আত্মীয়-স্বজন মারা গেলে হাউ-মাউ করে উচ্চ আওয়াজে কান্নাকাটি-আহাজারি করা ইসলামে নিষিদ্ধ। যদিও আপনজনের মৃত্যু সীমাহীন কষ্টের। এ সময় যারা ধৈর্য ধরবেন আল্লাহ তাআলা তাদের উত্তম বিনিময় দান করবেন। তবে আত্মীয়-স্বজনের মৃত্যুতে শোক পালন করা যাবে। কিন্তু কতদিন পালন করা যাবে এ শোক?
হ্যাঁ, ইসলাম আপনজনের মৃত্যুতে শোক প্রকাশের অনুমোদন দেয়। তিনদিন পর্যন্ত শোক পালন করা যাবে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মৃত্যুর পর হজরত আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু তাঁকে চুমু দিয়েছিলেন এবং শোক পালনে তিন দিন কেঁদেছিলেন। হাদিসে এসেছে-
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে জাফর রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হজরত জাফরের পরিবারকে শোক প্রকাশে তিন দিনের অবকাশ দিয়েছিলেন যে তিনি তাদের কাছে আসবেন। এরপর (তিনদিন পর) তাদের কাছে আসলেন এবং বললেন- আজকের দিনের পর তোমরা আমার ভাইয়ের প্রতি আর কেঁদো না।শোকের সময় ধৈর্যধারণ করা সর্বোত্তম আমল। এ আমলের পুরস্কার দিয়েই মহান আল্লাহ নিজে সন্তুষ্ট হবেন। তাই ধৈর্যধারণ করে শোক প্রকাশে-ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন তথা নিশ্চয়ই আমরা আল্লাহর জন্য এবং আমরা তাঁরই সান্নিধ্যে ফিরে যাব এই বলে আল্লাহর দিকে ধাবিত হওয়া। আল্লাহ কী পুরস্কার দিয়ে সন্তুষ্ট হবে বলে উল্লেখ করেছেন হাদিসে?
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, মহান আল্লাহ বলেন আমি যার কোনো প্রিয়জনকে উঠিয়ে নিই আর সে ধৈর্য ধারণ করে এবং নেকির আশা রাখে আমি তাকে জান্নাত দিয়েই সন্তুষ্ট হবো। (তিরমিজি) নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের শোক
নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবনেও বার বার শোক এসেছে। তিনি বিভিন্ন সময়ে তাঁর একান্ত প্রিয়জনদের হারিয়েছেন। তিনি জন্মের আগেই তার বাবাকে হারান। জন্মের ৬ বছর বয়সে মমতাময়ী মাকে হারান। আট বছর বয়সে দাদাকে হারিয়ে একেবারে নিঃসঙ্গ হয়ে পড়েন।এরপর তাঁর লালনপালনের দায়িত্ব গ্রহণ করেন চাচা আবু তালিব। নবুয়তের দশম বছরের রমজান, মতান্তরে শাওয়াল মাসে নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর চাচা আবু তালিবকে হারান।চাচার মৃত্যুর শোক কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই তিন বা পাঁচ দিনের ব্যবধানে তাঁর একান্ত প্রিয়জন, সহধর্মিণী হজরত খাদিজাতুল কুবরা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে হারান। তাঁর জীবনে চাচা আবু তালিব ও স্ত্রী খাদিজাতুল কুবরার অবদান ছিল সবচেয়ে বেশি। কেননা তারা দুজনই সবসময় নবিকে রেসালাতের কাজে শক্তি-সাহসসহ সার্বিক সর্বোচ্চ সহযোগিতা করতেন। এ কারণেই ইসলামের ইতিহাসে ওই বছরকে আমুল হুজুন বা শোকের বছর হিসেবে অভিহিত করা হয়।