Islamic News BD - The Lesson of Peace
সুন্দর নাম রাখা ইসলামে খুবই গুরুত্বপূর্ণ
মঙ্গলবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২১ ১৬:১৫ অপরাহ্ন
Islamic News BD - The Lesson of Peace

Islamic News BD - The Lesson of Peace

সুন্দর ও উত্তম নাম পাওয়া প্রতিটি নবজাতকের জন্মগত অধিকার। আর সন্তানের সুন্দর নাম রাখা মা-বাবার ধর্মীয় ও নৈতিক দায়িত্ব। কেননা ইসলামে সুন্দর নাম রাখার গুরুত্ব অনেক বেশি। নাম দিয়েই ব্যক্তির প্রথম পরিচয় ফুটে ওঠে। বাস্তব জীবনেও সুন্দর নামের প্রভাব পড়ে। তাই নামের গুরুত্ব প্রত্যেক বিবেকবান মাত্রই সন্দেহাতীতভাবে স্বীকার করে। নবজাতকের সুন্দর ও উত্তম নাম রাখা ইসলামের একটি সুন্দর নিদর্শনও বটে।

নাম হচ্ছে চিহ্ন। নামকরণকৃত বস্তুর প্রতি ইঙ্গিত। এটা এমন একটা চিহ্ন বা শিরোনাম যা দ্বারা একজন থেকে অন্যজনকে পৃথক করে। এ জন্য নাম রাখা হয় নবজাতকের। নাম রাখার ব্যাপারে উত্তম হচ্ছে যে-
নবজাতক জন্মের সাত দিনের মধ্যে সুন্দর নাম রাখা, আকিকা দেওয়া এবং মাথামুণ্ডন করা।

জন্মের সপ্তম দিনে নাম রাখা ভালো। নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন- জন্মের সপ্তম দিন নবজাতকের নাম রাখো। (তিরমিজি) আবার কেউ আগে-পরে নাম রাখলেও কোনো ক্ষতি নেই। যদি কেউ জন্মের আগেও নাম নির্ধারণ করে তাতেও বাধা নেই। (আবু দাউদ)

নাম রাখার পর থেকেই প্রতিটি নবজাতক নিজ নামে পরিচিতি লাভ করে। শুধু শিশুই নয়, তার বাবা-মামাও তার নামের মাধ্যমে পরিচিতি লাভ করে। এই নামের গুরুত্ব এতবেশি যে, কোনো মানুষ যখন মৃত্যুবরণ করে তখন তার নাম-নিশানার মৃত্যু হয় না। তা রয়ে যায় যুগের পর যুগ।

নাম হতে হবে সুন্দর অর্থবহ এবং শ্রুতিমধুর শিশুর নাম সুন্দর, অর্থবহ, শ্রুতিমধুর ও সহজ হওয়া। মন্দ অর্থবহ বা গুণাগুণ সংবলিত নাম রাখা উচিত নয়। (বুখারি) তাই ক্ষতিকারক ও আল্লাহর গজব সংবলিত ফণী, তিতলি ইত্যাদি কারো নাম রাখা বুদ্ধিমানের কাজ হতে পারে না। কেননা নামের প্রভাব মানুষের সত্তা ও গুণাগুণের ওপরও পড়ে। আর হাশরের ময়দানে প্রত্যেককে তার নাম ধরেই ডাকবেন। (আবু দাউদ)
নামের মাধ্যমে শিশুর সঙ্গে পিতা-মাতার বন্ধন তৈরি হয়। পিতা-মাতা ও পরিবার ঐ নামেই ডাকে যে নাম তারা শিশুর জন্য নির্বাচন করে। তাইতো প্রাচীনযুগে বলা হতো- তোমার নাম থেকেই তোমার পিতার পরিচয় পাওয়া যায়।

ইসলামি শরিয়ত নামের ব্যাপারেও বিশেষ গুরুত্বারোপ করেছে। কারণ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পুরুষ ও নারী সাহাবিদের একটি বিশেষ অংশের নাম পরিবর্তন করেছেন। এমনকি তিনি মালিকুল আমলাক (রাজাদের রাজা) ও অনুরূপ নাম রাখতে নিষেধ করেছেন। তিনি বলেন, আল্লাহর কাছে সবচেয়ে নিকৃষ্ট ঐ ব্যক্তির নাম, যার নাম রাখা হয়েছে মালিকুল আমলাক। (মুসনাদ আস সাহাবা)
কারো নাম ভালো ও সুন্দর হলে নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আনন্দিত হতেন এবং তাকে সুলক্ষণ মনে করতেন। আবার যেসব নামে আল্লাহর দাসত্বের ঘোষণা থাকতো সেসব নাম তিনি রাখতে বলতেন। যেমন- আবদুল্লাহ, আবদুর রহমান ও আব্দুর রহিম। হাদিসে পাকে এসেছে-
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় নাম আবদুল্লাহ আবদুর রহমান। (মুসলিম, তিরমিজি, আবু দাউদ)

আল্লাহ কর্তৃক বান্দার নামকরণ ও নামের শিক্ষা কোরআনুল কারিমের দুইটি ভিন্ন আয়াতে বিষয় দুইটি ওঠে এসেছে। যেখানে মহান আল্লাহ নামের শিক্ষা দিয়েছেন। আবার কোনো কোনো বান্দার নাম কী রাখতে হবে তাও বলে দিয়েছেন। তাহলো-
১. মহান আল্লাহ আদম আলাইহিস সালামকে সৃষ্টি করে তাকে সৃষ্টি জগতের সবকিছুর নাম শিক্ষা দিয়েছেন। নাম শিক্ষা দেয়ার মাধ্যমে সৃষ্টি জগৎ সম্পর্কে তাকে জ্ঞাত করান এবং যার মাধ্যমে ফেরেশতাদের উপর তিনি তাঁর শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠা করেন। আল্লাহ বলেন, আর তিনি (আল্লাহ) আদমকে সববস্তু সামগ্রীর নাম শিক্ষা দিলেন। (সুরা বাকারা : আয়াত ৩১)
২. আবার আল্লাহ কিছু ক্ষেত্রে তাঁর প্রিয় বান্দাদের নাম কী রাখতে হবে তা নিজেই নামকরণ করে দিয়েছেন। এটি আল্লাহর পছন্দনীয় নাম। যেমন- ইয়াহ্ইয়া আলাইহিস সালামের ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা তার বাবাকে লক্ষ্য করে বলেন-
হে জাকারিয়া! আমি তোমাকে এক পুত্র সন্তানের সুসংবাদ দিচ্ছি। তার নাম হবে ইয়াহইয়া। এর আগে এ নামে আমি কারো নামকরণ করিনি। (সুরা মারইয়াম : আয়াত ৭)

সুতরাং দুনিয়াতে যেহেতু মানুষ তার নাম দ্বারা পরিচিত হবে; আবার আখেরাতেও তাকে নাম ধরে ডাকা হবে। এমনকি ব্যক্তির মৃত্যুর পরও তার নাম উল্লেখ করেই পরিচয় দেওয়া হবে। এ নামেই তার পরিচিতি বেঁচে থাকবে। তাই নবজাতকের জন্য সুন্দর ও অর্থবহ নাম রাখাই আবশ্যক।

আল্লাহ তাআলা সমগ্র মুসলিম উম্মাহকে নামের গুরুত্ব অনুধাবন করার তাওফিক দান করুন। সন্তান-সন্তুতির জন্য অর্থবহ সুন্দর ও উত্তম নাম রাখার তাওফিক দান করুন। আমিন।