Islamic News BD - The Lesson of Peace
পরিবারের জন্য খরচ করা কি সাদকাহ?
সোমবার, ০৭ মার্চ ২০২২ ১৬:০৫ অপরাহ্ন
Islamic News BD - The Lesson of Peace

Islamic News BD - The Lesson of Peace

পরিবারের প্রতি দায়িত্ব পালন খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সর্ব প্রথম পরিবারের প্রতি খরচ করার দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। আর সওয়াবের আশায় পরিবারের জন্য খরচ করাকে সর্বোত্তম সাদকাহ বলেছেন। শুধু গরিব মিসকিন ও অসহায় মানুষকে দান করাই সাদকাহ নয় বরং নিজ পরিবারের জন্য খরচ করাও সাদকাহ।বাবা-মা, ভাই-বোন, সন্তান-সন্তুতি, স্ত্রী-পরিজনের জন্য যে কোনো খরচই আল্লাহর কাছে সাদকাহ হিসেবে পরিগণিত। বরং অন্যকে দান করার আগে পরিবারের পেছনে খরচ করাই হচ্ছে সর্বোত্তম সাদকাহ। পরিবারের জন্য খরচ করা সম্পর্কে হাদিসের একাধিক বর্ণনা ও গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন মুসলিম ব্যক্তি সওয়াবের আশায় তার পরিবার-পরিজনের জন্য যা কিছু খরচ করবে তা সবই তার জন্য সাদকাহ। অর্থাৎ তা দান হিসেবে গণ্য হবে। (মুসলিম)

এ হাদিসটি ইমাম বুখারি রহমাতুল্লাহি আলাইহিও বর্ণনা করেছেন। সেখানে হজরত আবু মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাবী বলেন, আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলাম- (পরিবারের প্রতি খরচ যে সাদকাহ) এটি কি নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণিত?

তিনি বললেন হ্যাঁ নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, সওয়াবের আশায় কোনো মুসলিম যখন তার পরিববার-পরিজনের জন্য খরচ করে তা তার সাদকায় পরিগণিত হয়। (বুখারি)

পরিবারের প্রতি দায়িত্ব পালন ও তাদের জন্য খরচ করার কথাই নবিজী বলেননি বরং তিনি নিজ নিজ পরিবারের জন্য সম্পদ রেখে যাওয়ার ব্যাপারে সর্বোত্তম পরামর্শ দিয়েছেন। হাদিসের একাধিক বর্ণনায় পুরো বিষয়টিই ওঠে এসেছে-

১. হজরত সাদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন আমি মক্কায় রোগাগ্রস্থ হলে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমার পরিচর্যার জন্য আসতেন। আমি বললাম আমার তো মাল (সম্পদ) আছে। সেগুলো সব আমি অসিয়ত করে যাই নবিজী বললেন

আমি বললাম, তাহলে অর্ধেক (অসিয়ত করে যাই)? নবিজী বললেন, না।

আমি বললাম, তবে এক-তৃতীয়াংশ তথা তিন ভাগের এক ভাগ (অসিয়ত করে যাই)? নবিজী বললেন, এক-তৃতীয়াংশ (অসিয়ত) করতে পার। এক-তৃতীয়াংশই বেশি।

এরপর নবিজী বললেন, তোমার ওয়ারিশদের (উত্তরাধিকারী) এমন অবস্থায় রেখে যাওয়া তথা তারা মানুষের কাছে হাত পেতে ফিরবে; এর চেয়ে তাদেরকে ধনী অবস্থায় রেখে যাওয়া উত্তম। এরপর নবিজী বললেন, আর যা-ই তুমি খরচ করবে তাই তোমার জন্য সাদকা হবে। এমনকি (খাবারের) যে লোকমাটি তুমি তোমার স্ত্রীর মুখে তুলে দেবে তাও (সাদকা)। আল্লাহ তোমাকে দীর্ঘজীবী করবেন এই আশা। তোমার দ্বারা অনেক লোক উপকৃত হবে। আবার অন্যেরা (কাফের সম্প্রদায়) ক্ষতিগ্রস্তও হবে। (বুখারি)

২. হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, উত্তম সাদকাহ হলো সেটি, যা দান করার পর মানুষ অমুখাপেক্ষী থাকে (মানুষের স্বাভাবিক চাহিদা থাকে না)। নিচের হাত থেকে উপরের হাত উত্তম।

(তিনি আরো বলেন)- যাদের ভরণ-পোষণ তোমার দায়িত্বে আছে অর্থাৎ পরিবার-পরিজন তাদের আগে দাও।কেননা) স্ত্রী বলবে হয় আমাকে খাবার দাও নতুবা তালাক দাও। গোলাম বলবে খাবার দাও এবং কাজ করাও। ছেলে বলবে আমাকে খাবার দাও। আমাকে তুমি কার কাছে ছেড়ে যাচ্ছ

লোকেরা জিজ্ঞাসা করলো- হে আবু হুরায়রা! এ হাদিস আপনি কি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে শুনেছেন?

তিনি উত্তরে বললেন, এটি (হাদিসটি) আবু হুরায়রার থলে থেকে (পাওয়া) নয়, (বরং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে)। (বুখারি)

সুতরাং মানুষের উচিত, নিজ পরিবার-পরিজন তথা বাবা-মা, স্ত্রী-সন্তান, ভাই-বোনের জন্য সবার আগে খরচ করা। সদকার সাওয়াব অর্জনের জন্য এটি বড় একটি সুযোগ।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে সওয়াবের আশায় পরিবার-পরিজনের জন্য খরচ করার তাওফিক দান করুন। পরিবার-পরিজন ছাড়াও অন্যদের জন্যও সওয়াবের আশায় খরচ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।