Islamic News BD - The Lesson of Peace
কোরআনের ঘোষণায় শ্রেষ্ঠ উম্মত কারা?
সোমবার, ৩১ জানুয়ারী ২০২২ ১৬:৪৮ অপরাহ্ন
Islamic News BD - The Lesson of Peace

Islamic News BD - The Lesson of Peace

মুমিন মুসলমান শ্রেষ্ঠ উম্মত। নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অনুসারীরাই শ্রেষ্ঠ উম্মত। আর শ্রেষ্ঠ উম্মতের কাজও হবে সেরা এবং সর্বোত্তম। মহান আল্লাহ তাআলা সেরা ও উত্তম কাজ করার জন্য মুসলিম উম্মাহকে দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন। জীবন ব্যবস্থা হিসেবে দিয়েছে পবিত্র কোরআন। তাদের কাজ কী হবে? সে দিকনির্দেশনা কোরআনুল কারিমে এভাবে তুলে ধরেছেন-

کُنۡتُمۡ خَیۡرَ اُمَّۃٍ اُخۡرِجَتۡ لِلنَّاسِ تَاۡمُرُوۡنَ بِالۡمَعۡرُوۡفِ وَ تَنۡهَوۡنَ عَنِ الۡمُنۡکَرِ وَ تُؤۡمِنُوۡنَ بِاللّٰهِ ؕ وَ لَوۡ اٰمَنَ اَهۡلُ الۡکِتٰبِ لَکَانَ خَیۡرًا لَّهُمۡ ؕ مِنۡهُمُ الۡمُؤۡمِنُوۡنَ وَ اَکۡثَرُهُمُ الۡفٰسِقُوۡنَ

তোমরাই হলে সর্বোত্তম উম্মত; যাদেরকে মানুষের (কল্যাণের) জন্য বের করা হয়েছে। তোমরা ভালো কাজের আদেশ দেবে এবং মন্দ কাজ থেকে বারণ করবে, আর আল্লাহর প্রতি ঈমান আনবে। আর যদি আহলে কিতাব ঈমান আনতো, তবে অবশ্যই তা তাদের জন্য কল্যাণকর হতো। তাদের কতক ঈমানদার। তাদের অধিকাংশই ফাসিক।(সুরা আল-ইমরান : আয়াত ১১০)

মুসলিম উম্মাহকে কীভাবে শ্রেষ্ঠ জাতি?

মুসলিম উম্মাই-ই শ্রেষ্ঠ জাতি। আয়াতের ব্যাখ্যামূলক আয়াতেই তা প্রমাণিত। আয়াতে কী বলা হয়েছে?-

হে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উম্মতগণ! মানবজাতির উপকার ও কল্যাণের জন্য তোমরাই শ্রেষ্ঠ উম্মত। তোমরা ইসলামি শরিয়তের আলোকে যত্নসহকারে সৎকাজের নির্দেশ দেবে এবং অসৎ কাজের নিষেধ করবে। আর নিজেরাও যাবতীয় আমল-আকিদায় মহান আল্লাহর প্রতি ঈমান আনবে; বিশ্বাসে অটল অবিচল থাকবে। আর যদি আহলে কিতাবগণ ঈমান আনতো; যারা তোমাদের বিরোধিতা করছে; তবে তা তাদের জন্য অনেক কল্যাণকর হতো। তারাও সত্যপন্থীদের শ্রেষ্ঠতম সম্প্রদায়ের অন্তর্ভূক্ত হয়ে যেতো। দুঃখজনক হলেও সত্য তারা ঈমান আনেনি। তাদের কেউ বিশ্বাসী; যারা নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি বিশ্বাস করে ইসলামে দীক্ষিত হয়েছে। আর তাদের অধিকাংশই অবিশ্বাসী; যারা নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করেনি এবং শ্রেষ্ঠ সম্প্রদায় মুসলিমদের অন্তর্ভূক্ত হয়নি। হাদিসের ঘোষণায় শ্রেষ্ঠ জাতি কারা?

১. হজরত বাহয ইবনু হাকিম রাহমাতুল্লাহি আলাইহি পর্যায়ক্রমে তার বাবা ও দাদার সূত্রে বর্ণনা করেছেন,তোমরাই শ্রেষ্ঠ উন্মাত, মানবজাতির কল্যাণের জন্য তোমাদের আবির্ভাব হয়েছে (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ১১০)-এ আয়াত প্রসঙ্গে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছেন- অবশ্যই তোমরাই দুনিয়াতে সত্তর (৭০) সংখ্যা পূর্ণকারী দল। তোমরাই আল্লাহ তাআলার কাছে সর্বোত্তম ও মর্যাদা সম্পন্ন। (তিরমিজি, ইবনে মাজাহ)

অর্থাৎ তোমাদের আগে বহু জাতি অতিবাহিত হয়েছে, যাদের সংখ্যা সত্তরটি। এর দ্বারা সংখ্যা বা আধিক্য বোঝানো উদ্দেশ্য।

২. হজরত বুরাইদাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, জান্নাতীদের একশত বিশটি কাতার হবে, তার মধ্যে এই উম্মাতের হবে আশিটি কাতার এবং অন্যান্য সব উন্মাতের হবে চল্লিশটি কাতার। (তিরমিজি, ইবনে মাজাহ)

৩. হজরত আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, একবার আমরা এক তাঁবুতে নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সঙ্গে ছিলাম। তখন তিনি বললেন, তোমাদের সংখ্যা জান্নাতিদের এক-চতুর্থাংশ হলে তোমরা কি খুশি হবে? আমরা বললাম, হ্যাঁ তিনি আবার বললেন, তোমরা জান্নাতিদের এক-তৃতীয়াংশ হলে তোমরা কি খুশি হবে? আমরা বললাম, হ্যাঁ, তখন নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ঐ সত্তার কসম! যাঁর হাতে মুহাম্মাদের প্রাণ। আমি দৃঢ় আশা রাখি যে, তোমরা (এ উম্মত) জান্নাতিদের অর্ধেক হবে। আর জান্নাতে কেবল মুসলিমগণই প্রবেশ করতে পারবে। আর মুশরিকদের তুলনায় তোমাদের অবস্থা, যেমন কাল ষাঁড়ের চামড়ার উপর একটি সাদা পশম। অথবা লাল ষাঁড়ের চামড়ার উপর একটি কালো পশম। (বুখারি, মুসলিম)

৪. নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, এ (শ্রেষ্ঠ) উম্মত সবার আগে জান্নাতে প্রবেশ করবে। (মুসলিম, ইবনে মাজাহ)

মুসলিমরা কেন শ্রেষ্ঠতম সম্প্রদায়?

মুসলিম উম্মতকে শ্রেষ্ঠতম সম্প্রদায় বলে ঘোষণা করার কারণগুলোও কোরআনুল কারিমের একাধিক আয়াতে ওঠে এসেছে। আলোচ্য আয়াতে মুসলিম উম্মাহ শ্রেষ্ঠতম সম্প্রদায় হওয়ার কারণ হিসেবে বলা হয়েছে যে-

মানব জাতির কল্যাণে তারা বের করা হয়েছে। আর তাদের প্রধান উপকার এই যে, মানব জাতির আধ্যাত্মিক ও চারিত্রিক সংশোধনের চেষ্টাই তাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য। আগের সম্প্রদায়সমূহের তুলনায় মুসলিম সম্প্রদায়ের মাধ্যমে সৎকাজে আদেশ দেওয়া এবং অসৎকাজে নিষেধ করার দায়িত্ব অধিকতর পুর্ণত্বলাভ করেছে। আর আগের সম্প্রদায়সমূহের মধ্যে ব্যাপক উদাসীনতার কারণে দ্বীনের অন্যান্য বিশেষ কার্যাবলীর মতো সৎ কাজের আদেশ ও অসৎকাজে নিষেধ করার বিষয়গুলো পরিত্যক্ত হয়ে পড়েছিলো।

 

কিন্তু এসব ক্ষেত্রে মুসলিম উম্মাহ ব্যতিক্রম। তাদের মধ্যে কেয়ামত পর্যন্ত এমন একটি দল থাকবে- যারা পুরোপুরি জিম্মাদারির সঙ্গে সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ করবে।

বিভিন্ন তাফসিরে শ্রেষ্ঠ উম্মতের বিশেষ গুণাবলীগুলো এভাবে ওঠে এসেছে যে- এ উম্মতের চেয়ে বেশি কোনো উম্মত ইসলামের আহবানে সাড়া দেয়নি; ফলে তাদেরকে শ্রেষ্ঠ উম্মত বলে ঘোষণা দেয়া হয়েছে।

আয়াতে এ উম্মতকে শ্রেষ্ঠ বলার সাথে সাথে তাদের কর্ম কেমন হওয়া উচিত তা বলে দেয়া হয়েছে। বলা হয়েছে যে, তারা সৎ কাজের আদেশ করবে এবং অসৎ কাজ থেকে বিরত রাখবে।

হজরত ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন, মারূফ বা সৎ কাজ হচ্ছে, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহর সাক্ষ্য দেওয়া আর আল্লাহ যা নাযিল করেছেন সেগুলোর স্বীকৃতি দেওয়া এবং তার উপর কাফের মুশরিকদের সঙ্গে জেহাদে থাকা। আর সবচেয়ে বড় মারূফ বা সৎ কাজ হচ্ছে- লা ইলাহা ইল্লাল্লাহর স্বীকৃতি আদায় করা। পক্ষান্তরে মানুষের সবচেয়ে বড় মুনকার বা অসৎ কাজ হচ্ছে- মিথ্যারোপ করা। (তাবারি)

(৩) এ বাক্যাংশে মুসলিম সম্প্রদায়ের দ্বিতীয় বৈশিষ্ট্য বর্ণিত হয়েছে। পূর্ববর্তী উম্মতদের তুলনায় তাদের ঈমানের বিশেষ স্বাতন্ত্র থাকার কারণে বিশেষকরে তা উল্লেখ করা হয়েছে।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে কোরআনের দিকনির্দেশনা অনুযায়ী শ্রেষ্ঠ উম্মতের গুণাবলী নিজেদের মধ্যে বাস্তবায়ন করার তাওফিক দান করুন। হাদিসের উপর যথাযথ আমল করার তাওফিক দান করুন। কোরআনের দিকনির্দেশনা মোতাবেক জীবন গড়ার তাওফিক দান করুন। মুসলিম উম্মাহকে শ্রেষ্ঠ উম্মত হিসেবে কবুল করুন। আমিন।