Islamic News BD - The Lesson of Peace
প্রার্থনা কি, কেন ও কার কাছে?
বৃহস্পতিবার, ২৯ এপ্রিল ২০২১ ১৬:০৪ অপরাহ্ন
Islamic News BD - The Lesson of Peace

Islamic News BD - The Lesson of Peace

প্রার্থনা, এটি বাংলা ভাষার একটি সর্বজন সুপরিচিত শব্দ। শব্দটি বললে মনের অজান্তেই যেন এক ধর্মীয় অনুভূতি হৃদয়ের গভীরে শিহরিত হয়। শব্দটি যেন মহান স্র্রষ্টার সাথে সৃষ্টির এক নিবিড় সম্পর্ক স্থাপন করে। আরবি পরিভাষায় শব্দটির কাছাকাছি সমার্থক শব্দ হিসেবে দোয়া, মুনাজাত, ইস্তিগফার, সোয়াল, ইবতেহাল ইত্যাদি হতে পারে। সামাজিকভাবে এ শব্দগুলোর বিষয়বস্তু, উদ্দেশ্য লক্ষ্য কিংবা প্রায়োগিক ক্ষেত্র সম্পর্কে সমাজে কিছু ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি পরিলক্ষিত হয়। বেশির ভাগ মানুষের ধারণা, এসব বিষয়ে জানা, মানা ও প্রয়োগ করা সমাজের একটি নির্দিষ্ট শ্রেণী তথা শুধু হুজুর, আলেম কিংবা ইমাম-মুয়াজ্জিনদের জন্য প্রযোজ্য। তাদের মতে সর্বস্তরের মানুষের জন্য এগুলো শেখা বা ব্যবহার করার প্রয়োজন হয় না। জন্ম-মৃত্যু-বিয়ে কিংবা অন্য যেকোনো ধর্মীয় আয়োজনে সামান্য কিছু অর্থ ও খানাপিনার বিনিময়ে হুজুরদের মাধ্যমে এর চাহিদা পূরণ করলেই হয়ে যায়।কিন্তু আসলে কি তাই? ধর্মীয় দিক বিবেচনা করার আগে যদি আমরা শব্দটির প্রায়োগিক ক্ষেত্র ও গুরুত্ব মূল্যায়ন করি তবে হৃদয়ের গভীর থেকে এর ব্যাপক আবেদন ও প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হয়। ;প্রার্থনা শব্দের শাব্দিক অর্থ; চাওয়া, আবদার করা। বাংলা ভাষায় অনুরূপ আরো যে সব অর্থ বহন করে তা আমাদের সবার কাছেই স্পষ্ট। আর প্রয়োগিক দিক থেকে স্বাভাবিকভাবে এর মর্মার্থ হলো ছোট বা অধীনস্থ কেউ তার বড় কিংবা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে কোনো কিছুর আবদার করা, চাওয়া। আবদারকারীর পক্ষ থেকে কী আবদার করা হচ্ছে, কেমন জিনিসের অথবা কোনো মূল্যমানের জিনিসের জন্য আবদার করা হচ্ছে তার ওপর ভিত্তি করেই বোঝা যায় আবদারের ধরন। আবদারের বিষয় কিংবা আবদার স্থলের মান-মর্যাদা ও গুরুত্ব বিবেচনায় আবদার বা প্রার্থনার ধরন ও উপস্থাপন ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। যেমন একই ব্যক্তির কাছে পরিবারভুক্ত কারো আবদার আর সাহায্যপ্রার্থী অসহায়ের আবদারের উপস্থাপন কখনোই এক হয় না।


আর আবদারকারী যদি অপরাধী হয় এবং অপরাধ মার্জনার জন্য আবদার বা প্রার্থনা করে তবে সেটির উপস্থাপন হয় সম্পূর্ণ ভিন্ন। অপরাধী নিজেই অপরাধের মাত্রা বুঝে অনুভব করতে পারে তার আবদার বা ক্ষমা প্রার্থনায় কোনো কৌশলটি অবলম্বন করতে হবে। কাজেই অপরাধের মাত্রানুযায়ী সে তার যত কৌশল আছে তা প্রয়োগ করে কৃত অপরাধের ক্ষমা পাওয়ার চেষ্টা করে। অনুনয়-বিনয় করে, ভুল স্বীকার করে, হাত-পা জড়িয়ে ধরে, পায়ের ওপর মাথা ঠুকিয়ে ইত্যাদি। পার্থিব জগতের কোনো অভাব পূরণের জন্য কিংবা ভুলের মার্জনার জন্য নির্দ্বিধায় আমরা এ কাজগুলো করতে কোনো আপত্তি করি না। কিন্তু যার করুণায় আমাদের জীবন, যার অসীম রহমতে আমরা বেঁচে আছি, যিনি আমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন, প্রতি মূহূর্তে যার দেয়া রুজিতে আমরা চলার শক্তি পাচ্ছি তাঁর কাছে নিজেকে সপে দেয়ার ন্যূনতম গুরুত্ব উপলব্ধি করি না।এর কারণ, হয় আমরা তাঁর মুখাপেক্ষী নই অথবা তাঁর করুণা আমাদের প্রয়োজন নেই। কিংবা তাঁর সাথে আমার কোনো সম্পর্কই নেই। এ জন্যই আমি তাঁর কাছে নিজেকে ছোট করছি না। তাঁর কাছে কোনো কিছু চাওয়ার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছি না। আমার বুঝটা যদি এ পর্যায়ের হয় তবে পৃথিবীর কোনো হিতোপদেশকারী আমাকে বুঝানোর ক্ষমতা রাখে না। তবে এ ক্ষেত্রেও আমার জীবনানুভূতিই পারে আমাকে সঠিক পথের দিশা দিতে। কারণ আমার গর্ব ও অহঙ্কারের প্রধান উপাত্ত হলো আমার জীবন। জীবন ও জীবনের উপভোগ্য বিষয়ের প্রতি আমি মাত্রাতিরিক্ত আকৃষ্ট হয়েছি বলেই আমি আমার মূল সত্ত্বাকে ভুলতে বসেছি। জীবনের স্র্রষ্টাকে অস্বীকার করার ধৃষ্টতা দেখাতে পারছি। আমার জীবন বাঁচানোর সব উপকরণ ও সামগ্রীকে স্র্রষ্টাহীন প্রকৃতির দান বলে উড়িয়ে দিচ্ছি।

কাজেই আমার এ জীবনানুভূতিই আমাকে বিভ্রান্ত করছে। আমাকে বিপথে পরিচালনা করছে।আমি যদি চিন্তা করি, যে জীবনকে নিয়ে আমার এত দাম্ভিকতা, আমার এত গর্ব, আমার এত অহঙ্কার, সেই জীবন আমার নিয়ন্ত্রণাধীন কি না? এ জীবনের ওপর আদৌ আমার কোনো নিয়ন্ত্রণ আছে কি না? জীবন কি সত্যিই আমার কথায় চলে? এর উত্তরে আমার মন যদি বলে হ্যাঁ, এই তো তুমি চলছ, ফিরছ, খাচ্ছ। মনের ইচ্ছামতো স্বাধীনভাবে উপভোগ করছ, কেউ তো তোমাকে কোনো বাধা দিচ্ছে না। আমিও হয়তো মনের আহ্বানে সায় দিয়ে বললাম; তাই তো। আমিই তো আমার জীবনের সর্বেসর্বা। কিন্তু আমি যখন আমার জীবনের নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা পরীক্ষা করার জন্য আমার নিঃশ্বাস বা দম বন্ধ করে এক ঘণ্টা, আধা ঘণ্টা কিংবা ১০ মিনিট অথবা ৫ মিনিট রাখার চেষ্টা করি তখনই আমার সব দম্ভ-অহঙ্কার ধুলোয় মিশে যেতে বাধ্য। এক মিনিট কিংবা তার কম সময় অতিবাহিত হতেই আমি বুঝতে পারি এটি নিয়ন্ত্রণ করতে আমি অপারগ। নিঃশ্বাস বন্ধ করে রাখার ক্ষমতা আমার নেই। যে শ্বাস-প্রশ্বাসের বদৌলতে আমার এ শখের জীবন সচল, সে শ্বাস-প্রশ্বাস আমার কথায় চলে না। আমার কথা শোনে না। তখন আমার গোমরাহির সব ঘোর কেটে যেতে বাধ্য।