Islamic News BD - The Lesson of Peace
মৃত ব্যক্তির নামে দান-সাদকা করলে কি সওয়াব হবে?
শনিবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২১ ১৭:১৫ অপরাহ্ন
Islamic News BD - The Lesson of Peace

Islamic News BD - The Lesson of Peace

কোনো ব্যক্তি মারা গেছে। তার ছেলে-মেয়ে বা ওয়ারিসদের মধ্যে যারা বেঁচে আছে; তারা যদি মৃত ব্যক্তির কল্যাণের উদ্দেশ্যে দান-সাদকা করে তবে তাতে কি মৃত ব্যক্তির আমলনামায় সওয়াব লেখা হবে? এ সম্পর্কে ইসলামের দিকনির্দেশনাই বা কী?

মৃত ব্যক্তির রেখে যাওয়া কোনো ছেলে-মেয়ে বা ওয়ারিস যদি তার কল্যাণের উদ্দেশ্যে গরিব-অসহায়, ইয়াতিমখানা বা কাউকে দান-সাদকা করে তবে তার আমলনামায় সওয়াব যোগ হবে কিনা এ সম্পর্কে ইসলামের সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা রয়েছে।

হ্যাঁ, এতে মৃতব্যক্তির উপকার হবে। এ দান-সাদকায় তার আমলনামায় সাওয়াব হবে বলে সুস্পষ্ট হাদিস দ্বারা বিষয়টি প্রমাণিত। মৃত ব্যক্তির উদ্দেশ্যে দান-সদকা করা হলে সে কবরে তার দ্বারা উপকৃত হবে এবং তার আমলনামায় সওয়াব লেখা হবে। হাদিসে পাকে এসেছে-
হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, এক ব্যক্তি নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলেন যে-
إِنَّ أُمِّى افْتُلِتَتْ نَفْسُهَا ، وَأَظُنُّهَا لَوْ تَكَلَّمَتْ تَصَدَّقَتْ ، فَهَلْ لَهَا أَجْرٌ إِنْ تَصَدَّقْتُ عَنْهَا قَالَ نَعَمْ আমার মা হঠাৎ মৃত্যুবরণ করেছে। আমার ধারণা, মৃত্যুর আগে কথা বলতে পারলে তিনি দান করতেন। এখন আমি যদি তার পক্ষ থেকে দান-সাদকা করি তবে কি তিনি সওয়াব পাবেন? তিনি বলেন, হ্যাঁ (বুখারি, মুসলিম)

এমন কিছু আমল আছে, যার ফলে মানুষ মারা গেলেও তার আমলনামায় নেকি বা সওয়াব যোগ হতে থাকবে। এর মধ্যে অন্যতম হলো- যদি কেউ নেক সন্তান বা দান-সাদকার করার মতো ওয়ারিশ রেখে যায়। আর তারা যদি মৃতব্যক্তির রেখে যাওয়া সম্পদ কিংবা নিজ সম্পদ থেকে মৃতব্যক্তির উদ্দেশ্যে কোনো দান-সাদকা করে তবে তাদের আমলনামায় সওয়াব যোগ হতে থাকবে। বিষয়টি হাদিসে পাকে ঘোষণা করেছেন প্রিয় নবি-
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, মুমিনের মৃত্যুর পরও তার যেসব নেক আমল ও নেক কাজের সাওয়াব তার কাছে সবসময় পৌঁছতে থাকবে, তাহলো-
১. ইলম বা জ্ঞান : যা সে শিখেছে এবং প্রচার করেছে;
২. নেক সন্তান : যাকে সে দুনিয়ায় রেখে গেছে;
৩. কুরআন : যা সে উত্তরাধিকারীদের জন্য রেখে গেছে;
৪. মাসজিদ : যা সে নির্মাণ করে গেছে;
৫. মুসাফিরখানা : যা সে পথিক মুসাফিরদের জন্য নির্মাণ করে গেছে;
৬. কূপ বা ঝর্ণা : যা সে খনন করে গেছে মানুষের পানি ব্যবহার করার জন্য এবং
৭. দান-খয়রাত : যা সুস্থ ও জীবিতাবস্থায় তার ধন- সম্পদ থেকে দান করে গেছে।
মৃত্যুর পরও এসব নেক কাজের সাওয়াব তার কাছে পৌঁছতে থাকবে। (ইবনু মাজাহ, ইবনু খুজায়মা, মিশকাত)

সুতরাং মৃতব্যক্তি জীবিত থাকা অবস্থায় কিংবা মৃতব্যক্তির ওয়ারিশদের উচিত, দানের ক্ষেত্রে এমন খাতে দান-সাদকা করা; যা উত্তম ও দীর্ঘ দিন বা স্থায়ীভাবে মানুষ উপকৃত হবে। বিনিময়ে মৃতব্যক্তি পেতে থাকবে সওয়াব ও উপকার। তা হতে পারে এমন-
১. মানুষের উপকারে পানির ব্যবস্থা করা। যেমন- টিউবওয়েল-গভীর নলকূপ বা শেলো স্থাপন।
২. ইয়াতিমখানা বা মুসাফিরখানা প্রতিষ্ঠা করা। যেখান থেকে ইয়াতিম ও মুসাফিররা সার্বিক উপকার পাবে।
৩. অসহায় মানুষের জন্য বাসস্থান তৈরি।
৪. গরিব ইলম শিক্ষার্থীর জন্য সাহায্য-সহযোগিতা করা। তবে এক্ষেত্রে কোরআন-সুন্নাহভিত্তিক নৈতিক শিক্ষায় বড় করে গড়ে তোলা।
৫. দাতব্য হাসপাতাল নির্মাণ করা। যা দুঃস্থ-অসহায় মানুষের জন্য বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা প্রদান।
৬. মাদরাসা, মসজিদ, ইয়াতিমখানা, হাসপাতাল ও গোরস্থানের জন্য জমি দান করা।
৭. মসজিদ নির্মাণ বা তাতে অংশ গ্রহণ।
৮. মাদরাসা নির্মাণ বা তাতে অংশ গ্রহণ।
৯. ইসলামি গ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠা বা কোনো গ্রন্থাগারে ইসলামি বই-পুস্তক কিনে দেওয়া।
১০. ইসলামি বই-কিতাব কিনে বিতরণ করার পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের এই যুগে সুন্দর ইসলামিক ওয়েবসাইট, অ্যাপ ইত্যাদি তৈরি করা বা তা তৈরিতে সহযোগিতা করা।
১১. মৃতব্যক্তির নামে দান-সাদকার পাশাপাশি তার নামে ওমরা, হজ ও কোরবানি করা। কারণ এগুলোর প্রতিও প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দিকনির্দেশনা রয়েছে।

সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, মৃতব্যক্তির কল্যাণ কামনায় নেকি বা প্রতিদান হবে এমন কাজ বেশি বেশি করা। নিজেদের জন্য পরকালে মুক্তি কামনায় উল্লেখিত কাজে বেশি বেশি অংশগ্রহণ করা।আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে হাদিসের দিকনির্দেশনা অনুযায়ী মৃত্যু পরবর্তী সওয়াব পেতে যথাযথ করণীয়গুলো অব্যাহত রাখার তাওফিক দান করুন। ভালো কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত থেকে পরকালে মুক্তি লাভের তাওফিক দান করুন। আমিন।