Islamic News BD - The Lesson of Peace
কুরআনে আশা-নিরাশার বাণী
সোমবার, ৩১ জানুয়ারী ২০২২ ১৭:৫৯ অপরাহ্ন
Islamic News BD - The Lesson of Peace

Islamic News BD - The Lesson of Peace

পবিত্র কুরআন ও হাদিসের বাণী মানবজাতিকে কেন্দ্র করে। কেননা, কুরআন মাজিদ নাজিল হয়েছে মানুষকে জাহান্নাম থেকে মুক্ত করে জান্নাতবাসী করার জন্য। মহানবী সা:-এর বাণীও মানুষকে পাপমুক্ত এবং পবিত্র ও পরিচ্ছন্ন মানুষ তৈরির জন্য। ফলে পবিত্র কুরআন ও হাদিসে যেরূপ আশার বাণী রয়েছে, তদ্রুপ নিরাশার বাণীও রয়েছে। মহানবী সা: বলেছেন, আশা ও নিরাশার মাঝেই ঈমান।
আশার বাণী : হজরত ইবনে ওমর রা: বলেন,পাপীদের জন্য সর্বাধিক আশাব্যঞ্জক বাণী হলো আল্লাহ তায়ালার এ বাণী বলুন! হে আমার বান্দাগণ! তোমরা যারা নিজেদের প্রতি (সত্য প্রত্যাখ্যান করে) অবিচার করেছ, আল্ল;াহর অনুগ্রহ থেকে তোমরা নিরাশ হইও না; (সত্যের দিকে ফিরে এসো) অবশ্যই আল্ল;াহ তোমাদের সমুদয় পাপ ক্ষমা করে দেবেন। তিনি তো ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। (সূরা জুমান, আয়াত-৫৩) হজরত আবদুল্ল;াহ ইবনে আব্বাস রা: বলেন, কিছু লোক এমন ছিল যারা অনেক লোককে হত্যা করেছে, অনেক ব্যভিচার করেছে এবং সর্ব প্রকার পাপাচার সীমাতিরিক্ত করেছে। তারা একদা মহানবী সা:-এর কাছে এসে আরজ করে আপনি যে ধর্মের দাওয়াত দেন, তা খুবই ভালো; কিন্তু চিন্তার বিষয় হলো এই, আমরা অনেক জঘন্য পাপ করেছি। আমরা যদি ইসলাম গ্রহণ করি, তবে আমাদের তওবা কবুল হবে কি? তাদের উক্তির পরিপ্রেক্ষিতে এ আয়াত নাজিল হয়। (কুরতুবি)। হজরত ইবনে আব্বাস রা: বলেন, সর্বাধিক আশাব্যঞ্জক আয়াত হলো আপনার পালনকর্তা মানুষকে তাদের অন্যায় সত্ত্বেও ক্ষমা করেন। (সূরা রা;দ-৬)


গুণবাচক নামসমূহ জোড়া জোড়া ব্যবহার : আল্ল;াহ তায়ালা কুরআন মাজিদে তাঁর গুণবাচক নামসমূহ অনেক ক্ষেত্রে জোড়া জোড়া উল্লেখ করেছেন। যেমন আর রাহমানির রাহিম অতিশয় দয়ালু (সূরা ফাতিহা-২), গাফুরুর রাহিম দয়ালু মেহেরবান, (সূরা আল-বাকারা আয়াত : ১৮২, ১৯২, ১৯৯, ২১৮, ২২৬) রাওফুর রাহিম দয়ালু মেহেরবান (সূরা তাওবা, আয়াত-১১৭, ১২৮), রাহিমুন ওয়াদুদ দয়ালু প্রেমময়, (সূরা হুদ-৯০) ইত্যাদি। এসব তাঁর অধিক দয়ারই বহিঃপ্রকাশ।


মহাপাপীকে ক্ষমা : হাদিস শরিফে রয়েছে এক ব্যক্তি এমন নেককাজ করেছে যে, সে জান্নাতের উপযোগী নয়। আবার এমন পাপ করেছে যে তাকে জাহান্নামেও দেয়া যাচ্ছে না। তখন আল্লাহ তায়ালা তাকে জাহান্নামের দিকে তাকিয়ে থাকতে বলেন। দীর্ঘ দিন জাহান্নামের দিকে তাকিয়ে থাকার ফলে তার চেহারা ঝলসে যাবে। তখন সে আল্ল;াহ তায়ালার কাছে সদা প্রার্থনা করতে থাকবে যেন তার চেহারাটা জান্নাতের দিকে ফিরেয়ে দেয়া হয়। আল্লাহ তায়ালা বলবেন, তোমার চেহারা ফিরিয়ে দিলে অন্য কিছু চাইবে কি না? সে শপথ করে বলবে, অন্য কিছু চাইব না। অতপর চেহারা জান্নাতের দিকে ফিরেয়ে দেয়া হবে। দীর্ঘ দিন এভাবে থাকার পর সে আবার প্রার্থনা করবে, হে আল্ল;াহ! আমাকে জান্নাতের কাছে নিয়ে দিন। আল্ল;াহ তায়ালা বলবেন, তুমি না বলেছিলে আর কিছু চাইবে না। অতপর তাকে জান্নাতের কাছে আনা হবে। দীর্ঘ দিন জান্নাতের নিকটে থাকার কারণে তার মনে জান্নাতে প্রবেশের আকাক্সক্ষা সৃষ্টি হবে। তখন সে প্রার্থনা করবে; আল্ল;াহ আমাকে জান্নাতে প্রবেশ করান। আল্ল;াহ তায়ালা বলবেন, তুমি তো বলেছিলে আর কিছুই চাইবে না? সে বলবে, হে আল্লাহ! আপনি আমাকে আপনার দুর্ভাগা সৃষ্টিতে পরিণত করবেন না। অতপর আল্লাহ তায়ালা হাসবেন এবং তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। (সহিহ বুখারি, কিতাবুর রিকাক, হাদিস নং-৬৫৭৩)


ভয়কারীকে ক্ষমা : মহানবী সা: পূর্ববর্তী যুগের এক ব্যক্তির ঘটনা বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, আল্ল;াহ তায়ালা তাকে অঢেল সম্পদ ও সন্তান দান করেছিলেন। মৃত্যুকালে সে তার সন্তানদেরকে প্রশ্ন করেছে তোমাদের পিতা কেমন? তারা বলল, আপনি অনেক উত্তম পিতা, লোকটি বলল, আমি কিন্তু আল্লাহর কাছে উত্তম নই। তাঁর কাছে উপস্থিত হলে তিনি আমাকে শাস্তি দেবেন। তোমাদেরকে একটা কথা বলি শুনো! আমি মারা গেলে আমাকে ছাই করে ঝড়ো হাওয়ায় উড়িয়ে দেবে। তার মৃত্যুর পর সন্তানরা তাই করল। বিচার দিবসে আল্ল;াহ তায়ালা কুন (হয়ে যাও) বলার সাথে সাথে সে জীবিত হয়ে দাঁড়িয়ে যাবে। আল্লাহ তায়ালা তাকে জিজ্ঞেস করবেন, বান্দাহ তুমি এ কাজটি কেন করেছ? লোকটি বলবে, আপনার ভয়ে। তখন আল্ল;াহর দয়া হবে। অতঃপর তিনি তাকে ক্ষমা করে দেবেন। (সহিহ বুখারি-৬৪৮১, কিতাবুর রিকাক) আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, তিনি মুত্তাকি তথা ভয়কারীদের পছন্দ করেন। (সূরা আল-ইমরান-৭৬)


১০০ জন হত্যাকারীকে ক্ষমা : এক ব্যক্তি ৯৯ জন ব্যক্তিকে হত্যা করার পর তার মনের মধ্যে ভয়ের সঞ্চার হয়। অতঃপর তাওবা করার কোনো সুযোগ আছে কি না তা জানার জন্য একজন আবেদের নিকট গমন করে। আবেদ বললেন, না! তোমার তাওবা করার কোনো সুযোগ নেই। অতঃপর সে রাগান্বিত হয়ে আবেদকেও হত্যা করে ১০০ জন পূর্ণ করে। তারপর তার মনে ভয়ের সঞ্চার হলে পুনরায় এ পাপ থেকে পরিত্রাণের কোনো সুযোগ আছে কি না জানার জন্য লোকদের জিজ্ঞেস করে। লোকেরা তাকে এক আলেমের সন্ধান দেয়। লোকটি আলেমের কাছে গেলে আলেম বলেন, অবশ্যই তোমার তাওবার সুযোগ রয়েছে, তুমি অমুক জায়গায় যাও, সেখানে কিছু ভালো লোক আছে তাদের সাথে গিয়ে বসবাস করো। লোকটি আলেমের কথা শুনে সে দিকে রওনা হয়। কিছু দূর যাওয়ার পর তার হায়াত শেষ হয়ে যায়। তার রুহ নেয়ার জন্য দুজন ফেরেশতা আসেন। একজন রহমতের ফেরেশতা, অন্যজন গজবের ফেরেশতা। রহমতের ফেরেশতা বলছে, তার রুহ আমি নেব। কারণ সে ক্ষমাপ্রাপ্তির দিকে রওনা হয়েছে। আর গজবের ফেরেশতা বলছে, সে ১০০ জন লোককে হত্যা করেছে, সে জঘন্য পাপী। তার রুহ আমি নেব। এমতাবস্থায় আল্ল;াহ তায়ালা এ মর্মে ওহি প্রেরণ করেন যে, তোমরা ঝগড়া করো না, বরং রাস্তা পরিমাপ করো। লোকটি আলেমের বাড়ি যাওয়ার রাস্তার দূরত্ব বেশি নাকি ক্ষমাপ্রাপ্তির দিকে যাওয়ার রাস্তার দূরত্ব বেশি? অতঃপর আল্ল;াহ তায়ালা ক্ষমাপ্রাপ্তির রাস্তা এক বিঘত বাড়িয়ে দিয়ে তাকে ক্ষমা করে দেন। (সহিহ বুখারি, কিতাবু আহাদিসিল আম্বিয়া, হাদিস নং-৩৪৭০)।