বিশ্বমানবতার কল্যাণের অনন্য জীবন ব্যবস্থার নাম ইসলাম। নারী ও পুরুষসহ কোনো সৃষ্টির অধিকার ও স্বাধীনতা ইসলাম খর্ব করেনি। বর্তমান সময়ের সবচেয়ে বড় আলোচিত সামাজিক মহামারী নারী নির্যাতন। এই নারী নির্যাতন রোধে করে নারীকে পূর্ণ স্বাধীনতা ও অধিকার দিয়েছে ইসলাম। শুধু ইসলামি জীবনদর্শনই নারীর স্বাধীনতা ও অধিকার অক্ষুন্ন রাখতে সক্ষম।
বাংলাদেশসহ বিশ্ব মিডিয়ার দিকে তাকালে দেখা যায়, প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও অহরহ ঘটে চলেছে নারীর প্রতি নির্যাতন। যারা নারী অধিকারের ব্যাপারে সরব, তারা দিতে পারছে না নারীকে যথাযথ সম্মান, স্বাধীনতা, নিরাপত্তা ও কাঙ্ক্ষিত অধিকার। ইসলামই একমাত্র জীবন ব্যবস্থা; যা নারীকে দিয়েছে যথাযথ মর্যাদা, সম্মান, স্বাধীনতা ও কাঙ্ক্ষিত অধিকার। নারীর মর্যাদা
নারী হবে পারস্পরিক সাহায্যকারী বন্ধু, সৎকাজের প্রতি উৎসাহ দানকারী, অসৎকাজে বাধা প্রদানকারী, আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের পথে আহ্বানকারী, হজ, জাকাত, ইবাদত-বন্দেগি পালনকারী এবং সামাজিক প্রায় সব কাজেই পুরুষের মতো নারীদের অংশগ্রহণ ও কার্যক্রম পরিচালনাকারী। ইসলাম এর কোনোটিতেই বাধা দেয় না বরং এসব কাজে অংশগ্রহণে নারীকে ইসলাম উৎসাহ দেয়। কোরআনুল কারিমে এসেছে-
يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ إِذَا جَاءكَ الْمُؤْمِنَاتُ يُبَايِعْنَكَ عَلَى أَن لَّا يُشْرِكْنَ بِاللَّهِ شَيْئًا وَلَا يَسْرِقْنَ وَلَا يَزْنِينَ وَلَا يَقْتُلْنَ أَوْلَادَهُنَّ وَلَا يَأْتِينَ بِبُهْتَانٍ يَفْتَرِينَهُ بَيْنَ أَيْدِيهِنَّ وَأَرْجُلِهِنَّ وَلَا يَعْصِينَكَ فِي مَعْرُوفٍ فَبَايِعْهُنَّ وَاسْتَغْفِرْ لَهُنَّ اللَّهَ إِنَّ اللَّهَ غَفُورٌ رَّحِيمٌ
হে নবি! ঈমানদার নারীরা যখন আপনার কাছে এসে আনুগত্যের শপথ করে যে, তারা আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরিক করবে না, চুরি করবে না, ব্যভিচার করবে না, তাদের সন্তানদের হত্যা করবে না, জারজ সন্তানকে স্বামীর ঔরস থেকে আপন গর্ভজাত সন্তান বলে মিথ্যা দাবি করবে না এবং ভাল কাজে আপনার অবাধ্যতা করবে না, তখন তাদের আনুগত্য গ্রহণ করুন এবং তাদের জন্যে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করুন। নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাশীল অত্যন্ত দয়ালু। (সুরা মুমতাহিনা : আয়াত ১২)
ইসলামের দৃষ্টিতে নারী
ইসলাম পূর্ব যুগে যখন নারীর অবস্থান ছিল অমানবিক; তখন থেকেই ইসলাম নারীর অধিকার ও মর্যাদা উন্নয়নের জন্য নজীরবিহীন সব ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। নারী নির্যাতন প্রতিরোধে ইসলাম দিয়েছে সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা-
শ্রেষ্ঠত্বে নারী
নারীকে মানুষ হিসেবে শ্রেষ্ঠত্বের মর্যাদা দিয়েছে ইসলাম। বিধান পালনে নারী-পুরুষের প্রতি সমান নির্দেশ দিয়েছে ইসলাম। তুলে ধরেছেন নারীর নিরাপত্তার বিধানও। মহান আল্লাহ বলেন-
وَلَقَدۡ كَرَّمۡنَا بَنِيٓ ءَادَمَ
আর নিশ্চয়ই আমি আদম সন্তানদেরকে সম্মানিত করেছি। (সুরা বনি ইসরাইল : আয়াত ৭০)
এ আয়াত থেকে প্রমাণিত মানবিক সম্মান ও মর্যাদার বিচারে নারী ও পুরুষের মাঝে কোনো পার্থক্য নেই। কোনো নারীকে শুধু নারী হয়ে জন্মানোর কারণে পুরুষের তুলনায় হীন ও নীচ মনে করা সম্পূর্ণ অজ্ঞতা ছাড়া আর কিছুই নয়। ইসলামের দৃষ্টিতে নারীরাও মহান আল্লাহর সম্মানিত সৃষ্টি।
মর্যাদায় নারী
ইসলামের দৃষ্টিতে ঈমান-আমল ও ইবাদতে নারী-পুরুষের মর্যাদাগত কোনো পার্থক্য নেই। পার্থক্য আছে বলে মনে করাও অজ্ঞতা। ইসলাম সুস্পষ্ট ভাষায় ঘোষণা করেছে যে, মর্যাদা-লাঞ্ছনা এবং মহত্ত্ব-নীচতার মাপকাঠি হচ্ছে- তাকওয়া তথা পরহেজগারী এবং নৈতিক চরিত্র। তাকওয়া ও চরিত্রের মাপকাঠীতে যে যতটা খাঁটি প্রমাণিত হবে আল্লাহর কাছে সে ততটাই সম্মান ও মর্যাদার অধিকারী হবে। আল্লাহ তাআলা বলেন-
১. مَنۡ عَمِلَ صَٰلِحا مِّن ذَكَرٍ أَوۡ أُنثَىٰ وَهُوَ مُؤۡمِن فَلَنُحۡيِيَنَّهُۥ حَيَوٰةٗ طَيِّبَة وَلَنَجۡزِيَنَّهُمۡ أَجۡرَهُم بِأَحۡسَنِ مَا كَانُواْ يَعۡمَلُونَ
যে সৎকর্ম সম্পাদন করে এবং সে ঈমানদার পুরুষ হোক কিংবা নারী হোক; আমি তাকে পবিত্র জীবন দান করব এবং প্রতিদানে তাদেরকে তাদের উত্তম কাজের কারণে প্রাপ্য পুরষ্কার দেব; যা তারা করত। (সুরা নাহল : আয়াত ৯৭)
২. فَاسْتَجَابَ لَهُمْ رَبُّهُمْ أَنِّي لاَ أُضِيعُ عَمَلَ عَامِلٍ مِّنكُم مِّن ذَكَرٍ أَوْ أُنثَى بَعْضُكُم مِّن بَعْضٍ
এরপর তাদের পালনকর্তা তাদের দোয়া (এই বলে) কবুল করে নিলেন যে, আমি তোমাদের কোনো পরিশ্রমকারীর পরিশ্রমই বিনষ্ট করি না, তা সে পুরুষ হোক কিংবা নারী। তোমরা পরস্পর এক। (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ১৯৫)
সামাজিক কাজে নারী
কর্ম তৎপরতা ও উত্থান-পতনের সব ক্ষেত্রেই নারী-পুরুষ সব সময় একে অপরকে সহযোগিতাকারী। আল্লাহ তাআলা এক্ষেত্রেও উভয়কে সম মর্যাদা দান করেছেন। নারী-পুরুষের পারস্পরিক মিলে জীবনের কঠিন কাজগুলো সহজ হয়ে যায়। উভয়ের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টায় সভ্যতা ও তামাদ্দুনের ক্রমবিকাশ ঘটে। আল্লাহ বলেন-
وَالْمُؤْمِنُونَ وَالْمُؤْمِنَاتُ بَعْضُهُمْ أَوْلِيَاء بَعْضٍ يَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنكَرِ وَيُقِيمُونَ الصَّلاَةَ وَيُؤْتُونَ الزَّكَاةَ وَيُطِيعُونَ اللّهَ وَرَسُولَهُ أُوْلَـئِكَ سَيَرْحَمُهُمُ اللّهُ إِنَّ اللّهَ عَزِيزٌ حَكِيمٌ
আর ঈমানদার পুরুষ ও ঈমানদার নারী একে অপরের সহায়ক। তারা ভালো কথার শিক্ষা দেয় এবং মন্দ (কথা ও কাজ) থেকে বিরত রাখে। নামাজ প্রতিষ্ঠা করে, জাকাত দেয় এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের নির্দেশ অনুযায়ী জীবন যাপন করে। এদেরই উপর আল্লাহ তাআলা দয়া করবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ পরাক্রমশীল, সুকৌশলী। (সুরা তাওবাহ : আয়াত ৭১)
দোষারোপ থেকে নারীর মুক্তি
দাম্পত্য জীবনে নারীকে কোনোভাবেই অকল্যাণকর মনে করার সুযোগ নেই। আবার সন্তান জন্ম দেওয়ার ক্ষেত্রে নারীকে দোষারোপ করারও কোনো সুযোগ নেই। বরং সন্তান জন্মদান ও কল্যান-অকল্যান সম্পর্কে আল্লাহর নির্দেশনা এমন-
لِلَّهِ مُلْكُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ يَخْلُقُ مَا يَشَاء يَهَبُ لِمَنْ يَشَاء إِنَاثًا وَيَهَبُ لِمَن يَشَاء الذُّكُورَ - أَوْ يُزَوِّجُهُمْ ذُكْرَانًا وَإِنَاثًا وَيَجْعَلُ مَن يَشَاء عَقِيمًا إِنَّهُ عَلِيمٌ قَدِيرٌ
নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলের রাজত্ব আল্লাহ তাআলার জন্য। তিনি যা ইচ্ছা সৃষ্টি করেন, যাকে ইচ্ছা কন্যা-সন্তান এবং যাকে ইচ্ছা পুত্র সন্তান দান করেন। অথবা তাদেরকে দান করেন পুত্র ও কন্যা উভয়ই এবং যাকে ইচ্ছা বন্ধ্যা করে দেন। নিশ্চয়ই তিনি সর্বজ্ঞ, ক্ষমতাশীল। (সুরা শুরা : আয়াত ৪৯-৫০)
হজরত ওমর রাদিয়াল্লাহ আনহু বর্ণনা করেছেন, নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের যুগে আমরা আমাদের স্ত্রীদের সঙ্গে কথা বলতে এবং প্রাণ খুলে মেলামেশা করতেও ভয় পেতাম; এই ভেবে যে- আমাদের সম্পর্কে কোনো আয়াত যেন নাজিল না হয়। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ইন্তিকালের পর আমরা প্রাণ খুলে তাদের (স্ত্রীদের) সঙ্গে মিশতে শুরু করলাম।(বুখারি)
নারীর প্রতি জুলুমরোধে পুরস্কারের ঘোষণা
অন্ধকার যুগে নারীর বেঁচে থাকার অধিকার পর্যন্ত ছিল না। ইসলামের ঘোষণা এলো এভাবে- না তারাও জীবিত থাকবে এবং যে ব্যক্তিই তার অধিকারে হস্তক্ষেপ করবে; মহান আল্লাহর কাছে তাকে জবাবদিহি করতে হবে। আল্লাহ তাআলা বলেন-
وَإِذَا الْمَوْؤُودَةُ سُئِلَتْ - بِأَيِّ ذَنبٍ قُتِلَتْ খন জীবন্ত কবর দেওয়া কন্যাকে জিজ্ঞাসা করা হবে- কি অপরাধে তাকে হত্য করা হল সুরা তাকভির : আয়াত ৮-৯)
নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মেয়ে সন্তানদের হত্যা প্রতিরোধে বিশেষ ঘোষণা দেন এভাবে-
১. হজরত আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তির মেয়ে সন্তান আছে, আর যে তাকে জীবন্ত কবর দেয়নি কিংবা তার সঙ্গে লাঞ্ছনাকর আচরণ করেনি এবং পুত্র সন্তানকে তার উপর অগ্রাধিকার দেয়নি; আল্লাহ তাআলা তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন।(আবু দাউদ)
২. রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি তিনটি কন্যা সন্তান লালন-পালন করেছে, তাদেরকে উত্তম আচরণ শিখিয়েছে, বিয়ে দিয়েছে এবং তাদের সঙ্গে সদয় আচরণ করেছে; সে জান্নাত লাভ করবে। (আবু দাউদ)
নারীর প্রতি আচরণ
নারীর প্রতি কোমল ও সদয় ব্যবহারের নির্দেশ এসেছে কোরআনে। আল্লাহ তাআলা দুনিয়ার পুরুষদেরকে দাম্পত্য জীবন পরিচালনায় এভাবে উপদেশ দিয়েছেন-
নারীদের সঙ্গে সদ্ভাবে জীবন-যাপন কর। (সুরা নিসা : আয়াত ১৯)
নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্ত্রীদের কাঁচের সঙ্গে তুলনা করতেন। তাদের প্রতি সদয় হওয়ার তাগিদ দিতেন এভাবে-
কাঁচগুলোকে (স্ত্রীদেরকে) একটু দেখে শুনে যত্নের সঙ্গে নিয়ে যাও। (মুসলিম)
আধুনিকতার নামে নারীর প্রতিবন্ধকতা
আধুনিক সমাজ ব্যবস্থায় নারীকে অগ্রসর করে নেওয়া, স্বাধীনতা দেওয়া এবং নারীর ক্ষমতায়নের নামে বরং নারীকে পিছিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আধুনিক সমাজ ব্যবস্থায় নারীরা অনেক সুবিধা থেকে বঞ্চিত এবং বহু ক্ষেত্রে তারা নির্যাতিত। যেসব ক্ষেত্রে আধুনিক সমাজ ব্যবস্থা এখনো নারীর পাশে দাঁড়াতে পারেনি, তাহলো-
১. ঘরের বাইরে নারীর চলাফেরায় নিরাপত্তা।
২. পাচারের শিকার হওয়া থেকে নিরাপত্তা।
৩. জোরপূর্বক বেশ্যাবৃত্তিতে বাধ্য করা থেকে নিরাপত্তা।
৪. যৌন হয়রানির শিকার থেকে নিরাপত্তা।
৫. স্বামী, শ্বশুর, শাশুড়ি, দেবর ও ননদ কর্তৃক নববিবাহিতা, গর্ভবতী নারী কিংবা সাধারণ নারীকে নির্যাতন থেকে মুক্তির নিরাপত্তা।
৬. যৌতুকের বলি হয়ে মৃত্যুবরণ করাও রোধ হয়নি।
৭. স্বামী ও পিতার সম্পত্তির অধিকার থেকে এখনো বঞ্চিত নারীরা।
৮. অধিকাংশ নারীই পায় না মোহরানার অধিকার। এমনকি আধুনিক সমাজ মোহরানা ছাড়াই কিংবা প্রতীকী এক টাকা/সামান্য গিফট ইত্যাদি নজির গড়ে নারীকে অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতা হওয়া থেকে বঞ্চিত করছে।
৯. মেয়ে শিশুদের ঝুঁকিপূর্ণ গৃহপরিচারিকার কাজ থেকে নিরাপত্তা দিতে পারেনি আধুনিক সমাজ ব্যবস্থা। বরং অনেকক্ষেত্রে যারা আধুনিক সমাজ ব্যবস্থায় নারীর স্বাধীনতা ও ক্ষমতায়নে আওয়াজ তুলছে, তারাই এ মেয়ে শিশু শ্রমিক অপরাধের সঙ্গে জড়িত।
১০. আজও নারীদের শ্রমের সঠিক মূল্যয়ন করা হয় না।
১১. আধুনিক সভ্যতায় এ যুগে নারীর ক্ষমতায়ন ও স্বাধীনতার উচ্চ আওয়াজের এ সময়েও নারীদের পণ্য হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
১২. এমনকি ধর্মীয় অধিকার থেকেও বঞ্চিত করা হয় নারীকে।
১৩. অহরহ ঘটে চলেছে ইসলামের সবচেয়ে নিকৃষ্ট হালাল কাজ তালাকের অপব্যবহার।
নারীর অধিকার, নিরাপত্তা ও স্বাধীনতায় করণীয়
সুতরাং নারী এসব নির্যাতন রোধে ইসলাম দিয়েছে সঠিক ও সুন্দর দিকনির্দেশনা। ইসলাম নারীর শিক্ষা অর্জনের অধিকার, সম্পত্তির অধিকার, স্বাধীন চিন্তা ও মত প্রকাশের অধিকার ইত্যাদির নিশ্চয়তা বিধান করেছে। এমনকি ইসলামি শরিয়াতের সীমার মধ্যে থেকে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির ব্যাপারে পুরুষের মতো শ্রম-সাধনা করায় নারীর সমান অংশগ্রহণের অনুমতিও রয়েছে।
ইসলামে নারীরা তাদের মান মর্যাদা ও ইজ্জত-আব্রু হেফাজরে নিশ্চয়তাই পায় না বরং নির্যাতনের হাত থেকে বাঁচতে পায় সঠিক দিকনির্দেশনা। নিরাপত্তা, অধিকার ও স্বাধীনতায় কোরআনুল কারিমের নির্দেশনাগুলো এমন-
নারীর নিরাপত্তায় উপদেশ
নারীর সার্বিক নিরাপত্তার বিধান দিয়েছে ইসলাম। রাস্তায়, কর্মস্থলে ও যত্রতত্র নারীদের হয়রানি করা তো দূরের কথা বরং ইসলাম নারীদের সৌন্দর্যের প্রতি দৃষ্টি দিতেও কঠোর নির্দেশ দেয়। আল্লাহ বলেন-
قُل لِّلْمُؤْمِنِينَ يَغُضُّوا مِنْ أَبْصَارِهِمْ وَيَحْفَظُوا فُرُوجَهُمْ ذَلِكَ أَزْكَى لَهُمْ إِنَّ اللَّهَ خَبِيرٌ بِمَا يَصْنَعُونَ হে রাসুল! আপনি) মুমিনদেরকে বলুন তারা যেন তাদের দৃষ্টি নত রাখে এবং তাদের যৌনাঙ্গর হেফাজত করে। এতে তাদের জন্য খুব পবিত্রতা আছে। নিশ্চয়ই তারা যা করে আল্লাহ তা অবহিত আছেন। (সুরা নুর : আয়াত ৩০)
আর কেউ যেন নারীকে হয়রানি না করে সে জন্য নারীকে বোনের দৃষ্টিতে দেখার ঘোষণা দেন প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম। তিনি বলেছেন-
إِنَّمَا النِّسَاءُ شَقَائِقُ الرِّجَال
নারীরা পুরুষদের সহোদরা (বোন)।(আবু দাউদ)
ব্যভিচার-ধর্ষণ-অপবাদ প্রতিরোধ
ইসলাম ব্যভিচার, দেহব্যবসা, নগ্নতা, বেহায়াপনা, অশ্লীলতা ও দেহপ্রদর্শনীকে নিষিদ্ধ করেছে। শুধু তাই নয়, ইসলামে নারীকে ধর্ষণ করা কিংবা ধর্ষণের চেষ্টা করা এবং নারীকে মিথ্যা অপবাদ দেওয়ার অত্যন্ত ভয়াবহ শাস্তি ঘোষণা করেছে। যাতে খারাপ চিত্তের পুরুষগণ এসব অবাঞ্ছিত কাজ থেকে বিরত থাকে। একাধিক আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন-
২. وَلاَ تَقْرَبُواْ الْفَوَاحِشَ مَا ظَهَرَ مِنْهَا وَمَا بَطَنَ
আর তোমরা প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য অশ্লীলতার কাছাকাছি যেও না।। (সুরা আল-আনআম : আয়াত ১৫১)
৩. إِنَّ الَّذِينَ يُحِبُّونَ أَن تَشِيعَ الْفَاحِشَةُ فِي الَّذِينَ آمَنُوا لَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ فِي الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ وَاللَّهُ يَعْلَمُ وَأَنتُمْ لَا تَعْلَمُونَ
যারা পছন্দ করে যে, ঈমানদারদের মধ্যে ব্যভিচার প্রসার লাভ করুক, তাদের জন্যে ইহাকাল ও পরকালে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি রয়েছে। আল্লাহ জানেন, তোমরা জান না। (সুরা নুর : আয়াত ১৯)