিয় জিনিস থেকে আল্লাহর পথে ব্যয় করো। আর তোমরা যা কিছু ব্যয় করো নিশ্চয়ই আল্লাহ সে সম্বন্ধে খুব ভালোভাবেই অবগত। (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ৯২)

আয়াতটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটি মুমিন মুসলমানের জন্য আবশ্যক পালনীয় বিশেষ কয়েকটি দিকনির্দেশনা। এটি কোরআনুল কারিমের তৃতীয় সুরা আল ইমরান-এর ৯২তম আয়াত। এ আয়াতে আল্লাহর রাস্তায় সর্বোত্তম জিনিস ব্যয় করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যার বিনিময়ে পূণ্য বা প্রতিদান অর্জনের মহাসুযোগ রয়েছে।

কোরআনের প্রতিটি আয়াতই সাহাবায় কেরামকে সম্বোধন করেই নাজিল করা হয়েছে। কারণ সাহাবায়ে কেরাম ছিলেন কোরআনি নির্দেশের প্রথম সম্বোধিত এবং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রত্যক্ষ সঙ্গী।কোরআনের নির্দেশ পালনের জন্য তারা ছিলেন উম্মুখ। আলোচ্য আয়াত নাজিল হওয়ার পর সাবাহাদের প্রত্যেকেই নিজ নিজ সহায় সম্পত্তির প্রতি লক্ষ্য করলেন। ভাবতে লাগলেন কোনোটি তাদের কাছে সর্বাপেক্ষা প্রিয়। এরপর তারা তা আল্লাহর পথে ব্যয় করার জন্য রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে আবেদন করতে লাগলেন।মদিনার আনসার সাহাবাদের মধ্যে হজরত আবু তালহা রাদিয়াল্লাহু আনহু বেশ ধনী ছিলেন। মসজিদে নববি সংলগ্ন বিপরীত দিকে তার একটি বাগান ছিল। এ বাগানে বীরাহা নামে একটি কূপ ছিল।

বর্তমানে এটি মসজিদের নববির বাব আল-মাজিদ্দির বাদশাহ ফাহদ গেট দিয়ে ভেতরে মসজিদে ঢুকার পর পরই সামান্য বাম পার্শ্বে এ স্থানটি পড়ে। পরিচিতির সুবিধার্থে দুই থামের মাঝখানের তিনটি গোল চক্কর দিয়ে তার স্থান নির্দেশ করা আছে।রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মাঝে মাঝে এ বাগানে পদার্পণ করতেন এবং বীরহা কূপের পানি পান করতেন। এ কূপের পানি তিনি পছন্দও করতেন। আনসার সাহাবি হজরত আবু তালহার এ বাগান অত্যন্ত মূল্যবান, উর্বর এবং তার বিষয়-সম্পত্তির মধ্যে সর্বাপেক্ষা প্রিয় ছিল।আলোচ্য আয়াত নাজিল হওয়ার পর তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের খেদমতে হাজির হয়ে বললেন, আমার সব বিষয়-সম্পত্তির মধ্যে বীরহা কূপ আমার কাছে সর্বাপেক্ষা প্রিয়। আমি এটি আল্লাহর পথে ব্যয় করতে চাই। আপনি যে কাজে পছন্দ করেন, এটি তাতেই খরচ করুন।রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন- আমার মতে, বিশাল বড় মুনাফার এ বাগানটি তুমি নিজ আত্মীয়-স্বজনের মধ্যে বন্টন করে দাও। হজরত আবু তালহা এ পরামর্শ গ্রহণ করেন। (বুখারি, মুসলিম)

নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এ হাদিস থেকে একটি বিষয় জানা গেল যে, শুধু ফকির-মিসকিনকে দান করলেই পুণ্য হয় এমনটি নয় বরং পরিবার-পরিজন ও আত্নীয়-স্বজনকে দান করাও বড় পুণ্য ও সওয়াবের কাজ। (তাফসিরে জাকারিয়া)

পুণ্য বলতে কী বোঝানো হয়েছে?

আয়াতে পুণ্য বলতে এখানে সৎকাজ অথবা জান্নাতকে বোঝানো হয়েছে। (ফাতহুল ক্বাদির)

যখন এই আয়াত নাজিল হয়, তখন যিনি মদিনার বিশিষ্ট সাহাবাদের একজন হজরত আবু ত্বালহা আনসারী রাদিয়াল্লাহু আনহু নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে উপস্থিত হয়ে বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! বীরহা বাগানটি হল আমার কাছে সর্বাপেক্ষা প্রিয় বস্তু। সেটাকে আমি আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে সাদাকা করছি। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, সে তো বড়ই উপকারী সম্পদ। আমার মত হল- ওটাকে তুমি তোমার আত্মীয়দের মধ্যে বণ্টন করে দাও। তাই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পরামর্শ অনুযায়ী সেটাকে তিনি স্বীয় আত্মীয়-স্বজন এবং চাচাতো ভাইদের মধ্যে বণ্টন করে দিলেন। (মুসনাদ আহমাদ)

এভাবে আরো অনেক সাহাবি তাঁদের প্রিয় জিনিস আল্লাহর পথে ব্যয় করেছেন। مِمَّا تُحِبُّوْنَ এ মিন (থেকে) শব্দ তথা কিছু অংশ বুঝানোর অর্থে ব্যবহার হয়েছে। অর্থাৎ, পছন্দনীয় ও প্রিয় জিনিসের সবটাকেই ব্যয় করে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়নি। বরং তা থেকে কিছু অংশকে ব্যয় করতে বলা হয়েছে।

সুতরং সাদকা করলে ভাল জিনিসই করা উচিত। এটা হল সর্বশ্রেষ্ঠ ও পরিপূর্ণ মর্যাদা অর্জনের পথ। তবে এর অর্থ এই নয় যে, নিম্নমানের জিনিস অথবা স্বীয় প্রয়োজনের অতিরিক্ত জিনিস কিংবা ব্যবহৃত পুরাতন জিনিস সাদাকা করা যাবে না বা তার নেকি পাওয়া যাবে না। বরং এই ধরনের জিনিসও সাদাকা করা জায়েয এবং তাতে অবশ্যই নেকি পাওয়া যাবে। তবে প্রিয় বস্তু ব্যয় করার মধ্যে বেশি ফজিলত ও পূর্ণতা রয়েছে।আল্লাহর রাস্তায় দান ভাল ও মন্দ যে জিনিসই হোক; আল্লাহ তা জানেন এবং সেই অনুযায়ী তিনি প্রতিদান দেবেন।আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে কোরআনের দিকনির্দেশনা অনুযায়ী উত্তম জিনিস আল্লাহর পথে খরচ করার তাওফিক দান করুন। কোরআনের নির্দেশ মেনে প্রতিবেশি, আত্মীয়-স্বজন, গরিব-অসহায়ের দিকে উত্তম দানের হাত বাড়িয়ে দেওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।