Islamic News BD - The Lesson of Peace
আল্লাহর একত্ববাদের পরিচয়
মঙ্গলবার, ১৫ ফেব্রুয়ারী ২০২২ ১৪:৩৬ অপরাহ্ন
Islamic News BD - The Lesson of Peace

Islamic News BD - The Lesson of Peace

তাওহিদ শব্দটির সাথে আমরা সবাই বেশ পরিচিত। যার অর্থ হলো- একত্ববাদ। তবে এই অর্থের ভেতরে লুকিয়ে থাকা এক নিগূঢ় তাৎপর্য ইনশাআল্ল;াহ আপনাদের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করব।
যেমন- তাওহিদ হচ্ছে আল্লাহ তায়ালাকে তাঁর পূর্ণাঙ্গ গুণাবলিতে একক বলে জানা এবং মানা। শ্রেষ্ঠত্ব, মহত্ব ও সৌন্দর্যের যাবতীয় গুণাবলিতে তিনি যেমন এক, নিরঙ্কুুশভাবে পূর্ণতার অধিকারী; তেমনি সৃষ্টিকর্তা, রিজিকদাতা হিসেবেও তিনি আমাদের এক রব। আর এমন বিশ্বাস মনে গেঁথে একমাত্র আল্লাহ তায়ালার ইবাদত করে তাঁর একত্বের প্রমাণ দেয়াই হচ্ছে তাওহিদ। এখানে মনে রাখা দরকার, এই ;ইবাদত করা; অর্থ শুধু নামাজ-রোজা নয়, বরং জীবনের সব কাজই যেন হয় তাওহিদের ওপর বিশ্বাসে। এটাই হচ্ছে ঈমানের মূল দাবি, যে দাবি আমাদের সব প্রকার বিভ্রান্তি, হতাশা, শিরক, গোলামি ও দুর্নীতি থেকে মুক্তি দিয়ে ঈমানদার মানুষরূপে গড়ে তোলে।


যদি আকাশ ও পৃথিবীতে আল্ল;াহ ব্যতীত বহু ইলাহ থাকত, তবে উভয়ই ধ্বংস হয়ে যেত। অতএব, তারা যা দ্বারা গুণান্বিত করে তা হতে আরশের অধিপতি আল্ল;াহ অনেক পবিত্র ও মহান। (সূরা আম্বিয়া,আয়াত-২২)
পৃথিবীর ভূগর্ভ থেকে দূরবর্তী গ্রহ-নক্ষত্র পর্যন্ত সব কিছুই একটি নিয়মের অধীনে পরিচালিত। এই নিয়ম আর শৃঙ্খলা বজায় আছে একটিমাত্র সত্তার কারণেই আর তিনি হলেন আল্ল;াহ রাব্বুল আল-আমিন। সূরা ইয়াসিনের ৩৮, ৩৯ ও ৪০ নম্বর আয়াতেও আমরা দেখতে পাই- একক স্রষ্টার অধীনে নির্দিষ্ট কক্ষপথে পরিচালিত সূর্য ও চন্দ্রের পরিভ্রমণ। সূর্যের বিন্দুমাত্র ক্ষমতা নেই সে চন্দ্রের কক্ষপথে চলে আসবে। এসব কিছুই এক মহান রবের ইশারায় হচ্ছে। আমরা কি জানি, আমাদের একটি মাত্র হাতের শুধু আঙুুল থেকে কবজি পর্যন্ত প্রায় ৯৭ হাজার কিলোমিটার লম্বা নার্ভ আছে, এই নার্ভগুলো কখনো কি একটার সাথে আরেকটার প্যাঁচ লেগে যায়? না। অথচ কিছু ইলেকট্রিক তার (যেগুলো এসব সূক্ষ্ম নার্ভের চেয়ে বেশ পুরু) একসাথে রাখলেই তা প্যাঁচ লেগে যায়। সুতরাং, উত্তমরূপে আমাদের তৈরি করে, খুব সূক্ষ্ম, সুন্দর ও বৈজ্ঞানিকভাবে আমাদের শরীরটি পরিচালনা করছেন এক আল্ল;াহ। আর এটা বিশ্বাসের নামই হচ্ছে তাওহিদ। আর এই তাওহিদের সাক্ষী আমরা সবাই পৃথিবীতে আসার আগেই দিয়ে এসেছি। সব মানুষ সৃষ্টি করে দুনিয়ায় পাঠানোর আগেই আল্লাহ তায়ালা তাওহিদের ব্যাপারে ওয়াদা নিয়েছেন, আমি কি তোমাদের প্রতিপালক নই? তারা বলেছিল- হ্যাঁ, অবশ্যই আমরা সাক্ষী রইলাম। (সূরা আরাফ, আয়াত-১৭২) সুতরাং, এতেই তাওহিদের গুরুত্ব বোঝা যায়।


এদিকে, সব নবী-রাসূলের দাওয়াতের মূল ভিত্তি ছিল তাওহিদ। যে ভিত্তির দৃঢ়তা দুনিয়ার চাকচিক্য, লোভ-লালসার কাছে নমনীয় হয়ে যায় না। তেমনি এক ঘটনা হলো সাকিফ গোত্রের ঘটনা। যখন তাওহিদের কারণেই আমাদের প্রিয় নবী সা: ছিলেন দৃঢ়, তাঁর বক্তব্য ছিল স্পষ্ট। মক্কা বিজয়ের পর যখন বিভিন্ন দল, মতো ও গোত্রের লোকেরা তাদের কওমে ইসলাম প্রচারের জন্য নসিহত নিতে নবীজীর কাছে আসত,তেমনি সাকিফ গোত্রের ১২-১৩ প্রতিনিধি এলো নবীজীর কাছে ইসলামের দাওয়াত নিতে। অবশেষে তারা তাদের উপাস্য রাব্বাহ (প্রতিপালিকা)-এর ব্যাপারে চুক্তিতে আসতে চাইল। তারা ইসলামের বিধিনিষেধ মানতে রাজি আছে, কিন্তু রাব্বাহর মূর্তি ভাঙতে রাজি নয়। তো নবীজীর কাছে কখনো তিন মাস, তো এক মাস, তো এক সপ্তাহ, কিংবা এক দিনের সময় চাইলেও মূর্তি ভেঙে ফেলে দেয়ার ব্যাপারে ও এক আল্লাহর উপাস্যের সিদ্ধান্তে নবীজী সা: কোনো চুক্তিতে আসেননি, তিনি ছিলেন অবিচল। অবশেষে, সাকিফ গোত্র তাওহিদের মর্ম বুঝে তা মেনে নিতে বাধ্য হলো। (তথ্যসূত্র : ঊহলড়ু ুড়ঁৎ ষরভব, উৎ গঁযধসসধফ ওনহ অনফঁৎ জধযসধহ অৎরভর)
অতএব, শুধু অন্তরে বিশ্বাস নয় বরং তাওহিদের মূল দাবি হচ্ছে- প্রাকৃতিক কোনো প্রভাব

বা বস্তুকে নয়, কোনো ব্যক্তিকে নয় বরং ইবাদতকে এক আল্ল;াহর জন্য খাস করতে হবে, আল্লাহকে ভালোবাসতে হবে, শুকরিয়া আদায় করতে হবে, সালাত আদায় করতে হবে, তাঁকে ছাড়া অন্যকে ভয় করা যাবে না, তাঁর বিধান মেনে চলতে হবে, তাঁর কাছে আত্মসমর্পণ করতে হবে এবং তাঁর কাছে সাহায্য চেয়ে ভরসা করতে হবে। এ ক্ষেত্রে যারা আল্ল;াহর কাছে দোয়া করে হতাশ হয়ে আছেন; তাদেরকে বলব-যদি আল্লাহ তোমাদেরকে সাহায্য করেন তাহলে কোনো ব্যক্তিই তোমাদের পরাজিত করতে পারবে না। আর তিনিই যদি তোমাদের পরিত্যাগ করেন, তাহলে এমন কোনো শক্তি আছে কি, যে তোমাদেরকে সাহায্য করতে পারবে? কাজেই মুমিনদের উচিত আল্লাহর ওপরই ভরসা করা। (সূরা আল ইমরান, আয়াত-১৬০)
সূরা তাওবার ১২৯ নম্বর আয়াত দিয়ে শেষ করছি- ;অতঃপর তারা যদি মুখ ফিরিয়ে নেয় তবে তুমি বলে দাও, আমার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট, তিনি ব্যতীত অন্য কোনো ইলাহ নেই। আমি তাঁরই ওপর নির্ভর করি এবং তিনি মহান আরশের অধিপতি।