Islamic News BD - The Lesson of Peace
যাদের তাওবাহ কবুলের সুযোগ নেই
বৃহস্পতিবার, ১০ ফেব্রুয়ারী ২০২২ ১৭:২৯ অপরাহ্ন
Islamic News BD - The Lesson of Peace

Islamic News BD - The Lesson of Peace

অন্যায়-অপরাধ করার পর আল্লাহর দিকে ফিরে আসাই হলো তাওবাহ। তাওবাহ মানুষের জন্য অনেক বড় নেয়ামত। যারা তাওবাহ করে আল্লাহর দিকে ফিরে আসার সৌভাগ্য হয়; তারাই সফল। সবার ভাগ্যে তাওবাহ নসিব হয় না। আল্লাহ তাআলা কোরআনুল কারিমের কিছু লোকের ব্যাপারে সুস্পষ্ট ঘোষণা দিয়েছেন যে, তাদের জন্য কোনো তাওবাহ নেই। কোরআনের ঘোষণায় তারা কারা?

যারা গুনাহ করতেই থাকে। অন্যায় কাজ করতেই থাকে। আল্লাহ একজন আছেন কিংবা তার কাছে জবাবদিহি করতে হবে এমন চিন্তাই করে না। একদিন মরতে হবে এমন চিন্তার ব্যাপারেও থাকে গাফেল। এমনকি তাদের মৃত্যুর সময় চলে আসে তারপরও গুনাহ করতে থাকে। তাদের বিষয়টি কোরআনুল কারিমে আল্লাহ তাআলা এভাবে তুলে ধরেছেন-

১. وَ لَیۡسَتِ التَّوۡبَۃُ لِلَّذِیۡنَ یَعۡمَلُوۡنَ السَّیِّاٰتِ ۚ حَتّٰۤی اِذَا حَضَرَ اَحَدَهُمُ الۡمَوۡتُ قَالَ اِنِّیۡ تُبۡتُ الۡـٰٔنَ وَ لَا الَّذِیۡنَ یَمُوۡتُوۡنَ وَ هُمۡ کُفَّارٌ ؕ اُولٰٓئِکَ اَعۡتَدۡنَا لَهُمۡ عَذَابًا اَلِیۡمًا

আর (আজীবন) যারা মন্দ কাজ করে, তাদের জন্য তওবাহ নয়; আর তাদের কারো মৃত্যু উপস্থিত হলে সে বলে- আমি এখন তওবা করছি। আর তাদের জন্যও তওবাহ নয় যারা অবিশ্বাসী অবস্থায় মারা যায়। এরাই তো তারা, যাদের জন্য আমি কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা করেছি। (সুরা নিসা : আয়াত ১৮)

২. اِنَّ الَّذِیۡنَ کَفَرُوۡا بَعۡدَ اِیۡمَانِهِمۡ ثُمَّ ازۡدَادُوۡا کُفۡرًا لَّنۡ تُقۡبَلَ تَوۡبَتُهُمۡ ۚ وَ اُولٰٓئِکَ هُمُ الضَّآلُّوۡنَ

নিশ্চয়ই যারা বিশ্বাস করার পর অবিশ্বাস করে এবং যাদের অবিশ্বাস-প্রবৃত্তি বৃদ্ধি পেতে থাকে; তাদের তওবাহ কখনো কবুল করা হয় না। এরাই তো পথভ্রষ্ট। (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ৯০)

আল্লাহ তাআলার ঘোষণায় যারা অন্যায় করতে করতে মৃত্যুর গড়গড়া চলে আসে; তাদের তাওবাহ তিনি কবুল করবেন না। মৃত্যুর সময়ের তাওবাহ আল্লাহর কাছে গৃহীত হবে না।

আবার আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরিক করার অপরাধ কোনো অবস্থাতেই মাফ করা হবে না। কেননা, মুশরিকের উপর আল্লাহ জান্নাতকে হারাম করে দিয়েছেন। একাধিক আয়াতে এসেছে-

১. إِنَّ الشِّرْكَ لَظُلْمٌ عَظِيمٌ

নিশ্চয়ই শিরক হল সব চেয়ে বড় অন্যায়।

২. اِنَّ اللّٰهَ لَا یَغۡفِرُ اَنۡ یُّشۡرَکَ بِهٖ وَ یَغۡفِرُ مَا دُوۡنَ ذٰلِکَ لِمَنۡ یَّشَآءُ ۚ وَ مَنۡ یُّشۡرِکۡ بِاللّٰهِ فَقَدِ افۡتَرٰۤی اِثۡمًا عَظِیۡمًا

নিশ্চয়ই আল্লাহ তাঁর সঙ্গে অংশীদার (শিরক) করার অপরাধ ক্ষমা করবেন না। এ ছাড়া অন্যান্য অপরাধ যার জন্য ইচ্ছা ক্ষমা করে দেন। আর যে কেউ আল্লাহর সঙ্গে অংশীদার স্থাপন (শিরক) করে, সে এক মহাপাপ করে। (সুরা নিসা : আয়াত ৪৮)

নবিজীও শিরককে সব চেয়ে বড় পাপ বলে গণ্য করা করেছেন। হাদিসে পাকে এসেছে-

হজরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, যারা কাফের অবস্থায় মারা যাবে আল্লাহ তাআলা তাদের ক্ষমা করবেন না। পক্ষান্তরে যাদের তাওহিদ ঠিক আছে তাদেরকে তিনি তার ইচ্ছার উপর রেখেছেন। তাদের তিনি ক্ষমা থেকে নিরাশ করেননি। (তাবারি)

কিন্তু এমন অনেক অপরাধ ও গুনাহ আছে; যা থেকে তওবাহ না করেই মুমিন মারা গেছেন। আল্লাহ তাআলা কারো জন্য চাইলে কোনো ধরনের শাস্তি না দিয়েই তাকে ক্ষমা করে দেবেন এবং অনেককে শাস্তি দেওয়ার পর ক্ষমা করবেন। আবার অনেককে নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুপারিশে আল্লাহ তাআলা ক্ষমা করবেন। অন্য এক হাদিসে এসেছে-

হজরত আব্দুল্লাহ ইবন ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন, আমরা কবিরা গুনাহকারীর জন্য ইসতেগফার করা থেকে বিরত থাকতাম। শেষ পর্যন্ত যখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে এ আয়াত শুনলাম এবং আরো শুনলাম যে তিনি বলছেন, আমি আমার দোয়াকে গচ্ছিত রেখেছি আমার উম্মতের কবীরা গুনাহগারদের সুপারিশ করার জন্য। ইবন ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, এরপর আমাদের অন্তরে যা ছিল তা অনেকটা কেটে গেল। ফলে আমরা ইসতেগফার করতে থাকলাম ও আশা করতে থাকলাম (মুসনাদে আবি ইয়ালা)

তবে কোরআন-সুন্নাহর দিকনির্দেশনা ও উল্লেখিত আয়াতের ঘোষণার আওতায় যারা পড়বে; তাদের তাওবাহ কবুল হবে না। সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, গুনাহের কাজ ছেড়ে দেওয়া। মৃত্যুর সময় আসার আগে সুস্থ থাকতেই তাওবাহ করে আল্লাহর দিকে ফিরে আসা। পরকালের চিরস্থায়ী জীবনের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে তাওবাহ করার তাওফিক দান করুন। কোরআনে ঘোষিত অন্যায় ও শিরক থেকে মুক্ত রাখুন। আমিন।